কারাগারে অসুস্থ অবস্থায় ‘মারা যাওয়া’ ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন মিলনকে রিমান্ডের সময় তার হাতের নখের অর্ধেক অংশ তুলে নেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়াও তাকে ব্যাপক মারধরও করা হয়েছিল, যার কারণে পরবর্তীতে তার মৃত্যু হয়েছে।
১৩ মার্চ, মঙ্গলবার বিকেলে তার লাশ দাফনের পর সন্ধ্যায় প্রিয়.কমের কাছে এমন অভিযোগ করেন তার স্বজনরা।
মিলনের চাচা বিএম অলিউল্লাহ প্রিয়.কমকে বলেন, ‘ওর হাতের নখগুলা অর্ধেক আছিল। কুকুরে কামড় দিলে যেমন হয় আরকি। কুকুরে অর্ধেক খায় আর অর্ধেক থাকে, সে রকম আছিল তার হাতের নখগুলা।’
মিলনের পুরো শরীরের মধ্যে কোমরে, গলায় ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে জানান তিনি।
ময়নাতদন্তের পর জাকির হোসেন মিলনের চেহারাটাও ভালো করে তার চাচাকে দেখতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘ওরে (মিলনকে) তো হিট কইরা মাইরা ফ্যালছে। শরীর থাইক্যা তো রক্ত বের করতে পারে নাই। রক্তগুলা তার শরীরের ভেতরেই ছিল। ওরে যখন লাশ ঘর থাইক্যা বের করলো তখন বহন করা ট্রেতে প্রায় ১৫ কেজির মতো রক্ত আছিল।’
এমন ঘটনায় পরিবার মামলা করবে কি না জানতে চাইলে তার চাচা অলিউল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই আমরা মামলা করবো। বিএনপির মহাসচিবসহ নেতাদের সাথে আমার কথা হয়েছে। আগামীকাল আমরা বসবো। সেখানে অন্যান্য নেতারাও থাকবো। তাদের সাথে বইস্যা সিদ্ধান্ত নিমু।’
এর আগে মিলনকে শারীরিকভাবে যে নির্যাতন করা হয়েছিল তার কথা তিনি চাচা বিএম ওলিউল্লাকে কথার ইঙ্গিতে বুঝিয়েছিলেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দাবি, তিনি আঘাতের চিহ্ন দেখেননি। পরিবারের দাবি, নির্যাতন করা হয়েছিল। ছবি: প্রিয়.কমনির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দাবি, তিনি আঘাতের চিহ্ন দেখেননি। পরিবারের দাবি, নির্যাতন করা হয়েছিল। ছবি: প্রিয়.কম
গত ১২ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সামনে জাকিরের চাচা বিএম ওলিউল্লাহ প্রিয়.কমকে জানিয়েছিলেন, গত ১১ মার্চ আদালতে তোলার পর কারাগারে পাঠানোর সময় জাকিরের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। তখন জাকিরের চাচা তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন তাকে কোনো ধরনের টর্চারিং করা হয়েছে কি না। তখন মিলন মুখে কোনো কথা উচ্চারণ করেননি। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘কাকা শরীলটা ভালা না, মনে হয় বাঁচুম না, আমার জন্য দোয়া কইরেন।’ আর চাচা-ভাতিজার এই পুরো কথোপকথন হয়েছিল তাকে কারাগারে নেওয়া প্রিজন ভ্যান কারাগারের দিকে ছুটে যাওয়ার সময়।
জাকিরকে পুলিশ আটকের পর স্বজনরা ভেবেছিলেন, গত ৫ ডিসেম্বর সচিবালয়ের প্রথম গেটের সামনে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় তাকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু তারা পরে জানতে পারেন, জাতীয় প্রেসক্লাবে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ায় তাকে ৬ মার্চের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
মিলনের চাচাতো ভাই মাসুম বলেন, ‘ওর কোমর, পেটের দু’পাশের নিচে ও গলায় আঘাতের চিহ্ন আছিল।’
মিলনের আইনজীবী মেহেদী হাসান নয়ন তার বন্ধুর বরাত দিয়ে প্রিয়.কমকে বলেন, ‘আমার বন্ধুরে ফোন দিছিলাম, সে জানাইলো, মিলনের হাতে-পায়ের নখ নাকি কালো ছিল। দেখে মনে হয় হাতুড়ি দিয়া মারছিল।’
তিনি জানান, মিলনকে ৬ মার্চ আটক করে রমনা থানা পুলিশ। এরপর তারা তাকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করলে তারা তাকে পুলিশের কাজে বাধাদানের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পরদিন ৭ মার্চ আদালতে তোলে। আদালত মিলনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ড চলাকালীন তার স্বজনরা শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে গেলে জাকির সেখানে নেই বলে জানায়।
পরে তারা ডিবি কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে তারাও একই কথা বলে। ১১ মার্চ তাকে আদালতে তোলা হলে জামিনের জন্য আবেদন করেন তিনি। কিন্তু আদালত সে আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন