ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবার দুর্বৃত্ত ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতির প্রচারাভিযানে নেমেছে। তবে নিবার্চনকে কেন্দ্র করে এই অভিযানে নিজ দলের চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের প্রসঙ্গকে সামনে আনছে আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে বিএনপি বেছে না নিয়ে নিজেদের দুর্নীতিমুক্ত দাবি করে আওয়ামী লীগকে বেছে নেওয়ার আহ্বান জানাবেন দলটির নেতারা।
এর আগে আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচনের প্রস্তুতিস্বরূপ জনগণের কাছে বিএনপির ‘সহিংসতা’, ‘জ্বালাও পোড়াও’ এবং সরকারের ‘উন্নয়নের’ কথা তুলে ধরেছেন। কিন্তু জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড হওয়ার পর সুশীল সমাজ, রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষের কাছে আওয়ামী লীগ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বিশেষ করে নিজ দলের দুর্নীতিবাজ নেতাদের বিচারের বিষয়ে। সব মিলিয়ে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রচারণায় কৌশল পরিবর্তন করেছে।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা নির্দেশ দিয়েছেন—সারাদেশে জিয়া পরিবারের দুর্নীতি তথা বিএনপির জ্বালাও পোড়াও তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি নেতাদের দুর্নীতিও যেন গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়।
একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের দুর্নীতিগ্রস্থ রাজনীতিবিদদের নিয়ে মানুষের মনে যেসব প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে, তার জবাবও দিতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যাংকিং ও শিক্ষা খাতের দুর্নীতির কথা তৃণমূলেও পৌঁছে গেছে এবং ইতোমধ্যে সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ এ রকম প্রশ্ন তুলেছেনও। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেদের বলবেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সকল নেতাকর্মীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। কেউ জেলে আছেন কেউবা বিচারধীন আছেন।
দলের এই নতুন কৌশল স্পষ্ট হয় ১৮ ফেব্রুয়ারি রবিবার সকাল ১১টায় সিরডাপ মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায়। দলটির আইন বিষয়ক উপ-কমিটি আয়োজিত ‘রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন এবং দুর্বৃত্ত ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতি' শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে অতিথিদের আলোচনায় তা উঠে আসে।
আলোচনায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এখন সময় এসেছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। সে সিদ্ধান্ত জনগণ নেবে। তারা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মতো দুর্নীতিবাজ নেতৃত্বকে বেছে নিবে নাকি শেখ হাসিনার মতো পরিচ্ছন্ন নেতৃত্বকে বেছে নিবে। আমি মনে করি জিয়াউর রহমান রাজনীতিতে দুর্বুত্তায়ন শুরু করেছিলেন সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছেন বেগম খালেদা জিয়া। যা আজ আদালত কর্তৃক স্বীকৃত।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘জনগণের প্রতি আমাদের আহবান হবে তারা যেন বিএনপি নেতা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মতো নেতৃত্বকে পরিহার করে।’
এই আলোচনায় দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক, শিক্ষক, আইনজীবী, প্রবন্ধিককে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, শিক্ষক ড. আনোয়ার হোসেন, সাবেক বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, সাংবাদিক স্বদেশ রায়, মোজ্জাম্মেল বাবুসহ বিভিন্ন পেশার অর্ধশতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানিয়েছে, শুধু রাজধানীতে নয়, সারাদেশে এভাবে আলোচনা, সভা-সেমিনারের মাধ্যমে বিএনপি নেতাকর্মী বিশেষ করে জিয়া পরিবারের দুর্নীতির বিষয়ে জনগণকে জানানো হবে। সাধারণ মানুষ নির্বাচনে যেন তাদের বেছে না নেয়, তা জোরালো করতে সারাদেশের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা কী, তা সরাসরি বলেননি আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। তিনি প্রিয়.কমকে বলেন, ‘আমরা চাই বিএনপির রাজনীতি অব্যাহত থাকুক। এজন্য তাদের উচিত দুর্নীতিবাজ নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে পরিচ্ছন্ন নেতৃত্বের দিকে নজর দেওয়া।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও দলের পরিকল্পনা অনুয়ায়ী বক্তব্য দিয়েছেন। রবিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই যে দল ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী, তবে তাকে (খালেদা জিয়া) বাদ দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা কোথায়? বিএনপি নিজেরাই বলছে—খালেদা জিয়া জেলে যাওয়াতে তাদের দল আগের চেয়েও শক্তিশালী। তার অনুপস্থিতিতে যে দল এত ঐক্যবদ্ধ, শক্তিশালী সেই দলের নির্বাচনে যেতে অসুবিধা কী? বেগম জিয়াকে বাদ দিয়েও তারা নির্বাচনে যেতে পারেন, তা তারা বলে দিয়েছেন। এ ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী বিএনপিকে নিয়েই আমরা সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে চাই।’
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন