দেড় বছরের মূল বেতনের সমপরিমাণ নগদায়নের টাকা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে চিঠি দিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। ১১টি অভিযোগে অভিযুক্ত হলে গত ১০ নভেম্বর তিনি পদত্যাগ করেন। গত ১৭ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত তার এই চিঠি সম্প্রতি কানাডা থেকে ডাকযোগে সুপ্রিম কোর্ট কার্যালয়ে এসে পৌঁছেছে। চিঠিটি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা বরাবর পাঠানো হয়েছে। তবে বিচারপতি সিনহাকে নগদায়নের টাকা দেওয়া হবে কি-না, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. জাকির হোসেন সমকালকে বলেন, ১৮ মাসের নগদায়নের টাকা চেয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতির একটি চিঠি তারা পেয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে তিনি নগদায়ন পাবেন। এ নিয়মেই বিচারপতিদের নগদায়নের টাকা ছাড় করা হয় বলেও জানান তিনি।
এদিকে, দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ তদন্তাধীন থাকায় বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে নগদায়নের টাকা এখনই না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারই সাবেক সহকর্মী বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। তিনি সমকালকে বলেন, আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি বিবৃতি দিয়ে পদত্যাগ করা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ জনসমক্ষে এনেছেন। পরে ওই অভিযোগ মাথায় নিয়েই তিনি পদত্যাগ করেন। এর সুরাহা না হলে নগদায়নের 'টাকা ছাড়' করানোর সুযোগ নেই।
হেয়ার রোডের বাসা ছেড়েছেন বিচারপতি এস কে সিনহা :এদিকে, পদত্যাগ করার আড়াই মাস পর রাজধানীর কাকরাইলের হেয়ার রোডে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের দখল ছেড়েছেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। গত শনিবার তার স্ত্রী সুষমা সিনহা ওই বাসা থেকে সব মালপত্র নিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. জাকির হোসেন সমকালকে বলেন, গত শনিবার থেকে প্রধান বিচারপতির জন্য নির্ধারিত বাসভবন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাসাটি এখন খালি।
২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। তবে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়সহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ছিলেন। এই রায় নিয়ে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের টানাপড়েনের মধ্যে গত বছরের ২ অক্টোবর 'অসুস্থতাজনিত' কারণে ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি। পরে তিনি অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ১৩ অক্টোবর ঢাকা ছাড়েন। যাওয়ার আগে প্রধান বিচারপতি লিখিত বক্তব্যে সাংবাদিকদের বলেন, 'তিনি অসুস্থ নন। পালিয়েও যাচ্ছেন না। সাময়িকভাবে যাচ্ছেন। আবার ফিরে আসবেন। বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষার জন্য যাচ্ছেন তিনি। সরকারকে ভুল বোঝানো হয়েছে।' পরদিন এ ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এক বিবৃতিতে জানায়, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ১১টি দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তার কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে মেয়াদ শেষ হওয়ার ৮২ দিন আগে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। সমকাল
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন