গত ৬ মার্চ প্রেসক্লাবের সামনে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে পূর্বঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন শেষে ফেরার পথে ছাত্রদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি জাকির হোসেন মিলনকে গ্রেফতার করে রমনা থানার পুলিশ। এর পর তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হলে গতকাল সোমবার মৃত্যু হয় মিলনের। এর পরই বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, রিমান্ডের নামে নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে মিলনকে হত্যা করা হয়েছে।
এর একদিন পর মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) জাকির হোসেন মিলনের নামাজে জানাযায় যোগ দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সেখানেই সরকারের নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে মিলনের মৃত্যুতে অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠেছেন নেতৃদ্বয়। বক্তব্য দিতে গিয়েও বারবার কণ্ঠ ভারি হয়ে আসতে দেখা যায়।
এদিন বাদ জোহর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেনের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
এর পর তার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত মির্জা ফখরুল সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দুঃশাসন থেকে জাতিকে মুক্তি দিন। আমাদের সন্তান ও আগামী প্রজন্মকে মুক্তি দিন। গণতন্ত্রকে মুক্তি দিন।’
কথাগুলো বলতে বলতে মির্জা ফখরুলের চোখের পাতা ভিজে ওঠে। বলেন, ‘সারা দেশ আজ বিচারবহির্ভূত হত্যা-গুম-খুনের বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। তবে মিলনের শাহাদাতবরণ আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের পথ দেখিয়ে দিয়েছে। সেই পথেই আমাদের বিজয় অর্জিত হবে।’
ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন মিলন পুলিশি নির্যাতনে ‘শহীদ’ হয়েছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘মিলন শহীদ হলো, শহীদের তালিকায় আরেকটি নাম যোগ হলো। বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করছে তাদের মধ্যে শহীদ ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন মিলন অন্যতম। আমরা তাকে স্যালুট জানাই। স্যালুট মিলন। তার এই অকাল চলে যাওয়া আমাদেরকে আরও শক্তি যুগিয়েছে এবং দলকে আরও ঐক্যবদ্ধ করেছে।’
এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অশ্রুসিক্ত হয়ে বলেন, ‘দেশের মানুষ দেখছে কি জন্যে কি অপরাধ ছিল বেগম জিয়ার। দেশনেত্রীকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। আমরা তার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। সেখান থেকেও ছো মেরে চিলের মত শকুনের মতো একটি সুস্থ ছেলেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হল। আর জীবিত পাওয়া গেলো না। আমরা কোন দেশে বসবাস করছি?’
আমাদের সে সমস্ত নেতাকর্মীদেরকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের অপরাধ কী? এমন প্রশ্ন রেখে ঢাকার সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘আমি তো বুঝতে পারি না এই বাংলাদেশে কি আমাদের অবস্থান রোহিঙ্গাদের চেয়ে খারাপ হয়ে গেল নাকি? যখন যাকে খুশি ধরে নিয়ে যাবে, মেরে ফেলবে। হাইকোর্টের নির্দেশ আছে সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। অথচ সেই নির্দেশ অমান্য করে আজকে তারা সরকারের পেটোয়া বাহিনী হিসেবে কাজ করছে।’
জানাজার নামাজে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মোহাম্মদ শাহজাহান, আহমেদ আযম খান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আতাউর রহমান ঢালী, আকুল খায়ের ভুইয়া, জয়নুল আবদীন ফারুক, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, হারুনুর রশিদ, এমরান সালের প্রিন্স, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, শামীমুর রহমান শামীম, আব্দুল আউয়াল খান, তাইফুল ইসলাম টিপু , বেলাল আহমেদ, রফিক সিকদার, আমিনুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, বিল্লাল হোসেন তারেক, ছাত্রদলের মামুনুর রশিদ মামুন, আসাদুজ্জামান আসাদ, এজমল হোসেন পাইলট, আলমগীর হাসান সোহান, ইখতিয়ার রহমান কবির, জহিরুল ইসলাম বিপ্লব, সাজ্জাদ হোসেন রুবেল, মিনহাজুল ইসলাম ভুইয়া, রাজিব আহসান চৌধুরী পাপ্পু ও ঢাকা উত্তর ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাখাওয়াত প্রমুখ অংশ নেন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন