বিশেষ প্রতিনিধি
আওয়ামীপন্থী অনলাইন পোর্টাল bdnews24 এর সোমবারের একটি প্রতিবেদন থেকে কিছু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু বক্তব্য হুবুহু তুলে দিচ্ছি। এই কথাগুলো বিডিনিউজের এই লিংকে গিয়ে পাবেন: https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1461884.bdnews
সংবাদ থেকে উদ্ধৃতি:
“পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ‘নতুন কিছু নয়’ মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে থাকা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইতালি সফরের বিষয়ে সোমবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মন্ত্রী কি নিজে প্রশ্ন পত্র ফাঁস করতে গেছে, না কি সচিব গেছে?
“দেখুন প্রশ্নপত্র ফাঁস, এটা কোনো নতুন কিছু না, এটা কিন্তু সব সময় যুগ যুগ ধরেই চলে এবং কখনও প্রচার হয় কখনও প্রচার হয় না, এটা হল বাস্তবতা।
“এবারে যেটা হচ্ছে, এখন সমস্যা হয় গেছে প্রযুক্তি আমরা ব্যবহার করছি। আর এ প্রযুক্তি আমাদের সুযোগও করে দেয় আবার সমস্যাও তৈরি করে দেয়।”
বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষাসহ নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ব্যর্থদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না- এনিয়ে একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন।
জবাব দিতে গিয়ে পরীক্ষার কতক্ষণ আগে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে ওই সাংবাদিকের কাছে জানতে চান প্রধানমন্ত্রী।
“আমি একটা কথা আপনাকে বলি, যে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে এটা কতদিন আগে ফাঁস হয়েছে সেটা বলতে পারেন? সাধারণত কতদিন আগে? কুড়ি মিনিট আগে?
“এখানে কিন্তু একটা প্রশ্ন আছে, যখন প্রশ্নপত্র যায় হলে বা যে প্রতিষ্ঠানে, সে প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পরে সেগুলো খোলা হয় এবং সেটা বিতরণের জন্য সবকিছু খুলে রাখা হয়। এখন সেখানে যদি কেউ চট করে ফটো নিয়ে মোবাইল ফোনে সেটাকে ছড়িয়ে দেয়, সেটা আপনি কী করবেন?”
গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। চলতি এসএসসি পরীক্ষায় প্রায় প্রতিটি বিষয়ে প্রশ্নপত্রই পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে ফেইসবুকে চলে আসে।”
এবার সরকারপন্থী আরেকটি অনলাইন পোর্টাল banglatribune এর একটি প্রতিবেদন থেকে আরও কয়েকটি উদ্ধৃতি দিচ্ছি।
সংবাদ থেকে উদ্ধৃতি:
“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাধারণত কতদিন আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়? ২০ মিনিট আগে? যদি কোনও পরীক্ষার্থী পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট বা একঘণ্টা আগে, অথবা দুই ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র পায়, তাহলে এমন ফটোজেনিক ও মেধাবী পরীক্ষার্থী কে আছে, যে চট করে প্রশ্ন দেখেই উত্তর মুখস্থ করে ফেলতে পারে? এত ট্যালেন্টেড কে আছে? তিনি বলেন, ‘এই প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজছি কিন্তু পাচ্ছি না। তবে হ্যাঁ, একটা বিষয় আছে, টিক মেরে উত্তর লেখা। সেটাও তো বই থেকে খুঁজতে হবে। এত অল্প সময়ে বই থেকে সেই উত্তর দেখে মুখস্থ করে নেবে? এটা কেউ পারবে? এ সময় একজন পরীক্ষার্থী তো কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়, সে রাস্তায় থাকে। তাছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানোর জন্য আধঘণ্টা আগে কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীকে যেতে বলা হলো।’
“প্রশ্নফাঁসকারীদের ধরে শাস্তির বিষয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সারাদেশে তো আপনারদের এজেন্ট আছে, আপনারাই একটু খুঁজে বের করে দিন, কারা এই কাজ করছে। তাদের ধরে আমরা শাস্তি দিয়ে দেবো। তাছাড়া, আমরা টিক মারার পদ্ধতি বাতিল করে দেবো। কারণ, ওটাতে সুবিধা বেশি। আমরাও তো একসময় খাতা ভরে লিখেছি। তাহলে, এখন টিক কেন থাকবে। আমরা তো চাই, সবাই সুশিক্ষিত হোক। বিনামূল্যে বই দিচ্ছি এজন্য। আমরা তো চাই না প্রশ্নফাঁস হোক ।’
আওয়ামী লীগ শাসনের গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়া মহামারি আকার ধারণ করেছে। এমনকি খুবই স্পর্শকাতর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হয়েছে, এবং এ জন্য পুলিশ কয়েকজনকে আটকও করেছিল।
পাবলিক পরীক্ষায় গণহারে প্রশ্নফাঁস হচ্ছে এ নিয়ে বাংলাদেশের একটি অশিক্ষিত মানুষও সচেতন। সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত প্রমাণাদিসহ শত শত রিপোর্ট হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সরকার প্রথমে অস্বীকার করে পরে নতি স্বীকার করেছে। অর্থাৎ প্রশ্নফাঁস নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই কারো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তা জানেন।
এখন এসএসসির মতো জুনিয়র পর্যায়ে প্রশ্নফাঁস মানে ১৫ লাখের মতো শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে খেলা করা। এমন স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির আচরণ কেমন হওয়া উচিত?
অবশ্যই নমনীয়। কারণ এতে কোটি মানুষের আবেগ জড়িত। লাখ লাখ বাচ্চা একবার দুর্নীতিতে এবং অপশিক্ষায় অভ্যস্ত হলে এটা সারা জীবন বয়ে বেড়ােবে তারা। আবার তাদের অনেকে প্রশ্নফাঁসের কারণে বেইনসাফির শিকার হবে। আবার কেউ ফাঁস করা প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে ভাল রেজাল্ট করে যাবে ঠিকই। কিন্তু বাস্তবে কিছুই শিখবে না। ফলে ভাল প্রতিষ্ঠানে খারাপ ছাত্র আর খারাপ প্রতিষ্ঠানে ভাল ছাত্ররা ভর্তি হয়ে দেশের ভবিষ্যতকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেবে। অনেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী আশামতো ফল করতে না পেরে আত্মহত্যাও করে।
তাই প্রশ্নফাঁস এতো স্পর্শকাতর। কিন্তু এই বিষয়টিকে নিয়ে শেখ হাসিনা এমনভাবে কথা বললেন যেন, তিনি হাস্যরস করছেন। সাংবাদিকদের বলছেন, ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিতে। আর তার গোয়েন্দা বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনী বসে বসে মজা দেখবে! তারা ফাঁসকারীদের ধরবে না!
হাসিনা বললেন, পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগে নাকি প্রশ্ন ফাঁস হলে শিক্ষার্থীদের কোনো কাজে সেটি লাগবে না! তারপরও তিনি প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করবেন না! ফাঁসকারীদের ধরতে নির্দেশ দেবেন না। অথচ অন্য অনেক কিছুতেই তিনি নিজে নির্দেশ দেন বলে আমরা পত্রিকায় পড়ি।
শেখ হাসিনা একটা কথা বলেছেন, এক ঘণ্টা আগে প্রশ্ন পেলে নাকি খুঁজে উত্তর বের করার টাইম পাবে না শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তিনি এটি গোপন করে গেছেন যে, ফাঁস হওয়া এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তরও সাথে সাথে সরবরাহ করা হয়। শিক্ষার্থীদের যারা প্রশ্ন পায় তা শুধু কোন নম্বর প্রশ্নের কত নম্বর উত্তর তা চোখ বুলিয়ে যায়। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে পরীক্ষার হলে ঢুকে সেই উত্তরগুলো হুবহু দাগিয়ে আসে। এভাবে মাত্র এক ঘণ্টা আগে ফাঁস হওয়া প্রশ্নও ভয়ংকর হয়ে ওঠে।
হাসিনা বলেছেন, প্রশ্ন নাকি মন্ত্রী ফাঁস করেননি, তাই তাকে পদত্যাগ করতে হবে কেন? হাসিনা এটা কি জানেন না যে, সভ্য দেশে মন্ত্রীর প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকা লাগে না, তার অধীনে হওয়ার অপরাধের দায় নিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন। কয়েকদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার এক মন্ত্রীও একই ধরনের ঘটনায় পদত্যাগ করেছিলেন।
এসব কিছু হাসিনা জানেন এবং বুঝেন। প্রশ্ন ফাঁসের ক্ষতিকর দিক নিয়েও জানেন। কিন্তু তারপরও তিনি প্রশ্ন ফাঁসকারীদের পক্ষে দাঁড়াবেন। তিনি চান প্রশ্ন আরও ফাঁস হোক। এভাবে বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম খোড়া হয়ে গড়ে উঠুক। এবং ভবিষ্যতে আফসোস করুক।
কিন্তু কেন হাসিনা এমনটা চান?
কারণ একটাই- প্রতিশোধ।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন। এই প্রতিশোধ নেয়ার শপথ তিনি ১৯৭৫ সালেই নিয়েছিলেন। এবং তা বাংলাদেশে ফেরার পর ১৯৮১ সালেও ঘোষণা দিয়েছিলেন। দেখুন রেফারেন্স–
বিখ্যাত সাংবাদিক, বিবিসির সাবেক ব্যুরো প্রধান সিরাজুর রহমান চৌধুরী তার বইয়ে লিখেছেন এসব কথা। ২০১৫ সালে মাসিক অন্যদিগন্ত পত্রিকায় এক কলামেও তিনি হাসিনার প্রতিশোধপরায়নতার প্রতিজ্ঞার কথা লিখেছেন। সেখান থেকে হুবহু তুলে ধরছি–
“বুশ হাউজে হাসিনার সম্মানে চা-চক্র:
শেখ হাসিনা প্রায় দুই ডজন সহচর নিয়ে বুশ হাউজে হাজির হলে আমরা হতাশ হয়েছিলাম। সহকর্মী জন রেনার ও আমি স্থির করলাম যে, আমরা দু’জন নেত্রীকে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্টুডিওতে নিয়ে যাবো এবং সেখানে সব বিষয়ে তার মতামত জানার চেষ্টা করব। প্রথমেই শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নেবেন জন রেনার। আলোচনার সূত্রপাত তিনি করেছিলেন ইংরেজিতে এভাবে : শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন। দলনেত্রী হয়ে আপনার ভালো লাগছে?
শেখ হাসিনা : (ইংরেজিতে) না, মোটেও ভালো লাগছে না। আমি রাজনীতি ভালোবাসি না, রাজনীতিকে ঘৃণা করি।
জন রেনার : (বিস্মিত হয়ে) তাহলে আপনি কেন রাজনীতিতে এলেন? কেন দলনেত্রী হতে গেলেন আপনি?
শেখ হাসিনা : (ক্রুদ্ধ, ইংরেজিতে) ওরা আমার বাবাকে খুন করেছে, আমার মাকে খুন করেছে, আমার ভাইদের খুন করেছে, তাদের জন্য কেউ এক ফোঁটা চোখের পানি ফেলেনি। আমি তার প্রতিশোধ নেবো। প্রতিশোধ নেবো বলেই রাজনীতিতে এসেছি।
চোখে চোখে জনের অনুমতি নিয়ে স্টুডিও ম্যানেজারকে রেকর্ডিং বন্ধ করতে বলি। তারপর বাংলায় নেত্রীকে বললাম, আপনি দলনেত্রী হয়েছেন, আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী হবেন আপনি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশের প্রত্যাশা অনেক। শুধু প্রতিশোধ নিতেই মানুষ কেন ভোট দিয়ে আপনাকে প্রধানমন্ত্রী করবে? তাদের সবার বাবা-মা তো খুন হয়নি! শেখ হাসিনা জবাব দেননি। কিন্তু আমার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না যে, এরপর আমার কোনো কথায় তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না।”
এই প্রতিশোধে কথা হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময়ও বলেছিলেন। দৈনিক ইত্তেফাকে কলামিস্ট ফারাজী আজমল হোসেন ২০১৬ সালের ১৭ মে লিখেছেন, বিমানবন্দরে নেমে “স্বজন হারানোর বেদনায় কাতর বঙ্গবন্ধু কন্যা অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘…আমি সামান্য মেয়ে। সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে থেকে আমি ঘর-সংসার করছিলাম। কিন্তু সবকিছু হারিয়ে আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উত্সর্গ করতে চাই।”
এখন নিশ্চয়ই বুঝা গেছে, শেখ হাসিনা কার ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন? বাপের মৃত্যুর পর এই দেশে মানুষ এক ফোটা চোখের পানি ফেলেনি। ফলে তাদের ওপরই প্রতিশোধ নিচ্ছে হাসিনা। এবং তার বহু উদাহরণের একটি হল প্রশ্নফাঁসকারীদের পক্ষ নিয়ে তার বক্তব্য।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন