বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের প্রেক্ষাপট এবং গ্রেফতার পরবর্তী সময়ে তাকে সম্বোধন এবং সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি আমূল পরির্তন এসেছে। বিএনপি নেত্রীকে তার দলের নেতাকর্মী এবং আশপাশের সবাই ‘ম্যাডাম’ বলে সম্বোধন করতেন। তিনিও তা পছন্দ করতেন। বরঞ্চ ম্যাডামের বাইরে কোনও সম্বোধন খালেদা জিয়া পছন্দও করতেন না।
কিন্তু এখন বিএনপি নেত্রী জেলে থাকায় তার পছন্দ-অপছন্দ জানা না গেলেও তাকে এখন সম্বোধন ও সম্মানের জায়গা উত্তরণ করেছে তার অনুসারীরা। তারা রাজকীয় মর্যাদার সম্বোধন ম্যাডামের চেয়ে এখন তাদের নেত্রীকে পৃথিবীর পবিত্রতম সম্পর্ক মায়ের স্থানে সম্মান, ভাবনা ও সম্বোধনেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। এমনকি আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক একাধিক জায়গায় বিএনপির সিনিয়র নেতা থেকে অসংখ্য নেতাকর্মী খালেদা জিয়াকে ‘আম্মা’ বলে সম্বোধন করেছেন। বিএনপির অনেক নেতার সাথে গত কয়েক দিন কথা বলে জানা গেছে, তারা তাদের নেত্রীকে এখন আম্মার জায়গাতেই বসিয়েছেন।
মূলত কর্নাটকের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় তিনি যেমন এক নামে ‘আম্মা’ বলে পরিচিতি পেয়েছিলেন, ঠিক তেমনি বাংলাদেশেও নিজেদের নেত্রীকে মায়ের জায়গায় বসাতে চান বিএনপি নেতাকর্মীরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত ব্যক্তি পিনাকী ভট্টাচার্য তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, যেটা হয়তো অনেকেই খেয়াল করেননি, তা হচ্ছে- বেগম খালেদা জিয়ার এই কয়দিনে সবচেয়ে বড় পলিটিক্যাল এচিভমেন্ট হয়েছে যে, তিনি তাঁর কর্মীদের কাছে ‘ম্যাডাম’ থেকে ‘মা’তে উন্নীত হয়েছেন। বেগম জিয়াকে আর কর্মীরা ম্যাডাম বলে ডাকে না, ‘মা’ বলে ডাকে। এই উত্তরণের রাজনৈতিক তাৎপর্য অপরিসীম।
এই উত্তরণের কারণে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম জিয়া যে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছেন সেই উচ্চতা ছোঁয়া আর কারো জন্য সম্ভব কি না, তা সন্দেহের বিষয়।’
তিনি লিখেছেন, আমাদের কালচারে মাতৃমূর্তি খুব পাওয়ারফুল একটি প্রপঞ্চ। আমরা দেশকে মায়ের সন্মান দেই। আমরা সবচেয়ে অনুগত মায়ের। সেই সন্মানের জায়গা যদি একজন পলিটিক্যাল লিডারকে ছেড়ে দেয়া হয়, তাঁর শক্তি হয়ে উঠতে পারে অকল্পনীয়।
পিনাকী মনে করেন, আমাদের মায়েরা কষ্ট সহ্য করেন, মুখে কিছু বলেন না; হয়তো নীরবে অশ্রুপাত করেন। বেগম জিয়াকে যতই কষ্ট দেয়া হবে, তাঁর কর্মীরা আরো বেশি করে তাঁকে মাতৃমূর্তির সাথে রিলেইট করবে। তাঁরা মনে করবে, মা নিশ্চয় নীরবে অশ্রুপাত করছেন। মায়ের সেই অদৃশ্য কল্পিত কান্না, তাঁদের বুকে ক্রমাগত শেলের মতো বিঁধতে থাকবে।
তিনি আরও লিখেছেন, বিএনপি নিশ্চয় আওয়ামী লীগকে ধন্যবাদ দিতে পারে। খালেদা জিয়ার গায়ে কালি লাগাতে গিয়ে উল্টা খালেদা জিয়াকে তাঁরা এক অনন্য উজ্জ্বল মাতৃমূর্তিতে উন্নীত করে দিয়েছে, যেই উচ্চতায় বেগম জিয়ার আশপাশে আপাতত আর কেউ নেই।
জানতে চাইলে বিএনপি নেতা মেজর আখতারুজ্জামান রঞ্জন বলেন, এটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা। কারণ বেগম খালেদা জিয়া শেষ ক্ষমতায় ছিলেন ২০০৬ সালে। এখন ২০১৮। গত বারো বছরে একটা নতুন প্রজন্ম তৈরি হয়ে গেছে। ৯০-এর দশকে যে শিশুটির জন্ম হয়েছে তারা এখন তরুণ। তাদের কাছে বেগম খালেদা জিয়া অবশ্যই মা।
তিনি বলেন, এই প্রজন্মটির কাছে বেগম খালেদা জিয়া শুধু মা নয়, মায়ের চেয়েও বেশি।
তিনি বলেন, তাদের রাজনীতি চিন্তা, তাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা, তাদের চাকরিবাকরি, তাদের সব কিছু তো মাকে নিয়েই। আমাদের সমাজে মা হলো সব কিছু। আজকের তরুণ সমাজের কাছে বেগম খালেদা জিয়া স্থান করে নিতে পেরেছেন। এবং দেশের তরুণ প্রজন্ম বেগম খালেদা জিয়াকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মা হিসেবে বরণ করে নিয়েছে। এটাই তো স্বাভাবিক। এখানেই খালেদা জিয়ার যত উত্তরণ। আজকের তরুণদের কাছে তিনি মা। কাজেই মায়ের জন্য তারা তো নড়বেই। লড়ার যে পথটা সৃষ্টি হয়েছে, তা হলো বেগম খালেদা জিয়া আজকে এ প্রজন্মের মা হতে পেরেছেন।
খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার আগেই আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যেও খালেদা জিয়াকে মা বলে সম্বোধন করেছেন। তিনি তার বক্তেব্যে বলেছিলেন- সমস্ত কর্কশে, কঠিনে, সিমেন্টে, কংক্রিটে, ইটে, কাঠে, পীঠে, পাথরে, দেয়ালে দেয়ালে বেজে উঠেছে এক দুর্বার উচ্চারণ, এক প্রত্যয়ের তপ্ত শংখধ্বনী আমার নেত্রী আমার মা বন্দী হতে দেবো না।
অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার দিন বলেছেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা বেগম খালেদা জিয়াকে মায়ের মতো সম্মান করে, তাই তাদের ক্ষোভ থাকাও স্বাভাবিক।
সূত্র: পরিবর্তন ডটকম
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন