দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড পাওয়া বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও বাধার অভিযোগ করেছে বিএনপি। ঢাকার বাইরে পুলিশ বিএনপিকে কোথাও দাঁড়াতেই দিচ্ছে না অভিযোগ করে ফখরুল দাবি করেন, রাজধানীতেও বাধার মুখে পড়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পুলিশের বাধার কারণেই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়নি বলে জানান ফখরুল। বলেন, বুধবার তারা বিকাল চারটা অবধি অনশন করতে চাইলেও পুলিশের কারণে দুপুর একটার পর তাদের উঠে যেতে হয়েছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের পরদিন শুক্রবার সারাদেশে বিক্ষোভ এবং শনিবার প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।
এরপর সোম থেকে বুধবার টানা তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। প্রথম দিন মানববন্ধন, দ্বিতীয় দিন অবস্থান এবং তৃতীয় দিন অনশন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।
এসব কর্মসূচি হাতে গোনা এক দুটি জায়গা ছাড়া নির্বিঘ্নেই পালন করেছে দলটি। তবে আজকের সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব দাবি করেন পুলিশি বাধার। মফস্বলে দলের নেতা-কর্মীদের পুলিশ দাঁড়াতেই দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের অবস্থান কর্মসূচি ও অনশন কর্মসূচিতে সরকার ও প্রশাসন বাধার সৃষ্টি করছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী ও পুলিশের দায়িত্বশলীরা বলছেন, শান্তিপূর্ণ কোনো কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হবে না। তাহলে এসব কী হচ্ছে?’
‘এমনকি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ও প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ আমাদের বুকিং দিতে চায় না। অথচ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আমরা বেশি কর্মসূচি পালন করি।’
‘আমরা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ও প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা সবার সঙ্গে সমান আচরণ করুন।’
বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করতে এবং আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা দিতে ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে করে ফখরুল বলেন, ‘এই ষড়যন্ত্রের একটাই উদ্দেশ্য, একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা।’
‘নীলনকশার অংশ হিসেবে তারা (সরকার) বিএনপিকে কোনো স্পেস দিচ্ছে না। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলাকালে বাধা দেওয়া হচ্ছে, নাশকতার কথা বলে সারাদেশে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’
‘ঢাকাতে প্রত্যেকটি নেতাকর্মীর বাড়িতে তল্লাশি করা হচ্ছে। আর যেখানে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিই করতে দেয়া হচ্ছে না সেখানে কিসের নাশকতা? এ পর্যন্ত তারা চার হাজার ৩০৯ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।’
খালেদা জিয়াকে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখারও সমালোচনা করেন ফখরুল। বলেন, ‘১৫০ বছরের পুরনো কারাগারে এ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাকে (খালেদা জিয়া) রাখা হয়েছে। অথচ অনেক আগেই এখানকার কার্যক্রম কেরাণীগঞ্জে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখানে শপিং মল ও পার্ক করার কথা চলছিল। অথচ তাকে এখানে রাখা হয়েছে। এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এটা একটা নীলনকশার বাস্তবায়ন।’
আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়া এবং বিএনপি যেন অংশ নিতে না পারে সেজন্য সরকার ‘নীলনকশা বাস্তবায়ন’ করছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
অনশন কর্মসূচিতে ২০ দলের বাইরে কোনো দল সংহতি জানায়নি- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ফখরুল বলেন, ‘আমরা তো কাউকে সংহতি প্রকাশ করতে দেখিনি। আর শর্টটাইমের মধ্যে কোথায় আমাদের কর্মসূচি হবে সেটাই তো নিশ্চিত ছিলাম না। কারণ রাতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে করার কথা বলে পরে আবার প্রেসক্লাবে করা যাবে বলে জানানো হলো। তাও আবার বেলা একটার মধ্যে শেষ করতে হবে।’
অত্যাচার, নিপীড়ন করে কেউ বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সবাইকেই যেতে হয়েছে। কিন্তু বিদায়টা সুখকর হয়নি। তাই বলব, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন, মানুষের মনের কথা বোঝার চেষ্টা করুন।’
গণতন্ত্র ধ্বংস হতে চলেছে দাবি করে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষের অধিকারের পক্ষে কথা বলার আহ্বান জানন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান, সব প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, গণতান্ত্রিক শক্তি এবং সুশীল সমাজের প্রতি অনুরোধ জানাব আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, আতাউর রহমান ঢালী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন