একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আহ্বান করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছে নতুন ৭৬টি দল। আগামী মাসে নিবন্ধন দিতে চলছে যাচাই-বাছাই। এসব দলের মধ্যে প্রায় অর্ধশত দলের কার্যালয় ও মাঠ পর্যায়ে কমিটির হদিস মিলছে না। কার্যালয়ের যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে সেখানে রয়েছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, মুদির দোকান কিংবা আবাসিক ভবন।
নতুন দলের তথ্য যাচাই কমিটির প্রধান ও ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, নতুন দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে আমরা একটা কাঠামো নির্ধারণ করেছি। প্রত্যেকটা দলের সব তথ্য যাচাই করা হবে। এরপর আমরা কমিশনে উপস্থাপন করব। আশা করছি, শর্ত পূরণ করতে পারা দলগুলোকে আগামী মাসে নিবন্ধন দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, আবেদনকৃত বেশিরভাগ দলের কার্যালয় ও কার্যক্রম নেই। যাচাই-বাছাইয়ে প্রথমে এসব দল বাদ পড়তে পারে। আগামী মাসে কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, নতুন ৭৬টি দলের আবেদন যাচাই-বাছাই শুরু করেছে ইসি। এ সংক্রান্ত কমিটির একটি বৈঠক হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, গঠনতন্ত্র, কমিটি, জেলা-উপজেলার অফিসের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে। নিবন্ধনের শর্ত কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করে নতুন দলের নিবন্ধন দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে যেসব রাজনৈতিক দলের কর্মকা- দৃশ্যমান রয়েছে এবং নিয়মিত সভা-সমাবেশ করছে সেগুলোকে নিবন্ধন দিতে চায় ইসি।
নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দিতে ৩০ অক্টোবর আবেদন আহ্বান করে ইসি। ৩১ ডিসেম্বর ছিল আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন। ইসির সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্র জানায়, ‘নাকফুল বাংলাদেশ’ নামক দলের আবেদনে অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয় দেখানো হয়েছে রাজধানীর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের বিএনএস সেন্টারের দশম তলা। কিন্তু সেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যালয় নেই। যে কক্ষটিকে দলীয় কার্যালয় হিসেবে দেখানো হয়েছে, সেটি একটি গার্মেন্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
রাজধানীর ২২/১ তোপখানা রোডের বাংলাদেশ শিশুকল্যাণ ভবনে ৪টি রাজনৈতিক দলের কার্যালয় রয়েছে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ‘বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস-বিজেসি’ নামে একটি নতুন দল আবেদন করেছে। দলটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন নিজের যে ফ্ল্যাট বাসায় পরিবার নিয়ে থাকেন সেটাকেই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দেখান হয়েছে। আবাসিক ভবনটি রাজধানীর তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়ার বিজয় সরণি টাওয়ার নামে পরিচিত।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনে বলা হয়েছে, নিবন্ধন পেতে হলে একটি দলকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কোনো নির্বাচনে অন্তত একটি সংসদীয় আসন পেতে হবে, অথবা যে কোনো একটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে ওই আসনে প্রদত্ত মোট ভোটের ৫ শতাংশ পেতে হবে, অথবা দলের একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে, অন্তত ২১টি প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা কমিটি থাকতে হবে এবং অন্তত ১০০ উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রামাণিক দলিল থাকতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, তিনটির মধ্যে একটি শর্ত পূরণ হলেই নিবন্ধনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
নিষিদ্ধ দলের তালিকা চেয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবের কাছে সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের তালিকা চেয়ে মঙ্গলবার চিঠি দিয়েছে ইসি। নিবন্ধনের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের সুবিধার্থে এ তালিকা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইসির উপসচিব মো. আবদুল হালিম খান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত তারিখের মধ্যে প্রাপ্ত আবেদনসমূহ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এজন্য সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের তালিকা প্রয়োজন। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে তালিকা সরবরাহের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন