শনিবার বিএনপির কালো পতাকা কর্মসূচিতে দাঁড়াতেই দেয়নি পুলিশ। ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম জিয়া গ্রেপ্তার হন। বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে দুই সপ্তাহের বেশি সময়ের আন্দোলন বিএনপি করেছে বাধাহীন ভাবেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘বিএনপি যতক্ষণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবে, ততক্ষণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বাধা দিবে না। কিন্তু সহিংস আন্দোলনের চেষ্টা করলে সরকার জনগণের জানমাল রক্ষার জন্য সব কিছুই করবে। কিন্তু গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শান্তিপূণ আন্দোলনের নামে বিএনপি আসলে সহিংস আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।’ সেতুমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর আজ বিএনপিকে দাঁড়াতেই দেয়নি পুলিশ। তাহলে কি সরকারই বিএনপিকে সহিংস আন্দোলনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে? এরকম প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা কেন তাদের উস্কানি দেবো? তারা তো নিজেরাই সহিংস আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি করেছে।’ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন যে, ‘শনিবার বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিনা উস্কানিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। আমাদের নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার তো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনও সহ্য করতে পারছে না।’
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, সরকার বিএনপির ধারাবাহিক কর্মসূচিকে আর প্রশ্রয় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষ করে, ধাপে ধাপে বিএনপি আন্দোলনের একটা ক্ষেত্র তৈরি করছে। আন্দোলনে নেতা-কর্মীরাও জমায়েত হচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, ‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে জনমত সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। আন্দোলন গড়ে ওঠার আগেই তা বন্ধ করতে হবে।’ সূত্রমতে, রোববার বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদনের শুনানি হবে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি, উভয় দলের শীর্ষ নেতারাই মনে করছেন, এই মামলায় সামগ্রিক বিবেচনায় বেগম জিয়া জামিন পাবেন। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৭ বছরের দণ্ডপ্রাপ্তকে পর্যন্ত জামিন দিতে পারে। তাছাড়া বয়স এবং সামাজিক মর্যাদা বিবেচনায় তাঁর জামিন পেতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সরকার এখনই বেগম জিয়াকে মুক্তি দিতে রাজি নয়। সরকারের পক্ষ থেকে অনেক নেতাই ব্যক্তিগত আলাপে বলেছেন, জামিনে মুক্তি পেলে বেগম জিয়া ‘আপোষহীন’ নেত্রী হয়ে উঠবেন। সে সুযোগ বিএনপিকে দিতে চায় না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ধারণা অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলে, বিএনপি আরও বড় মাপের কর্মসূচি দিতে পারে। সেজন্য সরকার কঠোর অবস্থানই গ্রহণ করছে। আন্দোলন যেন জমে উঠতে না পারে সেজন্য একদিকে যেমন বিএনপিকে রাস্তায় দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। তেমনি ধরে ধরে গ্রেপ্তার করা হবে নেতা কর্মীদের। কিন্তু বিএনপির নেতারা বলছেন, ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি না করতে দিলে কর্মীরা সহিংস হয়ে উঠবেই। অহিংস কর্মসূচিতে বাধা দিলেতো ভাংচুর, অগ্নিসংযোগই হবে প্রতিবাদের ভাষা।’ আওয়ামী লীগও সম্ভবত এটাই চাইছে, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি সহিংস রাজনীতি জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছিল। শুধু জনগণ নয় আন্তর্জাতিক মহলও এই সন্ত্রাসকে অগ্রহণযোগ্য বলে চিহ্নিত করেছিল। আর বিএনপি প্রত্যাখ্যাত হওয়াতেই ২০১৪র নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার প্রায় পূর্ণ মেয়াদ পার করতে পেরেছে। বিএনপি আবার একই রকম কর্মসূচি গ্রহণ করলে সরকারের আখেরে লাভ হবে। বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল হিসেবেই চিহ্নিত হবে। সেক্ষেত্রে জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন হারাবে বিএনপি। সে কারণে সরকার এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশল হিসেবেই আবার গ্রেপ্তার এবং কঠোর অবস্থানে গেছে।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন