নির্বাচন নিয়ে নানা রকম শঙ্কা থাকলেও ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদের উপনির্বাচনের জন্য মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল সকালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে ফরম বিক্রি শুরু হয়। চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। গতকাল বিকাল পর্যন্ত উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন ব্যবসায়ী নেতা আতিকুল ইসলাম ও সাবেক সংসদ সদস্য ড. এইচ বি এম ইকবালসহ আটজন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদীও দলীয় মনোনয়ন কিনবেন বলে জানা গেছে। তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিমসহ আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী আলোচনায় ছিলেন। তারা এখনো মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। অন্যদিকে গতকাল রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের নির্বাহী কমিটির তরুণ নেতা তাবিথ আউয়ালকেই ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়। তবে মেয়র পদে আগ্রহী বিএনপির সহ-প্রকাশনা সম্পাদক শাকিল ওয়াহেদ নির্বাচন কমিশনে (ইসি) গিয়ে মনোয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারেননি।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের কাছ থেকে বিকালে ব্যবসায়ী নেতা আতিকুল ইসলামের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে তার প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলে ছিলেন তার নির্বাচনী সমন্বয়ক এ কে এম মিজানুর রহমান, সহকারী সমন্বয়ক ইমতিয়াজ মঈনুল ইসলাম। ডা. এইচ বি এম ইকবালের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন মোস্তফা তালুকদার। আর দিনের শুরুতেই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন রাসেল আশেকী ও আদম তমিজি হক। এ ছাড়া ফরহাদ হোসেনের পক্ষে মনোনয়ন ফরম তোলেন গাজী আলমগীর নামের এক ব্যক্তি। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন হেলাল, শাহ আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবায়ের আলম মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। গতকাল সকাল থেকে মনোনয়ন ফরম দেওয়া শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। ১৬ জানুয়ারি দলের মনোনয়ন বোর্ডে চূড়ান্ত হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল : বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশনে লড়ছেন তাবিথ আউয়াল। গতকাল রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তাবিথ আউয়ালকে দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জোটের শরিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে সেলিম উদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হলেও শেষ পর্যন্ত কয়েকটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদ দিয়ে দলটিকে শান্ত করে বিএনপি। এখন জোটের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকছেন তাবিথ আউয়াল। এরই মধ্যে তেজগাঁও লিঙ্ক রোডে তাবিথ আউয়ালের অফিস খোলা হয়। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপনির্বাচনে বিএনপির সহ-প্রকাশনা সম্পাদক শাকিল ওয়াহেদ নির্বাচন কমিশনে (ইসি) গিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারেননি। ব্যাংক বন্ধ থাকায় গতকাল দুপুরে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) ভবনে গিয়েও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারেননি তিনি। ইসি কর্মকর্তারা জানান, নিয়ম অনুযায়ী মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ভোটার তালিকার সিটি সংগ্রহ করতে হয়। যে কোনো তফসিলি ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে সেই রসিদ জমা দিতে হয়। পরে সাংবাদিকদের শাকিল বলেন, ‘ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারলাম না। রবিবার এসে নিয়ে যাব।’ তবে নির্বাচনকালীন ছুটির দিনেও ব্যাংক খোলা থাকার কথা। এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার মো. আবুল কাসেম জানান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর জন্য ৯ তারিখেই চিঠিতে স্বাক্ষর হয়েছে। এটা কমিউনিকেশন গ্যাপের কারণে হতে পারে।
আচরণবিধি তদারকিতে মাঠে নামছে ম্যাজিস্ট্রেট : ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি তদারক করতে আজ মাঠে নামছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচন ও দুই সিটির (উত্তর-দক্ষিণ) নতুন ৩৬ সাধারণ ওয়ার্ড এবং ১২ সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নির্বাচন হবে। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির আচরণবিধি প্রতিপালন মনিটরিংয়ে ১৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ অনুমোদন করেছে কমিশন। আজকের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটদের মাঠে নামার কথা রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণে সমপ্রসারিত ১৮ ওয়ার্ডের সাধারণ নির্বাচনে প্রতি তিন ওয়ার্ডের জন্য একজন করে ছয়জন, ঢাকা উত্তরের পুরনো ৩৬ ওয়ার্ডে প্রতি ছয় ওয়ার্ডের জন্য একজন এবং সমপ্রসারিত ১৮ ওয়ার্ডে প্রতি তিন ওয়ার্ডের জন্য একজন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে সম্ভাব্য সব প্রার্থীকে আগাম নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। এ ক্ষেত্রে মেয়র ও কাউন্সিলর পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দের আগে, অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারির আগে প্রচারণা চালালে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার। তাই প্রার্থীদের আচরণবিধি তদারকির জন্য আজ থেকে নির্বাচনী এলাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যুগ্ম-সচিব (চলতি দায়িত্ব) ও উত্তর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. আবুল কাসেম। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) ভবনে নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬-এর ধারা ৫-এ বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনো রাজনৈতিক দল, অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত যে কোনো ব্যক্তিকে অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করতে পারবেন। আর কোনো রাজনৈতিক দল বা সংস্থা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ১৮ জানুয়ারি। যাচাই-বাছাই ২১ ও ২২ জানুয়ারি, প্রত্যাহার ২৯ জানুয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ ৩০ জানুয়ারি এবং ভোট গ্রহণ করা হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ডিএনসিসিতে মেয়র পদে একজন, সাধারণ ওয়ার্ড সদস্যের জন্য ৬৭ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের জন্য ১৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন