বেগম খালেদা আজ হাইকোর্টে জামিন পাবেন এটা অনুমিত ছিল। জামিন পেলেও তিনি মুক্তি পাবেন কিনা এ নিয়ে সংশয় ছিল। শেষ পর্যন্ত অনুমান এবং সংশয় দুটিই সত্যি হলো। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ বেগম জিয়াকে চার মাসের জামিন দিয়েছে। কিন্তু জামিন পাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই কুমিল্লার গাড়ি পোঁড়ানোর মামলায় বেগম জিয়াকে ‘শ্যোন অ্যারেস্ট’ দেখানো হয়েছে। তাই পরিস্কার হয়ে গেলো যে, রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া বেগম জিয়ার মুক্তি এখন সুদূর পরাহত।
বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে আলাপকালে স্বীকার করেছেন যে, ‘আইনি লড়াইয়ে বেগম জিয়ার মুক্তি অসম্ভব।’ তাঁর মতে, ‘সমঝোতা এবং আন্দোলন- এই দুই পথের যেকোনো একটিতেই বেগম জিয়া মুক্তি পেতে পারেন। কিন্তু আন্দোলন করে বিএনপি চেয়ারপারসনকে মুক্ত করার কোনো সম্ভাবনা নেই। একমাত্র সমঝোতার মাধ্যমেই তিনি মুক্তি পেতে পারেন’ রাজনৈতিক সমঝোতা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত বেগম জিয়াকে জেলেই থাকতে হবে।
বিভিন্ন সূত্রের খবরে জানা গেছে, বেগম জিয়া কারান্তরীণ হবার পরই সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সমঝোতার প্রস্তাব আসে বেগম খালেদা জিয়ার আত্মীয়দের পক্ষ থেকে। বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন। বৈঠকের একপর্যায়ে বেগম জিয়ার একান্ত সচিব এবং বিএনপির মহাসচিবও বৈঠকে অংশ নেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে বেগম জিয়ার আত্মীয় এবং নেতাদের অন্তত পাঁচটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকেই পাঁচ দফা সমঝোতার একটি খসড়া তৈরি হয়। এই খসড়া নিয়ে ৭ মার্চ বিকেলে বেগম জিয়ার সঙ্গে কথা বলতে কারাগারে যান বিএনপির ৮ নেতা। বেগম জিয়া ৫ দফা সমঝোতা প্রস্তাবের দ্বিতীয় দফায় একটি সংশোধনী দেন। দ্বিতীয় দফায় ছিল বেগম জিয়া, তারেক জিয়া এবং জিয়া পরিবারের কোনো সদস্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। বেগম জিয়ার অবস্থান হলো, জামিন পেয়ে তিনি বিদেশে যাবেন। আদালত যদি তাঁকে অযোগ্য না করে সেক্ষেত্রে বিদেশ থেকেই তিনি নির্বাচন করবেন। বেগম জিয়ার এই মনোভাব, শামীম ইস্কান্দর সরকারের প্রতিনিধিদের জানান । কিন্তু সরকার বেগম জিয়ার এই প্রস্তাবে রাজি নয়। সরকারের অবস্থান স্পষ্ট, বেগম জিয়া জামিন পেয়ে বিদেশ যাবেন এবং নির্বাচন পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করবেন। তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না এবং রাজনীতি বিষয়ে কোনো বক্তব্য, বিবৃতি দেবেন না। এনিয়ে বেগম জিয়ার সঙ্গে সরকারের এখনো কোনো সমঝোতা হয়নি ।
সমঝোতার পথে দ্বিতীয় অন্তরায় হলো, মুক্তির পর বেগম জিয়ার গন্তব্য। প্রাথমিকভাবে এটা ধরেই নেওয়া হয়েছিল যে মুক্তি পায় বেগম জিয়া লন্ডনে যাবেন। কিন্তু পুরো সমঝোতা প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন বেগম জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া। তারেক জিয়া সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় না গিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের অবস্থানে অবস্থানে অনড় থাকবেন। এই প্রেক্ষিতেই বেগম জিয়ার আত্মীয়রা সৌদি আরবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স সালমান বেগম জিয়াকে ‘আজীবন মেহমান’ হিসেবে সৌদি আরবে আতিথ্য দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ‘সৌদি আরবে যাওয়ার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হয়নি। এজন্য বেগম জিয়ার মুক্তিও ঝুলে আছে। ‘ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শেষ পর্যন্ত হয়তো বেগম জিয়ার আত্মীয়রা নির্বাচন না করার শর্তটি মেনে নেবে। বেগম জিয়ার সঙ্গে পাঁচ দফা সমঝোতা প্রস্তাবের খসড়াটি এরকম:
১. জিয়া অরফানেজ মামলায় বেগম জিয়া হাইকোর্ট থেকে জামিন পাবেন । হাইকোর্টের জামিনের পর তাঁকে অন্য কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে না । জামিন পেয়ে তিনি বেরুবেন এবং চিকিৎসার কারণে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য লন্ডনে যাবেন।
২. বিএনপির নেতৃত্বে থাকলেও বেগম জিয়া বা তারেক জিয়া আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন না।
৩. বিএনপি জিয়া পরিবার ছাড়া একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। দলের নেতৃত্ব দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নির্বাচন হবে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ।
৪. নির্বাচনের আগে আটক বিএনপির নেতা কর্মীদের ছেড়ে দেওয়া হবে। দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো আপাতত: বন্ধ থাকবে। নতুন কোনো মামলা বা হয়রানি করা হবে না।
৫. নির্বাচনের পর বেগম জিয়া দেশে ফিরবেন। তাঁর ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলেও পর্যাপ্ত সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া হবে।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
r koto miththa news debey ei INSIDER. Begum Zia will stay in jail rather accepting this kind of proposal.
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন