নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, তাকে বহনকারী সরকারি জিপের একটি চাকার ছয়টি নাট খুলে যাওয়ার ঘটনাটি ‘শঙ্কা’র। বিষয়টি অস্বাভাবিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’ এদিকে নাট খুলে যাওয়ার এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও পুলিশের কর্মকর্তাসহ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। কেউ ‘নাশকতার’ উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা তা দ্রুত জানার দাবি জানিয়েছেন তাদের অনেকেই।
গত ২ ডিসেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের জানাজায় অংশ নিতে সরকারি জিপে করে নারায়ণগঞ্জ থেকে মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বনানী যাচ্ছিলেন। পথে বনানী সিগন্যাল এলাকায় শব্দ শুনতে পেয়ে চালক গাড়ি থামিয়ে দেন। তিনি দেখতে পান গাড়ির পেছন দিকে বাম পাশে একটি চাকার ছয়টি নাটের মধ্যে তিনটি নেই। বাকি তিনটি নাটও খুলে গিয়েছিল। পরে অন্য একটি গাড়িতে করে বনানী যান মেয়র আইভী।
এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে মেয়র আইভী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একসঙ্গে একটি চাকার ছয়টি নাট খুলে যাওয়া অস্বাভাবিক। এটি শঙ্কার। তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে বিশেষ কিছুই ভাবছি না। সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। আমার ভাবনা মানুষকে উন্নত সেবা দেওয়া নিয়ে। কিভাবে মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করা যায়, রাস্তাঘাট, ড্রেন-কালভার্ট, নির্মাণ এবং ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খেলার মাঠ ও সবুজ নগরী গড়ে তোলা যায়, সেটিই আমার কাছে সবচেয়ে বড় ভাবনার বিষয়।’
এদিকে মেয়রকে বহনকারী জিপের চাকার ছয়টি নাট খুলে যাওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সিটি করপোরেশন। বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) বিকালে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন নাসিকের প্রধান নির্বাহী এহতেশামুল হক। তিনি বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, ‘চাকার নাট নিজে নিজে খুলেছে, নাকি কেউ ইচ্ছে করে নাশকতার উদ্দেশ্যে খুলে রেখেছিল- এই দু’টি বিষয় মাথায় রেখে অনুসন্ধান চলছে। তদন্ত একটি পর্যায়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত সঠিকভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
চাকার নাট খুলে যাওয়ার বিষয়টি তদন্ত করছেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরফুদ্দিন, সদর মডেল থানার ওসি মীর শাহীন পারভেজ ও তিনি নিজে মেয়র আইভীর সঙ্গে কথা বলেছেন। গ্যারেজের লোকজন, গাড়ির ড্রাইভার, মেয়রের বডিগার্ডসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘তদন্ত চলছে। তদন্তের পরই বলা যাবে আসলে কী ঘটেছিল।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, ‘বিষয়টি উদ্বেগের, এর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। গাড়ি ও গ্যারেজ সিটি করপোরেশনের। তাই সিটি করপোরেশনের উচিত তদন্ত করে দেখা- এটি নিছক দুর্ঘটনা না অন্যকিছু। শুনেছি পুলিশও তদন্ত করছে। আশা করি, তদন্তে সবকিছু বের হয়ে আসবে।’
গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন জানান, মেয়রকে বহনকারী সরকারি জিপটি সিটি করপোরেশনের নিজস্ব গ্যারেজে মেরামত করা হচ্ছে। গত শনিবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বনানীতে কী ঘটেছে এবং পুলিশ আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি।
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ বি সিদ্দিক বলেন, ‘এটা গভীর ষড়যন্ত্র তাতে কোনও সন্দেহ নেই। নারায়ণগঞ্জ থেকে গাড়িটি বনানী পর্যন্ত গিয়েছে। যদি নারায়ণগঞ্জ থেকে গাড়ির নাট খোলা বা লুজ হয়ে থাকতো, তবে এত দূর যাওয়া সম্ভব নয়। রাস্তায় কিছু হয়েছে কিনা সেটা প্রশাসনের খুঁজে বের করা উচিত। গাড়ির ড্রাইভার, গ্যারেজের লোকজনসহ যারা গাড়ির সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের সম্পর্কে তদন্ত হওয়া জরুরি।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন