২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির লাগাতার ৯২ দিনের আন্দোলনে পেট্রোল বোমায় আহত-নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠিত করতে চায় আওয়ামী লীগ। দলটির বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মাঠের কর্মসূচিকে রাজনৈতিকেভাবে মোকাবিলার উদ্দেশ্যে এই পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। এই লক্ষ্যে পেট্রোল বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগও করা হচ্ছে। তবে কর্মসূচির দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর ছয় জন নেতার সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দলীয় ফোরামের কয়েকটি সভায় এ ধরনের একটি পরিকল্পনার কথা আলোচনা করা হয়েছে। সর্বশেষ গত বুধবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর একটি সভায় এ ধরনের একটি কর্মসূচি হাতে নেওয়ার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব করেন সম্পাদকমণ্ডলীর নেতারা। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে জমায়েত করে কিছু সাহায্য-সহযোগিতা দেওয়া যায় কিনা, তা নিয়েও ভাবছে আওয়ামী লীগ।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ চায়, বিএনপির আন্দোলনে সারাদেশে পেট্রোল বোমায় যারা আহত-নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের কাছে জবাবদিহিতার আওতায় আসুক দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কাছে ক্ষমা চেয়ে খালেদা জিয়ার নতুন কর্মসূচিতে নামা উচিত বলে মনে করে ক্ষমতাসীনরা। না হলে বিএনপি নেত্রীর রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা উচিত নয়।
আগামী নির্বাচনের আগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের উজ্জীবিত করতে চায় আওয়ামী লীগ। দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর তিন সদস্য বাংলা ট্রবিউনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ধারণা, ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে দিয়ে বিএনপির অপরাজনীতির প্রচার করা হলে সুফল আওয়ামী লীগের ঘরে আসবে। বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচির জবাবে সরাসরি আওয়ামী লীগ পাল্টা কোনও কর্মসূচি না দিয়ে আগুনে পোড়া মানুষ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সংঘবদ্ধ করে খালেদাকে বাধার মুখে ফেলতে চায়। বাধার মুখে ফেলার অংশ হিসেবে পেট্রাল বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো নিয়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় ক্ষমতাসীনরা।’
তবে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়া ৯২ দিন জ্বালাও-পোড়াও করে, সাধারণ মানুষকে পেট্রোল বোমা দিয়ে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা করেছে, সেই খালেদা জিয়া সেসব সাধারণ মানুষের কাছে আবার যাওয়ার নৈতিক অধিকার রাখেন না। নিশ্চয়ই খালেদা জিয়াকে জবাবদিহিতার আওতায় আসতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তরা যদি রাজপথে দাঁড়ান, আওয়ামী লীগ তাদের সহায়তা দেবে। দলটির একাধিক নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণমানুষের কল্যাণে কাজ করে। তাই নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়াবে। এটাই এই সংগঠনের রাজনীতি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের দুই জন নীতি-নির্ধারণীপর্যায়ের নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকার পতনের ডাক দিয়ে ২০১৫ সালে সারাদেশে আন্দোলনের নামে খালেদা জিয়া তথা বিএনপির সারাদেশে যে নৈরাজ্য চালিয়েছে টানা ৯২ দিন এবং সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি সাধন করেছে, সংক্ষুব্ধ সেসব মানুষ খালেদা জিয়ার জবাব চাওয়ার নৈতিক অধিকার রাখে। আর এজন্য কোনও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার খালেদা জিয়ার কাছে জবাবদিহিতা চাওয়ার অধিকার রাখে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন