আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বহিষ্কৃত নেতাদের নিয়ে গোপন বৈঠকের পর নড়েচড়ে বসেছে বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার তড়িঘড়ি করে দলের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করা হয়। জেলা শহরের একটি আবাসিক হোটেলের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা।
.
বৈঠকে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা শফিকুর রহমান, মংঞো প্রু চৌধুরী, আবদুর রহিম চৌধুরী, হ্লাথোয়াই হ্লী, কাজল কান্তি দাশ, ক্যশাপ্রু মারমা, সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইসলাম বেবীসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ৭টি উপজেলা ইউনিয়ন পৌরসভা ও উপজেলা কমিটির নেতারাও এতে উপস্থিত ছিলেন। আবাসিক হোটেল হিলটনের সম্মেলন কক্ষে বেলা ১১টায় শুরু হওয়া এই সভা রাত পর্যন্ত চলে। বৈঠকে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দিতে গিয়ে দলের সাংগঠনিক দূরাবস্তার চিত্র তুলে ধরেন। এছাড়া দলের মধ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের কঠোরভাবে দমনের দাবিও তুলে ধরেন তৃণমূল নেতারা। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক কাজী মুজিবুর রহমান ও সাবেক সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গাকে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন নেতারা। সেই সাথে শনিবারের চকরিয়া ইনানীতে কাজী মুজিবুর রহমান ও প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যার গোপন বৈঠকে দলের যেসব নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি তুলেন বৈঠকে উপস্থিত নেতারা।
বৈঠক সম্পর্কে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ক্যশৈহ্লা জানান, বৈঠকটি জরুরি নয়, এটি পূর্বনির্ধারিত ছিল। তবে সাংগঠনিক অবস্থা চাঙ্গা করে দলকে গতিশীল করতেই সবার মতামত নেয়া হয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে ইউনিয়ন উপজেলা ও সাংগঠনিক থানাগুলোর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে। শনিবারের ইনানীতে অনুষ্ঠিত গোপন বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি জানান, ঐ বৈঠকে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিল না। ইতোমধ্যে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে এক নেতাকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। তবে ঐ বৈঠকে যারা ছিল তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলে ষড়যন্ত্রকারীদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান সভাপতি।
এদিকে, শনিবারের ইনানীতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশগ্রহণকারী আওয়ামী লীগের নেতা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব:) তারু মিয়া জানান, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে দলকে চাঙ্গা করতে নতুন নেতৃত্ব প্রয়োজন। এ কারণেই ইনানীতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন। দলের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক কাজী মুজিবুর রহমান জানান, ইনানীর বৈঠকটি গোপন বৈঠক ছিল না। বৈঠকে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ৬ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জেলা পর্যায় থেকে বহিষ্কারের সিন্ধান্ত পাঠানো হলেও কেন্দ্র থেকে এখনো তাকে বহিষ্কার করা হয়নি। সেই হিসেবে দলের সাধার সম্পাদকের দায়িত্ব তিনিই পালন করছেন বলে জানান এই নেতা।
উল্লেখ্য, আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত শনিবার কক্সবাজারের চকরিয়ার ইনানী রিসোর্টে দলের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক কাজী মুজিবুর রহমান ও সাবেক সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে দুই নেতাই আগামী সংসদ নির্বাচনে বান্দরবান আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে তারা জানান। বৈঠকটি নিয়ে বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। গোপন এই বৈঠকটির পর পরই দলে চাঙ্গাভাব আনতে মঙ্গলবার বান্দরবানে জরুরি সভা ডেকে নেতাদের নির্দেশনা দেয়া হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন