সংসদের বিরোধীদল হলেও জাতীয় পার্টি ক্ষমতার অংশীদর। আগামীতে ফের তারা যেকোনোভাবে ক্ষমতার অংশীদার হতে নতুন ছক কষছে জাতীয় পার্টি (জাপা)।
কিন্তু তেমন জনসমর্থন না থাকায় এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার মতো সাহস না করে সুবিধাজনক অবস্থান তৈরিতে ছক কষতে শুরু করেছে দলটি। এ ক্ষেত্রে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছে তারা।
বিএনপি যদি কোনো কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে তাহলে সরকারের সাথে সমঝোতা করে এখনকার মতোই প্রধান বিরোধী দল হওয়ার সুযোগ নিতে চায় তারা। সে ক্ষেত্রে সরকারের মন্ত্রিসভায় ও বিরোধী দলে থাকা সহজ হবে দলটির।
আর যদি বিএনপি নির্বাচনে আসে তাহলে সরাসরি আওয়ামী লীগের সাথে জোট করে নির্বাচন করার আশা তাদের। তবে যদি কোনো ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হয় সে জন্য বিএনপির সাথেও যোগাযোগ রাখছে জাপার নেতারা।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। নানা মহলের চাপ সত্ত্বেও তিনি নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন। সে সময় নির্বাচন নিয়ে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণাও দেন এরশাদ। আর এ পরিস্থিতিতেই এরশাদের সাথে বৈঠক করেন সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং। এরপরই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন অসুস্থ এরশাদ।
তখন সিএমএইচে ভর্তি এরশাদের পরিবর্তে নির্বাচনে মূল ভুমিকা পালন করেন তার স্ত্রী রওশন এরশাদ। যে কারণে পরে তিনিই হন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা। আর এরশাদ হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। এ ছাড়া সরকারে জাপার তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীও রয়েছেন। বর্তমান সরকার প্রায় চার বছর মেয়াদ পার করেছে।
আগামী এক বছর পর জাতীয় নির্বাচন হওয়ার আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকারের নেতা-মন্ত্রী এবং কয়েক দফায় সরকার পরিচালনা করা দেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপির নেতাদের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বাহাসও চলছে। সভা-সমাবেশ করে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন তারা। তবে বসে নেই জাতীয় পার্টিও।
গত জুলাই মাসে ভারত সফর করে আসার পরই এরশাদ ৩০০ আসনে এককভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। ৩০০ আসনে নিজ দলের প্রার্থী তালিকাও প্রস্তুত করেছে দলটি। ইতোমধ্যে প্রায় এক ডজন নেতাকে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে তারা। এ ব্যাপারে প্রার্থীদের দেয়া চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাদের এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান জানান, ৩০০ আসনে প্রায় ১২০০ প্রার্থীর তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে পার্টির চেয়ারম্যান পর্যায়ক্রমে চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করছেন। এ ছাড়া আগামী ডিসেম্বরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করার প্রস্তুতিও নিচ্ছে জাতীয় পার্টি।
জাপার নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনে আবারো যেকোনভাবে ক্ষমতায় যাওয়াই জাতীয় পার্টির লক্ষ্য। কিন্তু তাদের এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার মতো জনসমর্থন নেই। এ জন্য জোট করা ছাড়া বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোনো শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারায় আবারো তারা আওয়ামী লীগের সাথেই জোট করে নির্বাচন করতে আগ্রহী। এ জন্য জাতীয় পার্টি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
যদিও জাপার তৃণমূলে সরকারের সাথে জোট করার ব্যাপারে ভিন্নমত রয়েছে। জাপার কিছু নেতা মন্ত্রী ক্ষমতায় থেকে লাভবান হলেও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছু না পাওয়ার ক্ষোভ-হতাশা রয়েছে। এ দিকে জাপা নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগেরও এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার অবস্থা নেই। ক্ষমতা ধরে রাখতে তাদেরও প্রয়োজন জাতীয় পার্টিকে। কারণ রংপুরসহ কয়েকটি স্থানে জাপার ভোট ব্যাংক রয়েছে।
এ জন্য আওয়ামী লীগকে চাপে রাখতে তারা এককভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দিচ্ছেন। তবে তিনবার ক্ষমতায় থাকা বিএনপির নির্বাচনে থাকা না থাকা নিয়ে তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে। বিএনপি যদি শেষ মুহূর্তে ভিন্ন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে তাহলে জাপার চিন্তাভাবনায়ও পরিবর্তন আসতে পারে। এ জন্য তলে তলে বিএনপির সাথেও জাপা নেতারা যোগাযোগ রাখছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন