ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সফররত চীনা প্রতিনিধি দল সৌজন্য সাক্ষাত করেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ের সুরমা হলে এ বৈঠক হয়। এতে সরকারি সংবাদ মাধ্যম- বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের বাইরে কোনো সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আকতার পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘এটা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ছিল। আমাদের উন্নয়ন অংশীদার তারা। উন্নয়নের নানা বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।’
নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা শুধুমাত্র সৌজন্য সাক্ষাত। আমরা চীনে গিয়েছিলাম। সেখানে তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা এসেছেন। এটা পার্টি টু পার্টি বৈঠক। তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না, তাই মিডিয়াকে সেভাবে জানানো হয়নি। প্রেস রিলিজ দিয়ে দেয়া হবে।’
আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া পরিবর্তনকে বলেন, ‘এতে বাসস আর বিটিভি ছাড়া কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।’
আওয়ামী লীগের আমন্ত্রণে চীনের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে তিন দিনের সরকারি সফরে এসেছেন। চীনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী মন্ত্রী ওয়াং ইয়াজুনের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন, চীনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মহাপরিচালক জাং সুয়ে, পরিচালক হু জিয়াওদং, তান উই ও মি এবং ফু উইরাং।
তারা দুপুরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে দলটির সাধারণ সম্পাদকের ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাম্বেসেডর মোহাম্মদ জমির, প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যরিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য এডভোকেট রিয়াজুল কবির কাওছার উপস্থিত ছিলেন।
এতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ, চীন, ভারত, মিয়ানমার ইকোনমিক করিডোর নির্মাণের জন্য মিয়ানমারকে সহযোগিতা করতে রাজী করানোর জন্য চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ, চীন, ভারত, মিয়ানমার (বিসিআইএম) ইকোনমিক করিডোর বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের দু’কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করতে হবে। এ রাস্তা নির্মানের জন্য বাংলাদেশ সরকার আগ্রহী। কিন্তু এ রাস্তা নির্মানের জন্য মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কিছু সহযোগিতা দরকার। মিয়ানমার সরকার এ সহযোগিতা করছে না। বাংলাদেশ এ বিষয়ে চীনের সহযোগিতা চায়।
কাদের বলেন, আমরা নিশ্চিত করছি যে, আমরা এক চীন নীতির সম্পূর্ণ পক্ষে। তিব্বত ও তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।
বৈঠকে দেশের যোগাযোগ ক্ষেত্রে চীনের সহযোগিতার ব্যাপক প্রশংসা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশের দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে চীন সবচেয়ে বড় অংশীদার। এর মধ্যে পদ্মা সেতু দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প। নিজস্ব অর্থায়নে ত্রিশ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ সেতু নির্মাণ করার প্রকল্প চলমান। চীনের চায়না মেজর ব্রীজ এবং চায়না সিনো হাইড্রো কোম্পানী এ সেতু নির্মাণ করছে। আমরা অত্যন্ত খুশি যে স্পেয়ারের ওপর স্প্যান স্থাপন করেছি। স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তবতা।’
তিনি বলেন, ‘৮ম চায়না ব্রিজ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ৯ম চায়না ব্রিজ নির্মাণে চীনের সহযোগিতা পেতে যাচ্ছি। এ ব্রিজ দেশের উন্নয়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে অনেক দেশের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে চীনের মতো আর কোনো দেশ এগিয়ে আসে নি।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের কর্ণফূলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের জন্য চায়নিজ এক্সিম ব্যাংক অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণে ইতোমধ্যে চীনের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক যেভাবে দৃঢ় হচ্ছে তাতে অচীরেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পার্টি টু পার্টি সম্পর্ক আরো সম্প্রসারিত হয়ে বাংলীদেশি জনগনের সঙ্গে চীনা জনগণের সম্পর্ক গড়ে উঠবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন