বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিনে অ্যাটর্নি জেনারেল এবং দুদকের আইনজীবীর বিরোধিতার সমালোচনা করেছেন বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান। প্রধানমন্ত্রীর মামলা খারিজের সময় তারা একই রকম তৎপরতা কেন দেখাননি সেই প্রশ্নু তুলেছেন বিরোধী দলটির নেতা।
বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই প্রশান রাখেন। মশিউর রহমান যাদু মিয়ার ৩৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী ‘চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট: কোন পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে এই আলোচনার আয়োজন করে ন্যাপ।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানের বিরোধিতায় খালেদা জিয়ার জামিন আটকে যায়। পরে ১২ মার্চ বিচারিক আদালত থেকে নথি আসলে চার মাসে জামিন দেন বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম এবং সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
১৩ মার্চ এই আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বারর আদালতে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ এবং দুদক। আজ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এই আবেদনের শুনানি হয়। এ সময় দুদকের আইনজীবীদের সময়ের আবেদনে রবিবার পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি প্রশ্ন করতে চাই, অ্যাটর্নি জেনারেল ও দুদকের আইনজীবী কি আওয়ামী লীগের আইনজীবী না রাষ্ট্রের? তাদের বেতন কি আওয়ামী লীগের ফান্ড থেকে হয়, না জনগণের টাকা থেকে হয়? হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির ব্যাপারে চুপ করে বসে থাকেন। আর খালেদা জিয়ার ব্যাপারে লাফ দিয়ে ওঠেন।’
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচটি এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা হয়। পরে এসব মামলা উচ্চ আদালত থেকে খারিজ হয়ে যায়।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘১৫ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির সেই মামলা আজ কোথায়? তা নিয়ে তো দুদক, অ্যাটর্নি জেনারেলকে কোনো তদবির করতে দেখা যায়নি। তাহলে খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে তারা কেন এত দৌড়-ঝাঁপ করছেন?’
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলা রাজনৈতিক বিবেচেনায় প্রত্যাহার করা হয়েছে বলেও জানান নজরুল। এ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের কোনো অবস্থান নেই, সেটিও জানতে চান তিনি।
গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিকে ২০০৯ সালে বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার পর আদালত পাঁচটা মামলা খারিজ করে দেয় বলেও জানান বিএনপি নেতা। বলেন, ‘আজকের দুদকের যিনি আইনজীবী মুহূর্তের মধ্যে আপিল বিভাগ চেম্বার জজের কাছে দৌঁড়ায়ে চলে যান, সেদিন তারা কোথায় ছিলেন।’
‘আরও চারটা মামলা খারিজ হলো ২০০৯ সালে নিয়োগ পাওয়া যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা শামসুদ্দিন চৌধুরীর কোর্টে। তার বিরুদ্ধে না অ্যাটর্নি জেনারেল, না দুদকের কোনো আইনজীবী আপিল করতে গেলেন।’
‘আর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যখন মামলা চলে সপ্তাহে ২/৩ দিন তারিখ হয়। সাজা হয়ে গেল, হাইকোর্টে আসলাম। আড়াইটার সময় হাইকোর্টে জামিন হলো, তার এক ঘণ্টার মধ্যে পিপি কুমিল্লার কোর্টে গিয়ে আর একটা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেন। পরের দিন দুদকের আইনজীবী এবং অ্যাটর্নি জেনারেল চেম্বার জজের কাছে আপিল করলেন।’
‘কুমিল্লার যে পিপি তিনি কার নিয়োগপ্রাপ্ত, আইন মন্ত্রণালয়ের না? সেই পিপি যে দরখাস্ত করে ওখান থেকে অর্ডার ইস্যু করিয়ে নিয়ে আসলেন, এটাতে কি সরকারের ইনভলভমেন্ট নাই? অ্যাটর্নি জেনারেল এবং দুদকের আইনজীবীর আচরণ সরকারের ইনভলভমেন্ট না?’।
‘এই সরকার চায় না, খালেদা জিয়া বাইরে থাকুক,জনগণের মধ্যে থাকুক এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। কারণ খালেদা জিয়াকে তারা ভয় পায়।’
এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, বিএনপির অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠাতা যাদু মিয়াকে বিএনপির উচিত যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা। না হলে ইতিহাসের দায় থেকে তারা মুক্তি পাবে না।... চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিজয় অর্জন করতে হলে যাদু মিয়ার প্রদর্শিত পথেই আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে।’
বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়ার সভাপতিত্বে ও মহানগর সদস্য সচিব শহীদুননবী ডাবলুর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন এলডিপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিএনপির সহ-গবেষণা সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদী প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন