জাতীয় নির্বাচনের বছরে কয়েক মাস পরেই রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন। তার আগে উত্তরে মহানগরটিতে প্রধানমন্ত্রীর সফর। নগরী জুড়ে নির্বাচনী আমেজ। পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার ও তোরণেই সীমাবদ্ধ নয় জনসভার প্রচারণা। পুরো মহানগর জুড়ে চলছে গণসংযোগ। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন বার্তা নিয়ে নেতারা যাচ্ছেন জনগণের দ্বারে দ্বারে।
সিটি ও জাতীয় নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার এ সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা। তারা বলছেন, এই সফরের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্য আরো সংহত হবে, যা আগামী নির্বাচনে বড় ভূমিকা রাখবে।
২০১৩ সালের ১৫ জুন রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট হয়। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই চার সিটিতেই আওয়ামী লীগ সমর্থিক প্রার্থীরা জিতলেও আওয়ামী লীগ আমলের ভোটে হেরে যান দল সমর্থিত প্রার্থীরা। এরপর একই বছরের ৬ জুন আওয়ামী লীগের শক্তিশালী অবস্থান থাকা গাজীপুরেও হেরে যান আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী।
পাঁচ বিভাগীয় শহরেই আবার বাজতে যাচ্ছে ভোটের দামামা। এবার ভোট হবে দলীয় প্রতীকে। আর জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব শহরে ভোট হবে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গোটা দেশবাসীর নজরে থাকবে এই নির্বাচন আর এখানে জয় পরাজয় আগামী সংসদ নির্বাচনে কী ফলাফল আসতে যাচ্ছে তার আভাসও পাওয়া যাবে।
এ কারণে আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে। আর এর অংশ হিসেবেই শহরগুলোতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে গত ৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী সিলেট এবং ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল সফর করেছেন।
পাঁচ বছর আগের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীর হারের পেছনে অন্যান্য অনেক কারণের সঙ্গে দলীয় কোন্দলকেও চিহ্নিত করা হয়েছিল সে সময়। এবার আগেভাবেই প্রধানমন্ত্রী শহরগুলোতে গিয়ে নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন। সেই সঙ্গে দলের কর্মী সমর্থকদেরকেও উৎসাহী করতে চান। জনগণের কাছে সরকারের উন্নয়নের বার্তা তুলে ধরতে চান।
এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন উত্তরের বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে। সেদিন বিকালে মহানগরের মাদ্রাসা ময়দানে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, বগুড়া, রাজশাহী এবং সিরাজগঞ্জে জেলা ও বিভিন্ন উপজেলায় সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার রাতেও রাজশাহীর মোহনপুর ও পবা উপজেলায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে নগরীর ১০টি ওয়ার্ডে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে মতবিনিময় করেন। বাকি ওয়ার্ডে আজ গণসংযোগ করার কথা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘২২ তারিখ প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে পুরো রাজশাহী মুখর থাকবে। ...জনসভাকে ঘিরে জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়ে আওয়ামী লীগ প্রচার চালিয়েছে। যেন এ জনসভার রেশ দীর্ঘদিন থাকে।’
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘এই জনসভা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করবে। এ জনসভার মাধ্যমেই আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিও আমরা সম্পন্ন করছি।’
রাজশাহী থেকে আমাদের ব্যুরো প্রধান রিমন রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে রাজশাহী ছেয়ে গেছে পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার আর রাস্তার উপর বিশাল বিশাল তোরণে। প্রচার চলছে মাইকেও। সভা, সমাবেশ, প্রতিনিধি সভা ও গণসংযোগ করেও প্রচার চালাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোও প্রচারে পিছিয়ে নেই। সব মিলিয়ে এখন রাজশাহী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সাজ সাজ রব।
প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রকল্প উদ্বোধন করবেন
তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত বেসরকারি কলেজ (আইসিটি) সমূহের উন্নয়ন র্শীষক প্রকল্পের এর আওতায় বোয়ালিয়া বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজ, পবা দামকুড়া হাট কলেজ, বাঘা আড়ানী ডিগ্রি কলেজ, তানোর আব্দুল করিম সরকার ডিগ্রি কলেজ, বাগমারা কলেজ, পুঠিয়ার বিড়ালদহ কলেজের চার তলা করে এবং বোয়ালিয়া শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান ডিগ্রি কলেজের পাঁচ তলা একাডেমিক ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
রাজশাহী পুলিশের চন্দ্রিমা, কাশিয়াডাঙ্গা, কাটাখালী, এয়ারপোর্ট, পবা, কর্ণহার, দামকুড়া, ও বেলপুকুর থানার উন্নয়ন কাজ, পুঠিয়া উপজেলায় বারনই নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণ, রাজশাহী (নর্থ) ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ, নওহাটা ফায়ার স্টেশন নির্মাণ, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড সার্ভে ইনস্টিটিটিউট, গোদাগাড়ী উপজেলা সম্প্রসারিত প্রশাসনিক ভবন ও হল রুম, রাজশাহী বিভাগীয় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের নির্মাণ শেষ হয়েছে। এসব স্থাপনাও উদ্বোধন করবেন তিনি।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হবে যেসব প্রকল্পের
রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে আড়াইশ শয্যার ছয় তলা ছাত্রীনিবাস, কাশিয়াডাঙ্গা ও মেহেরচন্ডী বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, রাজশাহী-নওগাঁ প্রধান সড়ক হতে মোহনপুর-রাজশাহী-নাটোর সড়ক পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ ফ্লাইওভার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, চারঘাট উপজেলার কৃষ্ণপুর হতে জাহাঙ্গীরাবাদ সড়কের বড়াল নদীর উপর ৯৬ মিটার পিএসসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ কাজের ভিত্তি স্থাপন করা হবে এই সফরে।
এর বাইরে গোদাগাড়ী উপজেলাধীন বড়গাছি ও রাজাবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিস এবং চারঘাট উপজেলাধীন চারঘাট ও নন্দনগাছি ইউনিয়ন ভূমি অফিস, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, দূর্গাপুর উপজেলাধীর মাড়িয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং বেসরকারি শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তি স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন