নির্বাচনে কোন আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী কেমন হতে পারে তার আগাম ধারণা নেয়ার জন্য এ জরিপ চালানো হচ্ছে বিএনপির যেসব প্রার্থীর অবস্থান শক্ত তাদের মাঠে নামতে দিতে চায় না শাসকদল
আগামী একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ দলের পাশাপাশি বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের ওপরও জরিপ করছে আওয়ামী লীগ। কোন আসনে কে দলের মনোনয়ন পেতে পারেন, মাঠে কার অবস্থান কেমন, প্রার্থী কী পরিমাণ ভোট পেতে পারেন, জয়লাভের সম্ভাবনা কতটা- এসব বিষয় নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চালাচ্ছে ক্ষমতাসীন এ দলটি। সার্বিক যাচাই-বাছাই শেষে বিএনপির প্রার্থীর বিপক্ষে জয় এনে দিতে পারবেন এমন প্রার্থীকে নৌকার মনোনয়ন দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রতি আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা, দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা, কার দলীয় মনোনয়ন পাবার সম্ভাবনা বেশি, অভ্যন্ত্মরীণ দ্বন্দ্ব, প্রার্থীদের প্রতি দলীয় নেতাকর্মী ও জনগণের সমর্থন কেমন-জরিপে তার পুরোটা তুলে আনা হচ্ছে।
এ ছাড়া কোন আসনে শাসকদলের প্রার্থীর জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি, কোন আসনে নেই সে তালিকা করার পাশাপাশি জাতীয় পার্টি বা অন্য দলের প্রার্থীর জয়লাভের সম্ভাবনারও একটি তালিকা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কয়েক দফা প্রতিবেদনও জমা দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, নির্বাচনে কোন আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী কেমন হতে পারে তার আগাম ধারণা নেয়ার জন্য এ জরিপ চালানো হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় আসনগুলোতে বিরোধী দলের প্রার্থীর অবস্থা বিবেচনা করে দলীয় প্রার্থী বাছাই থেকে শুরম্ন করে নির্বাচনের সকল কৌশল-পরিকল্পনা ঠিক করা হবে। এ জন্য প্রয়োজনমতো বর্তমান দলীয় সাংসদ অথবা নতুন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, বিএনপির যেসব প্রার্থীর অবস্থান শক্ত তাদের মাঠে নামতে দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। এসব প্রার্থীর নামে দায়েরকৃত মামলাগুলো সচল করে নির্বাচনে তাদের ব্যস্ত্ম রাখার পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে যেসব নেতা ভালো ভূমিকা পালন করতে পারে। তাদেরও বিভিন্ন ভাবে ব্যস্ত্ম রাখা হবে।
আওয়ামী লীগের মতে, যারা নির্বাচনে সহিংসতা, অরাজকতা করতে পারে এমন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল নির্বাচনের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এদিকে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য সব প্রার্থীকেই নির্বাচনী এলাকায় কাজ করে যেতে বলেছেন দলের হাইকমান্ড। তাদের দলের নীতি এবং নৌকার জন্য ভোট চাইতে বলা হয়েছে। পরে দলপ্রধান যাকে যে আসনে মনোনয়ন দেবেন সবাইকে তা মেনে নেয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলের বিরম্নদ্ধে কেউ যাতে বিদ্রোহী প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে আগেভাগেই মটিভেশন করা হচ্ছে।
৩০০ আসনে জয়ের টার্গেট নিয়ে আওয়ামী লীগ মাঠে নামলেও সব আসনে যে জয় সম্ভব নয় সেটা তারা জানেন। তাই ২৩০টি আসনে জয় নিশ্চিত করতে চায় শাসকদলের। এজন্য সৎ, দক্ষ, ত্যাগী ও স্বচ্ছতায় আগেভাগেই প্রার্থী বাছাইয়ে গুরম্নত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা।
এ বিষয়ে দলের নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, যারা অসৎ, দূর্নীতিবাজ, স্বজনপ্রীতি করেছেন, এলকার মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন, জনবিচ্ছিন্ন তাদের দলের মনোনয়ন দেয়া হবে না। নৌকার জয় এনে দিতে পারবেন এমন প্রার্থী বাছাই করা হবে।
সূত্র জানায়, নৌকার জয় এনে দেয়ার জন্য যদি পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রার্থী না পাওয়া যায় তাহলে জয়ের জন্য বিতর্কিত কোনো কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। যেমন কক্সবাজার-৪ আসনের সাংসদ আব্দুর রহমান বদিকে নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে নানা সমালোচনা থাকলেও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলে আব্দুর রহমান বদির বিকল্প নেই।
এ ছাড়া গত বুধবার হোটেলর্ যাডিসনে একদল ভারতীয় সাংবাদিকের সঙ্গে আলোচনায় ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও আসন জয়ের জন্যই ১৯৯৬ সালে সাবের হোসেন চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছিল তার দল। একই কারণে তৎকালীন যুবদল নেতা হাজী সেলিমকেও নৌকার প্রার্থী করা হয়।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক যায়যায়দিনকে বলেন, নির্বাচন অনেক বড় একটি বিষয়। জয়ের জন্য নানা সমীকরণ হিসেব করেই প্রার্থী বাছাই করা হয়। যেমন- আওয়ামী লীগের বিপক্ষের প্রার্থী বিরাট ব্যবসায়ী। তার তুলনায় দলের প্রার্থীর তেমন অর্থ-সম্পদ নেই। জরিপ করে দেখা গেল, বড় ব্যবসায়ীর বিপক্ষে দলের প্রার্থীর জয়লাভের সম্ভাবনা নেই। সেক্ষেত্রে দল বিকল্প চিন্ত্মা করবে। পরীক্ষিত ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে অনেক সময় বিপরীত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই করার মতো একজন ব্যবসায়ীকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। বিষয়টি স্বাভাবিক। কারণ দল ক্ষমতায় যেতে পারলে সবাই ভালো থাকবে ত্যাগী নেতাকেও মূল্যালয়ন করা যাবে।
সূত্র জানায়, বিএনপির প্রার্থীদের পাঁচটি ক্যাটাগরিতে তালিকা করে নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল সাজানো হবে। এসব হলো, নিশ্চিত বিজয়, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর চাইতে সামান্য সম্ভাবনা বেশি এবং কম, মাঝামাঝি অবস্থান এবং নিশ্চিত পরাজয়। এর মধ্যে মাঝের তিনটি ক্যাটাগরিকে নির্বাচনে সর্বাধিক গুরম্নত্ব দেবে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।
জরিপের সঙ্গে জড়িত একজন নেতা জানান, বিএনপির অনেক নেতাই ঘাপটি মেরে আছেন নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য কিন্তু পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় কেউ মাঠে নামছেন না। এর মধ্যে অনেক ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা গোপনে গোপনে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। যদি মামলার কারণে দলের নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন তাহলে তারা প্রার্থী হবেন।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতি ঘোলাটে থাকায় আওয়ামী লীগবিরোধীরা এখন প্রকাশ্যে কথা বলেন না। বরং অনেকেই আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। এ কারণে নৌকার সমর্থন বেড়েছে না কমেছে সে হিসেব বের করতে কষ্ট হচ্ছে। আসল হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না।
এছাড়া অনেক এলাকায় দলের সাংসদ ও নেতাদের অতি বাড়াবাড়িতে আওয়ামী লীগের ঘোর সমর্থকরাও বিরোধী মনোভাবাপন্ন হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরম্নলস্নাহ যায়যায়দিনকে বলেন, আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পাশাপাশি অন্য দলের প্রার্থীদের কর্মকা-ও পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। বিরোধী দলের প্রার্থীদের বিবেচনায় রেখেই দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা তৃণমূলে কাজের দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন।
আরেক সভাপতিম-লীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারম্নক খান যায়যায়দিনকে বলেন, এবারের নির্বাচন গতবারের মতো হবে না। বিপক্ষ প্রার্থীর অবস্থান বিবেচনা করে পরিকল্পনা, কৌশল ও কাজের গতি নির্ভর করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রার্থী মনোনয়নেও কিছু হেরফের হতে পারে। সে জন্য আগে থেকেই নির্বাচনের প্রত্যেকটি সমীকরণ হিসাব করেই তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং প্রার্থীদেরও প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। যায়যায়দিন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন