জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে খালেদা জিয়ার দেয়া স্টেটমেন্ট বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন। রায় প্রদানকারী বিচারক তার রায় ও রায়ের পর্যবেক্ষণে স্ববিরোধী কাজ করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘এ মামলার শুনানির সময় আমার দেয়া একটি স্টেটমেন্ট ছিল অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। ছাত্র, শিক্ষককে হত্যা করা হচ্ছে। এগুলো কি ক্ষমতার অপব্যবহার নয়? আমি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছি?’
স্টেটমেন্ট শেষে যে প্রশ্নবোধক চিহ্ন দেয়া হয়েছিল, সেই প্রশ্নবোধক চিহ্ন তুলে দিয়ে তাকে অপরাধী বানানো হয়েছে বলে আপিলে তুলে ধরেছেন খালেদা জিয়া। আপিলে তিনি ৪৪টি যুক্তি তুলে ধরে মোট ১২২২ পৃষ্ঠার আপিল ফাইল করেছেন।
২০ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার আদালত থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ খালেদা জিয়ার পক্ষে এসব তথ্য প্রিয়.কমকে জানান।
আদালত প্রশ্নবোধক চিহ্নের ব্যাখ্যা কী দিয়েছেন-এমন বিষয় নজরে আনা হলে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সব জানতে পারবেন । আপিলের শুনানির সময় আমরা সব বিষয় আদালতে তুলে ধরব। আমরা বিচারিক আদালতের নথিপত্র কল করাব।’
খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী আমিনুল ইসলাম প্রিয়.কমকে বলেন, ‘বিচারক বিচারিক মন-মানসিকতা নিয়ে মামলায় রায় ঘোষণা করেননি। রায়ের পর্যবেক্ষণে অনেক স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। রায়কে বিকৃত করেছেন। তার রায় অসামঞ্জস্যপূর্ণ। রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে অরক্ষণীয় মনোভাব ছিল তার।’
তবে আদালতের রায় নিয়ে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান প্রিয়.কমকে বলেন, ‘এটি একটি সাব-জুডিস ম্যাটার, এটি নিয়ে আমি কোনো কমেন্ট করব না।’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের সার্টিফাইড কপির এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘আসামি বেগম খালদা জিয়া তার বক্তব্যে আরও বর্ণনা করেছেন যে, তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কোনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেন নাই। কিন্তু তার ওই বক্তব্য সঠিক না।’
রায়ের অপর এক পৃষ্ঠায় বিচারক বলেছেন, ‘আসামি বেগম খালেদা জিয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারার বিধান মোতাবেক আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক মৌখিক বক্তব্য উপস্থাপনের সময় উহার ৮৮ পৃষ্ঠায় তিনি জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে উল্লেখ করেছেন যে “ক্ষমতার অপব্যবহার আমি করেছি”।’
৮ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠান আদালত। একইসঙ্গে এই মামলার আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পাঁচজনের প্রত্যেককে ১০ বছর করে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন।
সাজা পাওয়ার পর থেকে পুরান ঢাকায় অবস্থিত সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের বিশেষ সেলে আছেন খালেদা জিয়া। তাকে মুক্ত করতে শুরু থেকেই নানামুখী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে বিএনপি। সর্বশেষ মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছেন তার আইনজীবী আবদুর রেজাক খান।
খালেদা জিয়ার আপিল আবেদনটি ২২ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য ৬ নম্বর তালিকায় রাখা হয়েছে।
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন