আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহ-সম্পাদক পদ নিয়ে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন ওবায়দুল কাদের।
শনিবারও একই পরিস্থিতির মুখে পড়ার পর গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে অসন্তোষ প্রকাশ করে একে ‘আনন্দ মিছিল’ বলেছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
রোববার সন্ধ্যায় ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢোকার সময় বিক্ষুব্ধ কয়েকশ নেতাকর্মীর হৈ চৈয়ের মুখে পড়েন কাদের। পরে তাদের কয়েকজনকে নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি হুঁশিয়ার করেন কাদের।
মূল দলে পদ না পাওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের উপকমিটির সহ-সম্পাদক পদ দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। বিগত উপকমিটিতে সাড়ে চারশ’র বেশি সহ-সম্পাদক হওয়ায় এই পদ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে সম্মেলনের মাধ্যমে তা একশ’র মধ্যে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের।
২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের দলের সাধারণ সম্পাদক হন। এর পর এক বছরের বেশি পার হলেও দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও সহ-সম্পাদকদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে সম্প্রতি ফেইসবুকে উপকমিটির সহ-সম্পাদকদের একটি তালিকা ঘুরছে, যা নিয়ে বিক্ষুব্ধ সেখানে নাম না থাকা সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা।
শতাধিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শনিবার সন্ধ্যায় ধানমণ্ডির এই কার্যালয়ে জড়ো হয়ে ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে হৈ চৈ করেন। এক পর্যায়ে দলীয় একটি বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিক্ষুব্ধদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন কাদের।
দুপুরে সচিবালয়ে ওবায়দুল কাদের দাবি করেন, আগের দিনের ঘটনাকে সংবাদমাধ্যম বিক্ষোভ লিখলেও তা ছিল ‘আনন্দ মিছিল’। দুপুরে সচিবালয়ে ওবায়দুল কাদের দাবি করেন, আগের দিনের ঘটনাকে সংবাদমাধ্যম বিক্ষোভ লিখলেও তা ছিল ‘আনন্দ মিছিল’। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে অসন্তোষ প্রকাশ করে রোববার দুপুরে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ওই ঘটনা বিক্ষোভ ছিল না, ছিল ‘আনন্দ মিছিল’।
“তখন তারা আনন্দ মিছিল করছিল। আর এটাকে বলে বিক্ষোভ মিছিল! সেক্রেটারিকে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল! এটা অন্যায় এটা কষ্টকর।”
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সচিবালয়ে এই দাবি করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফের
ধানমণ্ডির ওই কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন আগের দিনের বেশি, পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম দলীয় কার্যালয়ের ঢোকার সময় ‘কমিটি বাতিল চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
তার ঘণ্টাখানেক পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই কার্যালয়ে আসেন ওবায়দুল কাদের। তিনি সেখানে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা উপকমিটি বাতিল চেয়ে হৈ চৈ শুরু করেন।
এই অবস্থার মধ্যে কার্যালয়ে নিজের কক্ষে ঢুকে রাত ৮টার দিকে নেতাকর্মীদের ডেকে নেন ওবায়দুল কাদের।
এ সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে থাকা দলের উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দলের গঠনতন্ত্রের ২৫ (চ) ধারায় উপকমিটি গঠনের কথা বলা আছে। সেই কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে পদপ্রত্যাশী নেতারা দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে অভিযোগ দিতে এসেছিলেন। তিনি সবার অভিযোগ মনযোগ সহকারে শুনে বলেছেন, কমিটির যে তালিকা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, সেটা একটা খসড়া কমিটি। অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন ছিল।
“এই কমিটি নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নেত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে তিন মাস পর কমিটি ঘোষণা করা হবে। আর আপনারা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।
“আজকে আমাদের বক্তব্যের পরেও যদি কেউ পার্টি অফিসের সামনে বিশৃঙ্খলা করে তারা আওয়ামী লীগের কেউ না।”
বিক্ষোভকারীদের একজন ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছাত্রলীগের বিগত সাতটি কমিটির হাতে গোনা অল্প কয়েকজন ছাড়া সবাই কেন পদবঞ্চিত-এই বিষয়ে আমরা সাধারণ সম্পাদককে জানিয়েছি।”
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন