তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা শুরুর আগে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী রফিকুল হক বিদেশ থেকে আসা টাকা সরকারি তহবিলে ফিরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিযেছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া সে প্রস্তাব রাখেননি। আর এ কারণেই তার বিরুদ্ধে মামলাটি হয়।
সদ্য সমাপ্ত ইতালি ও ভেসিন সফর নিয়ে জানাতে সোমবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কথা জানান।
যে মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে, সেই মামলাটি হয়েছে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের জুলাইয়ে। সে সময় খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার আইনি পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন প্রবীণ আইনজীবী রফিকুল হক।
যে মামলায় খালেদা জিয়ার দণ্ড হয়েছে, সে মামলায় সরকারের কোনো হাত ছিল না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখন রফিকুল হক সাহেব ওনার আইনজীবী ছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, টাকাটা দিয়ে দেন, মামলা আর থাকবে না, প্রত্যাহার হয়ে যাবে।’
‘এই টাকাটা এসেছিল এতিমদের জন্য, এতিমখানা হবে, এতিমরা পাবে। কিন্তু সেই টাকা এতিমরা পায়নি।’
‘আপনারা নিজেরাই জানেন এই টাকা কত হাত ঘুরে ঘুরে ব্যক্তিগত তহবিলে চলে আসল। এখন অবশ্য তারা অনেক কথা বলে। এই কথাটা যদি তারা শুরুতে... মামলাই তো হতো না, টাকা তা যদি দিয়ে দিলেই তো হতো।’
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতিমখানার যে টাকা... জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ফান্ড করা হলো, টাকা বিদেশ থেকে আসল, সেখানে এতিমখানা করার কথা। সেখানে এতিমদের রাখার কথা। সেখানে খাবার দাবার দেয়ার কথা। কিন্তু সেখানে সেই টাকা নয় ছয় করে। এখন তো টাকাটা ব্যক্তিগত তহবিলে।’
‘কোরআন শরিফেও তো আছে এতিমের টাকা খাওয়া যায় না, তাই না? শাস্তি যেমন আদালতেও দেয়, আল্লাহর তরফ থেকেও হয়। এখানে তো আমাদের কিছু করার নাই।’
সরকার এই টাকা দিয়ে নিজেরাই এতিমখানা করে দেবে কি না- এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোর্টের রায় অনুযায়ী যতটুকু করণীয়, আমরা ততটুকুই করব। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয় না। আমরা তো বক্তিগত ফান্ডের টাকা নিতে পারি না।’
সবাই কি দিতে পারে?-এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘কেউ আছে ভাগ্যবতী, নিতেই পারে, আর কেউ আছে দিতেই পারে। এখানে তো তফাৎ আছেই।’
এ সময় উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি জনকল্যাণে ট্রাস্ট করে দেয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমাদের (শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা) অনুভূতি হলো, তিনি (বঙ্গবন্ধু) তো জনগণের জন্যই সময় দিয়েছেন, জনগণের জন্যই ত্যাগ স্বীকার করেছেন, জনগণের জন্যই কাজ করেছেন। কাজেই কার তার সম্পত্তিতে তো আমাদের কোনো অধিকার নেই। ওটা জনগণের সম্পত্তি, ওটা জনগণকে দিয়ে দিয়েছি। ট্রাস্ট করে দিয়েছি, মিউজিয়াম করে দিয়েছি। বরং আরও কীভাবে উন্নতি করা যায় সে ব্যবস্থা করেছি।’
ব্যক্তি বিশেষের দুর্নীতি নিয়ে সমালোচনা হয় না
খালেদা জিয়ার ‘দুর্নীতি’ নিয়ে সেভাবে আলোচনা হয় না অনুযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির কথা বলি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার, অনেকই কথা বলে। কিন্তু আবার এই দুর্নীতি ক্ষেত্র বিশেষে বা ব্যক্তি বিশেষে করলে সেটা নিয়ে খুব বেশি একটা সমালোচনা হয় না, কথাও হয় না।’
‘এতিমের টাকা আনার পরও তার মায়া ত্যাগ করতে না পারে, তাহলে আমার তো কিছু করার নেই’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘সাংবাদিক বা কলামিস্ট বা যারা লেখে, তারা বলবে। আর আমি বলতে গেলেই তো আমার দোষ হবে। আমি বলতে যাব কেন।’
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন