ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ চার বছর পূর্ণ হওয়ার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘসময় এ সরকারের শাসনকাল অতিক্রম করছে। বিবিসি বাংলার ফোনইন অনুষ্ঠানে শ্রোতারা সরকারের পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের কাছে নত না হওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এ বিষয়টি সরকারের অন্যতম একটি কাজ। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বিরোধীদলের ওপর দমন পীড়নসহ বেশ কিছু কাজকে আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তারা। দুই মেয়াদে টানা ৯ বছরের শাসনকালকে জনগণ কী চোখে দেখছে এ নিয়ে ফোনইন অনুষ্ঠানটি পরিবেশন করা হয় শনিবার সন্ধ্যায় বিবিসি বাংলার প্রবাহ অনুষ্ঠানে।
শেরপুরের শ্রোতা ইঞ্জিনিয়ার মোকাদ্দেস বিল্লাহ বলেন, টানা নয় বছরের আওয়ামী লীগের শাসনে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই বিবেচনা করা যেতে পারে। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ধারাবাহিকতায় অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করেছে সরকার। পাশাপাশি টাকার মাধ্যমে নিয়োগ বন্ধ করা হয়েছে। তারা এমপিওভুক্তির মাধ্যমে কোয়ালিফাইড করে শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে। তারা অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেকগুলো ব্যাংক অনুমোদন দিয়েছে। এরফলে ব্যাংকগুলো নিয়ম নীতি না মেনে ঋণ দেওয়ায় ব্যাংক থেকে টাকা খোয়া যাচ্ছে। আমাদের দেশে পাঁচ বছর পর পর সাধারণ নির্বাচন হয়। নীতি বর্জিত কোন কাজ করলে ভোটার নির্বাচনের উপযুক্ত জবাব দিবে। কিন্তু দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দল এসে ভিন্ন একটা জিনিস তৈরি করে। কোন পরীক্ষক যদি দাবি করে তাদের পছন্দমতো গার্ড দিবে তার ওপর তারা পরীক্ষা দিবে। পরীক্ষা দিবে, খাতা কে দেখবে সেটা বিষয় না কিন্তু এটা হলো শিক্ষকের বিষয়। সেরকম গর্ভনমেন্টে যারা আসে তারাও নির্বাচনের সময় এমন করে। এটা হলো গতানুগতিক অনুশীলন কারণ তারা দুই টার্ম ধরে ক্ষমতায় আছে। অনেক উন্নয়ন করছে সরকার কিন্তু নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে এও আমরা আশা করি। আগের সরকারগুলো যা করছে তারাও তা করছে। ইতিবাচক অনেকগুলো কাজ করার পরেও নেগেটিভ অনেকগুলো কাজ ধরে রাখছে। যেমন ব্যাংক ঋণ খেলাপিদের কারো নাম প্রকাশ করেনি সরকার।
ফেনীর শ্রোতা মোহাম্মদ খুরশীদ আহম্মেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৯ বছরের শাসনামলে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। যেমন – শিক্ষা খাতে আমূল পরিবর্তন, প্রতিবছরের শুরুতে একদিনে ৪০ কোটি বই বিতরণ, ফ্লাইওভার, ওভারব্রিজ, পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে। দেশে এত প্রতিকূলতার পরেও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে সাহায্য করেছে।
খুলনার পল্লব কুমার ঘোষ বলেন, আওয়ামী লীগ যে ৯ বছর ক্ষমতায় আছে, তারা এ সময়ে অনেক যুগান্তকারি পদক্ষেপ ও উন্নয়নমূলক কাজ করেছে। যেমন, পদ্মা সেতু এবং রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বর্তমান সরকার ও আন্তর্জাতিক মহল যেভাবে হস্তক্ষেপ করেছে তা অত্যন্ত ভালো একটি দিক। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ আসলেই যুগান্তকারী কাজ করেছে।
তিনি বলেন, কিছু খারাপ দিকও রয়েছে, তার মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দ্রব্যমূল্যের দাম এতো বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য এখন চাল কিনে খাওয়াও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। মূল্য বৃদ্ধির কারণে চালের মূল ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, যারা দিন মজুর সে সকল মানুষের জন্য মূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারটি দুর্ভাগ্য। তার সাথে অন্যান্য যে সকল দ্রব্য আছে তারও মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষাঙ্গনে যে দুর্নীতি, প্রশ্ন ফাঁস এবং ছাত্রলীগ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার খুবই চিন্তার ভেতর আছে। ছাত্রলীগ একটি দুর্ভাগ্য। ছাত্রলীগ দুর্ভাগ্যজনকভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতিতে আসক্ত করছে। যারা সাধারণ ছাত্র আছেন তারাও এই দুর্নীতিতে যুক্ত হচ্ছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যারা রাজনীতিতে আসছেন তারা আসলেই দুর্নীতিবাজ হয়ে উঠছেন। মূল্য বৃদ্ধি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই দুটি জায়গায় আওয়ামী লীগ ব্যর্থ। তবে, পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগ সরকারের একটি যুগান্তকারী কাজ যার জন্য বর্তমান সরাকার ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। সকল সরকারেরই ভালো মন্দ দুটি দিক আছে তবে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্দ কাজের পাল্লাটাই বেশি।
ঠাকুরগাঁওয়ের মোঃ হাসান রায়হান বলেন, বর্তমান সকারের যে ৯ বছরের শাসনের আমল, তা খুব ভালোভাবেই তারা সম্পন্ন করেছেন। তবে কিছু কিছু জায়গায় ব্যর্থতা রয়েছে। আর সাফল্যের মধ্যে রয়েছে, জঙ্গি বিরোধী পদক্ষেপ, পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন সফলভাবেই হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে উন্নয়ন করেছে তা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। বর্তমান সরকারের সময়ে যেসব গুম ও খুন হচ্ছে তার জন্য তারা মুখ খুলছেন না। নারী নির্যাতনের বিষয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা জাতির জন্য কলঙ্ক। নিবন্ধিত শিক্ষক যারা রয়েছেন তাদের এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। রিজার্ভের যে চুরি তা আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার মধ্যেই পড়ে বলে তিনি মনে করেন। আগামীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে তাদের ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ঢাকার শ্রোতা মোহাম্মদ আলা উদ্দীন বলেন, গত ৯ বছরে আমি শুধু আওয়ামী লীগের ব্যর্থতাই দেখেছি। তারা ক্ষমতায় আসার পর বিরোধী দলের উপর হামলা, মামলা, খুন, ব্যাংক লুট এবং বিদেশে রিজার্ভ চুরি এগুলো আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা। তারা পদ্মা সেতু করছে যেটা দেশের জন্য অনেক ভালো কিন্তু শুধু পদ্মা সেতু দেখলে তো হবে না। পদ্মা সেতু হলেই তো সব রাস্তাঘাট ঠিক হয়ে যাবে না। ঢাকাতে এখনো এমন অনেক রাস্তা আছে যেখানে বৃষ্টিতে নৌকা চালানোর মতো অবস্থা হয়ে যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম অনেক বড় দুটি শহর। কিন্তু বৃষ্টির দিনগুলোতে আপনি দেখতে পাবেন নৌকা দিয়ে রাস্তায় চলাচল করে। এটাতো আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক বড় ব্যর্থতা।
লক্ষ্মীপুরের শ্রোতা ইয়াসিন আরাফাত বলেন, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের উপর নানা ধরনের অন্যায় অবিচার করছে। আইন বিভাগকে তারা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চাচ্ছে। আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল হওয়া সত্ত্বেও তারা বিরোধী দলের কোনো কথার গুরুত্ব দিচ্ছে না।
বিবিসি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন