ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের কাকে প্রার্থী করা যায়, এ নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেষণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের ভেতর থেকে নাকি বাইরে থেকে প্রার্থী করা হবে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে নেতাদের মধ্যে।
২০১৫ সালের নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের সদস্য না হয়েও দলের সমর্থন পান আনিসুল হক। তিনি আওয়ামী লীগের কোনো পদে না থাকলেও তাকে আওয়ামী ঘরানার ব্যবসায়ী নেতা হিসেবেই ধরা হতো।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, এবারও তারা চমক দেয়ার চেষ্টা করছেন।
তবে ক্ষমতাসীন দলের সূত্রগুলো জানিয়েছে, এক বছর পর জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের জনপ্রিয়তা যাচাই ও প্রমাণের জন্য এবার শেষ পর্যন্ত দলের ভেতর থেকেও প্রার্থী দেয়া হবে পারে।
প্রাথমিকভাবে বেশ কয়েকজনের নাম বিবেচনায় আছে জানিয়েছে দলের শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পরেই এই সিদ্ধান্ত জানানো হবে। আর তার আগে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বৈঠক করতে হবে।
প্রাথমিক বিবেচনায় কারা আছেন, জানতে চাইলে ওই নেতা কারও নাম বলতে রাজি হননি। পরে একজনের কথা তিনি বলেন। তিনি হলেন আলাউদ্দিন নাছিম চৌধুরী।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আলাউদ্দিন নাছিম বিসিএস ক্যাডার হিসেবে প্রশাসনে কর্মরত ছিলেন। ওই সরকারের আমলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালে বিএনপি সরকারে আসার পর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলাউদ্দিন নাছিমকে সরকার নানভাবে হয়রানি করেছে বলে অভিযোগ আছে। ২০০৯ সালে উপসচিব হিসেবে পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করে অবসরে যান। বর্তমানে তিনি ব্যবসায় মনোনিবেশ করেছেন। পাশাপাশি পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় আছেন।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে নাছিমের। বিগত চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচন সমন্বয়ে কাজ করেছেন তিনি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যও ছিলেন নাছিম।
নাছিম তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৮৬ সালে তিনি বিসিএস পরীক্ষা দিয় প্রশাসনে যোগ দেন।
ঢাকা উত্তরে নাছিমকে বিবেচনায় রাখার কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় ওই নেতা আরেকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এই নির্বাচনী এলাকায় নোয়াখালী অঞ্চলের একটি ভোটব্যাংক রয়েছে। সদ্যপ্রয়াত মেয়র আনিসুল হকও ছিলেন নোয়াখালী অঞ্চলের। আলাউদ্দিন নাছিমও বৃহত্তর নোয়াখালীর থেকে (ফেনী) এসেছেন। একই অঞ্চলের হওয়ায় তিনি ভোট টানতে পারবেন।
২০১৫ সালের নির্বাচনে আনিসুল হকের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তাবিথ আউয়ালের গ্রামের বাড়িও নোয়াখালী অঞ্চলে। এবারও বিএনপি তাকে প্রার্থী করতে পারে বলে আলোচনা আছে। তাবিথ যেন নোয়াখালী অঞ্চলের ভোট এককভাবে টানতে না পারেন, সেই বিষয়ে সতর্ক আওয়ামী লীগ।
ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর এরই মধ্যে পদটি শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। সিটি করপোরেশনে ১৮টি নতুন ওয়ার্ড যুক্ত হওয়ায় নির্বাচন নিয়ে আইনি জটিলতার বিষয়ে আলোচনার মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা কোনো ধরনের জটিলতা দেখছেন না। দুই একদিনের মধ্যেই নির্বাচন বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
মেয়র আনিসুলের মৃত্যুর পর শুরুর দিকে আনিসুল হকের পরিবারের মধ্য থেকে কা্উকে নৌকার প্রার্থী করার বিষয়ে আলোচনা উঠেছিল। কিন্তু দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পরে এই গুঞ্জন নাচক করে বলেছেন, নির্বাচনে কোনো আবেগি প্রার্থী দেবেন না তারা। যিনি জিততে পারবেন, তাকেই প্রার্থী করা হবে।
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন