নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় অস্ত্রধারী যে ব্যক্তির ছবি প্রকাশ পেয়েছে তার নাম নিয়াজুল হক। তিনি নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সমর্থক বলে নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
শামীম ওসমান নিজেও স্বীকার করেছেন নিয়াজুল তার পরিচিত। তিনি বিরাট মার্কেটের মালিক চানিয়ে হাতে পিস্তল দেখা যাওয়া কোনো অপরাধ কি না, সে প্রশ্নও তুলেছেন শামীম।
মঙ্গলবার বিকালে শহরে শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় বেশ কিছু গুলির শব্দ পাওয়া যায়।
গত ডিসেম্বরের শেষে সিটি করপোরেশনের ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু শামীম চান হকাররা আবার বসবে সেখানে। সোমবার তিনি মেয়রকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়ার পর থেকেই শুরু হয় উত্তেজনা।
আর মঙ্গলবার কয়েক হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে আইভী মিছিল করে শামীম ওসমান সমর্থক ও হকারদের অবস্থানস্থল চাষাঢ়ার দিকে যাওয়ার চেষ্টাকালে সায়াম প্লাজার সামনে তাদেরকে বাধা দেয় শামীম সমর্থকরা।
এ সময় এক ব্যক্তির পিস্তল হাতে ছবি ছড়িয়ে পড়ে অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যম। পরে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশ জানায়, এই পিস্তলধারী নিয়াজুল ইসলাম যুবলীগের রাজনীতিতে জড়িত। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিয়াজুল হাতে পিস্তল নিয়ে দৌঁড়ে যাওয়ার সময় প্রতিপক্ষের দিকে সেটি তাক করেন। আর এ সময়ই ছবি তোলা হয়।
নিয়াজুল গুলি করেছেন কি না, সেটি নিশ্চিত না করলেও একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ওই অস্ত্র বের করার পর আইভীর সমর্থকরা নিয়াজুলের কাছ থেকে সেটি কেড়ে নিয়ে তাকে মারধর করে। এখন অস্ত্রটি কোথায় আছে, সেটি কেউ নিশ্চিত করতে পারছেন না।
পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর নিয়াজুলেল বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের নানা অভিযোগ ছিল। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর তিনি গা ঢাকা দেন। এ সময় তার বিরদ্ধে সন্ত্রাসের একাধিক মামলা হয়। তবে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের পর নিয়াজুল আবার এলাকায় ফিরে আসেন।
জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্বে) আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা অস্ত্রধারীকে শনাক্ত বা ধরতে পারিনি।’
তার নাম নিয়াজুল ইসলাম জানিয়ে তার বিরুদ্ধে থাকায় কোনো অভিযোগ আছে কি না-জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘না, কোনো অভিযোগ আসেনি।’
একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে শামীম ওসমান বলেন, ‘নিয়াজুল আমার পরিচিত। তিনি বিশাল বড় মার্কেটের মালিক। সে সুইটের ভাই যাকে বিএনপির সময় ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছিল। এটা কি তার দোষ? তার হাতে পিস্তল দেখা গেলেও পরীক্ষা করা হোক এই পিস্তল থেকে গুলি করা হয়েছে কি না।’
এর আগে আইভী অভিযোগ করেছিলেন, নিয়াজুল শামীম ওসমানের লোক। শামীম ওসমানের নির্দেশেই তিনি হামলা হয়েছে।
সংঘর্ষের সময় গুলির ঘটনায় শামীম ওসমান সমর্থকদেরকে দায়ী করেছেন আইভী। তার অভিযোগ, সে সময় রাইফেলস ক্লাবে অবস্থান নেয়া শামীম ওসমান নিজেও গুলি করেছেন। তবে শামীম আবার পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন গুলি করেছে আইভী সমর্থকরাই।
শামীম ওসমান আবার গুলির ঘটনায় অভিযুক্ত করেছেন আইভী সমর্থকদেরকেই। তার দাবি, তার সমর্থকদের ওপর বিনা উস্কানিতে হামলা করেছেন মেয়র সমর্থকরা। আর পুলিশের আচরণ পক্ষপাতমূলক।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন