রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর হার জিতের প্রশ্নটি শাসকদলের জন্য প্রেস্টিজ ইসু্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনোভাবেই যেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মান ক্ষুণ্ন না হয় সেজন্য দলের নেতাকর্মীরা দিন রাত অক্লান্ত্ম পরিশ্রম করছেন। এজন্য ভোটারদের মন জয় করতে তাদের পক্ষ থেকে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে টিম ওয়ার্ক।
মহানগর শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্ত্মি মন্ডল যায়যায়দিনকে বলেন, এবার প্রথম দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ার কারণে বিষয়টি আওয়ামী লীগের প্রেস্টিজ ইসু্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে দলের কেউই বসে নেই। বিশেষ করে স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে ৩৩টি ওয়ার্ডের জন্য ১১টি মনিটরিং টিম। তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে সমন্বয়কারী ও সহকারী সমন্বয়কারী নিয়ে ১২ জন সদস্যকে নিয়ে একেকটি টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমগুলো প্রধান সমন্বয়কারী তিনি নিজেই। তিনি বলেন, এই টিমের কাজ হলো, ক্যাম্পগুলোতে নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা ঠিকমতো কাজ করছে কিনা, কোথায় কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে তা চিহ্নিত করে মেয়র প্রার্থীকে জানানো। পরে মেয়র প্রার্থী নিজেই এলাকায় গিয়ে তা সমাধান করা।
১৯, ২০ ও ২১ ওয়ার্ডের মনিটরিং টিমের সহকারী সমন্বয়কারী হাসান রফিকুল হক হারম্ননের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য এখন ভোটারদের মাঝে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে; যা আগে ছিল না। মনে হচ্ছে, জয় পরাজয়ের ব্যবধানটা অনেকাংশ কমে এসেছে। এতে করে ভোটের দিন জয়ের বিকল্প ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। তার মতো টিমের অনেকেই একই কথা বলছেন।
তুষার কান্ত্ম মন্ডল আরো জানান, পরিকল্পনার মধ্যে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান আহমেদের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি টিম মঙ্গলবার রংপুর এসেছেন। শিগগির আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, তথ্য গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে আরেকটি দল রংপুরের ৩৩টি ওয়ার্ডে গণসংযোগের কাজ করবেন। তারা নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত্ম থাকবেন।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, 'প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে নির্বাচন করছে না। তবে তিনি আশাবাদী ভোটাররা নৌকা প্রতীকে ভোট দেবেন।'
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ভোটের হিসাব পুরো উল্টো। ৩৩টি ওয়ার্ডে লাঙ্গল প্রতীকের প্রভাব সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বেশি। অনেক নিম্ন আয়ের ভোটার ব্যক্তিগত উদ্যোগে জাতীয় পার্টির মোস্ত্মাফিজার রহমান মোস্ত্মফার লাঙ্গল প্রতীকের প্রচার করছেন। সৃষ্টি হয়েছে তাদের মধ্যে মোস্ত্মফা ক্রেজ। ২০নং ওয়ার্ডের ওষুধ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, তারা মোস্ত্মফা ছাড়া কিছুই বোঝেন না। একই ওয়ার্ডের মুলাটোলে সাধারণ ভোটার আব্দুল আজিজ কোনো দলের সাথে সম্পৃক্ত নেই। তিনি বলেন, মোস্ত্মফার জোয়ার উঠেছে। ভোটটি মোস্ত্মফাকেই দেবেন। এমন অবস্থা সর্বস্ত্মরের মানুষের মধ্যে। তারা বলেন, সৎ যোগ্য ও জনকল্যাণকর প্রার্থী হলেন মোস্ত্মফা। অন্যদিকে, নৌকার প্রতীকের সরফুদ্দিন আমেদ ঝন্টু প্রথম রসিক নির্বাচনের বলেছিলেন, এবারই তার শেষ নির্বাচন। অথচ তিনি এবারও নির্বাচন করছেন। এটার তার জন্য কোনোভাবে উচিত হয়নি। তা ছাড়া তিনি সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, বিলুপ্ত পৌরসভার চেয়ারম্যান ও সর্বশেষ সিটি করপোরেশন মেয়রের সাধ পেয়েছেন। এরপর তার আর আশা থাকতে পারে না।
জাতীয় পার্টির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক এসএম ইয়াছির জানান, লাঙ্গলের জোয়ারে সব কিছুই ভেসে যাবে। কারণ অধিকাংশ সাধারণ মানুষ লাঙ্গলে পক্ষে। জয় তাদের নিশ্চিত।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্ত্মাফিজার রহমান মোস্ত্মফা জানান, 'সব শ্রেণি পেশার সাধারণ ভোটাররা আমার পক্ষে। জয় অনিবার্য।
এদিকে, বিএনপির কাওছার জামান বাবলা (ধানের শীষ), সিপিবি-বাসদের প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুস (মই), ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের এটিএম গোলাম মোস্ত্মফা (হাত পাখা), এনপিপির আব্দুস সাত্তার (আম) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এইচএম আসিফ শাহরিয়ার (হাতি) নির্বাচনী প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। তারাও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন