খুব শিগগিরই নির্বাচকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাবনা দেবে বিএনপি। দলটির এ প্রস্তাবনার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ প্রস্তাবনায় আলোচনার সুযোগও থাকছে বলেও জানিয়েছেন এটি প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত কয়েক নেতা।বিএনপি প্রস্তাবনার কথা বললেও তা না দিয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে- ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন অভিযোগ করার কয়েকদিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে মানবকণ্ঠকে জানিয়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তাবনার কাজ শেষের পথে। প্রস্তাবনা জাতির কাছে উপস্থাপন করব। এর ম্যাধমে একটি জাতীয় আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করার চেষ্টা করছি আমরা।তিনি এতে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন থাকবে উল্লেখ করে বলেন, এটিকে ভিত্তি ধরে জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে একটি নির্বাচনী ব্যবস্থায় পৌঁছানো যাবে।
নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা উপস্থাপনের কোনো নির্দিষ্ট সময় ঠিক হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি মানবকণ্ঠকে বলেন, এখনো সময় নির্দিষ্ট হয়নি। ঠিক হলে সবাইকে আমরা জানিয়ে দেব।এর আগে এক অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছিলেন, যথাসময়ে দলনিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা দেয়া হবে। গত কয়েকদিন ধরেই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দুই দলের নেতাদের বাকযুদ্ধ চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের চার বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণের পরই এ বাকযুদ্ধ চলছে। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে।’ এর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি বলেছে, ‘প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে নতুন করে কিছু ভেবে থাকলে তার উচিত হবে সব ‘স্টক হোল্ডারের’ (অংশীজন) সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নেয়া।’ বিএনপির এমন প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, ‘আপাতত সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো বিষয়ের অবতারণা করে কোনো লাভ নেই। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। নির্বাচনকালীন সরকার যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করবে।’
ওবাদুল কাদের রোববার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনটা সরকার এই পর্যন্ত শুনলাম। একটা হচ্ছে নিরপেক্ষ সরকার, একটা হচ্ছে সহায়ক সরকার, আরেকটা হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তাহলে কী দাঁড়াল? এখানে আমি কী জবাব দেব? এখানে আমার কোনো জবাব নেই।তিনি বলেন, তাদের (বিএনপি) নিজেদের আগে ঠিক করতে হবে, সহায়ক সরকারের রূপরেখা তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাইবেন, না তারা নিজেরা ঠিক করবেন।এ প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের বন্ধুরা না কী বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারের যে প্রস্তাবনা দেবে সেটার অপেক্ষায় আছে। আমি আশ্বস্ত হলাম, এটা তো সুখবর। প্রথমবারের মতো শুনলাম তাদের গণতান্ত্রিক মনমানসিকতার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। তারা যদি বিএনপির সেই প্রস্তাবনার জন্য অপেক্ষা করে থাকে স্বাগত জানাই।তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার যেটি হবে সেটি হচ্ছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে প্রহণযোগ্য নির্বাচন। প্রস্তাবনার উদ্দেশ্য হবে সেটা। এটা বিএনপি বা আওয়ামী লীগের কোনো বিষয় নয়- জনগণের যে প্রত্যাশা নির্বাচনকে নিয়ে সেটি পূরণ করতে হবে। কোনো দল বা গোষ্ঠীর প্রত্যাশা পূরণ করার জন্য বাংলাদেশ হয়নি।তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষের প্রত্যাশা হচ্ছে, নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকবে, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন থাকবে, একটি নিরপেক্ষ সরকারের নির্বাহী বিভাগ কাজ করবে; যার মাধ্যমে জনগণ নির্দ্ধিধায় নির্বিঘেœ ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবে। তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে এবং তার প্রতিফলন ফলাফলে ঘটবে।তিনি মনে করেন, এতে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচিত সংসদ হবে, সরকার হবে।
এর ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেটি কোনো শক্তি করতে চাইলে তা প্রতিরোধ করতে হবে। প্রতিরোধ করে জনগণের রাষ্ট্রের ওপর যে মালিকানা তা ফিরিয়ে দিতে হবে।উল্লেখ্য, দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মেনে দলীয় সরকারের অধীনে হওয়ায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি ও জোটসঙ্গী দলসহ ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। ওই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৫৩ জন, সংবিধান অনুযায়ী যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা একটি সরকার গঠনে প্রয়োজন হয়। ওই নির্বাচনে জনগণ অংশ নেয়নি বলে অভিযোগ করে আসছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল। তবে বিএনপি ২০১৬ সালের শেষ দিকে এসে দাবি তোলে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের। সে বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া সেখানে এ দাবিও ছিল যে, নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের কাজে নির্মোহভাবে সহায়তা করতে একটি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রয়োজন। তার শিগগিরই এ সরকারের একটি রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। তবে ২০১৭ সাল চলে গেলেও এ সরকারের রূপরেখার প্রস্তাব আনেনি বিএনপি। খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে ফেরার পর নতুন করে আবার দলনিরপেক্ষ সরকারের দাবি তোলা হয়।
মানবকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন