কুষ্টিয়ায় ফের মুখোমুখি আওয়ামী লীগ ও জাসদ। দুই পক্ষের উত্তেজনা সামাল দিতে কুমারখালীতে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। শনিবার একই স্থানে ছাত্রলীগ ও জাসদ পাল্টাপাল্টি সভা ডাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এমন পরিস্থিতি শুধু কুমারখালীতে নয়, বরং কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলায়। এর আগে কুষ্টিয়া জেলার ৬ উপজেলার মধ্যে খোকসা, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া সদর, ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলায়ও আওয়ামী লীগ-জাসদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশের ঘটনা ঘটেছে। শুধু সভা-সমাবেশই নয়, দুই পক্ষের সংঘর্ষ, পরস্পরের অফিস ও দোকানপাটে আগুন, বাড়িঘরে লুটপাটসহ সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ ও জাসদের দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে।
কুমারখালীতে আওয়ামী লীগ ও জাসদের মুখোমুখী পরিস্থিতিতে ফের জেলাব্যাপী প্রভাব পড়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে বিরাজ করছে উত্তেজনা ও ক্ষোভ।
এ ঘটনায় কুমারখালী উপজেলা জাসদের সভাপতি রুকুনুজ্জামান রুকন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, জাসদের সকল স্তরের নেতাকর্মীরা চায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এদেশের সরকার প্রধান হিসাবে থাকুক। তার এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক। কিন্তু তার দলের কিছু নেতাকর্মী তা চায় না। তারা চায় হাট দখল, বিল দখল, চরদখল, সাধারণ মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন করে নিজেদের আখের গোছানো। এসব কারণে তারা দলবাজি শুরু করে।
তাদের এসব অপকর্মের প্রতিবাদে কুমারখালী শহরে অবস্থিত গড়াই কমপ্লেক্সের অডিটোরিয়ামে সভা ডাকে উপজেলা জাসদ। এই সভার অনুষ্ঠানকে সফল করতে দুই দিন আগে থেকে জাসদের পক্ষে মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হয়।
প্রচারণার সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান খানসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীরা মাইক ভেঙে ফেলে। মাইকটি ভাঙা অবস্থায় থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে থানা থেকে ভাঙা মাইক ফেরত আনার জন্য ফোন করেছিল। আমরা মাইক নিতে যাইনি পরে থানা থেকে মাইকটি আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, শনিবার সকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীরা কুমাখালী উপজেলা প্রশাসনকে ভুল বুঝায়। শনিবার বেলা ১১টার দিকে কুমারখালী উপজেলা প্রশাসন মাইকিং করে শহরে সকল ধরনের সভা-সমাবেশ বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তাই সভা করিনি। রোববারও ১৪৪ ধারা জারি আছে। সমস্যা নেই আগের প্রতিবাদ সভা আমরা দুইদিন পরেই করবো- এমনটাই বলেন এই নেতা।
কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান খান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, রুকুনুজ্জামান রুকন সাহেবের বাড়ি যে কুমারখালীতে সেটা আমি জানতাম না। ২০ বছর ধরে রাজনীতি করছি। সাত মাস আগে তার চেহারা দেখেছি। জানতে পারলাম তার বাড়ি শৈলকুপা-খোকসা-কুমারখালীর সীমান্ত এলাকায়। সে ঢাকা শহরে মানুষ হয়েছে। আপনারা তো জানেন কুমারখালীতে কেউ হাট দখল, বিল দখল, চরদখল, সাধারণ মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন করে কি না। এমন ঘটনা কি আছে? এমন ঘটনা থাকলে সবার আগে সাংবাদিকরাই জানতে পারবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নয় বরং কুমারখালীতে উনারাই (জাসদ) এ অপকর্মের সাথে জড়িত। জাসদের পক্ষে মাইকিং করার সময় মারধর ও মাইক ভেঙে ফেলার বিষয়ে আব্দুল মান্নান খান বলেন, মাইকের দোকানে খোঁজ নেন কারা ওই মাইক ভেঙেছে। তাহলেই আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, ‘আমি যতদিন বেঁচে আছি এ উপজেলায় অপকর্মের সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করে যাবো’ এমনটাই বলেন এ নেতা।
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মিরপুর ভেড়ামারা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও জাসদ শরিক দল, নিবার্চন সামনে তাই তাদের বিভক্ত অনিবার্য। তাই এমন ঘটনা দুই দলের মধ্যে ঘটছে।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সংসদ নির্বাচনে মিরপুর ভেড়ামারা আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী কামরুল আরেফীন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, জাসদ নৌকার উপর উঠে আজ মন্ত্রী। জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনুর সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরোধের কারণ হলো অন্য জায়গায়। চারদলীয় জোট যখন ক্ষমতায় ছিলো, তখন অধ্যাপক শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে মিরপুর ভেড়ামারায় জামায়াত-বিএনপির ঈগল বাহিনীর তাণ্ডবে মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছিলো। কিন্তু হাসানুল হক ইনুর আস্থাভাজন জাসদ নেতা আব্দুল আলীম স্বপন সেই সব জামায়াত-বিএনপির ঈগল বাহিনীর খারাপ মানুষগুলোকে দলে নিয়েছে। এখন জাসদ সাধারণ মানুষের উপর তাণ্ডব চালাচ্ছে। জাসদের ইনু আওয়ামী লীগের জোটে রয়েছেন। কিন্তু তাই বলে এসব অপকর্মের দায়ভার আওয়ামী লীগ নিবে না।
কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা আমার দলের সাথে থাকবে তারা জনগণের সেবক হিসাবে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৪ দলের ছাতার নিচে থেকে মাঠ-ঘাট দখল করা যাবে না। যারা টেন্ডারবাজি করবেন তারা আমার দলের কেউ নয়।’
তিনি বলেন, তাই জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব দখলের প্রতিবাদে কুমারখালীতে সভা আহবান করে উপজেলা জাসদ। কিন্তু আওয়ামী লীগের ইন্ধনে ওখানে কুমারখালী উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছিল।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন