বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেছেন, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। রাজনীতিকে ধ্বংস করার জন্য জিয়াউর রহমান টাকার বিনিময়ে নেতাদের কিনে বিএনপি গঠন করেছিল । তিনি জামাত, রাজাকার, আলবদর, মুক্তিযোদ্ধা সবাইকে নিয়ে একটি ককটেল দল বানিয়েছিলেন । সেই জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা করেছেন । দেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছেন । রেডিও টিভিতে মুক্তিযুদ্ধের গল্প প্রচার করতো না। মুক্তিযুদ্ধের অনেক প্রামাণ্যচিত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছিল । জয়বাংলা স্লোগান চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল । তিনি মুক্তিযুদ্ধে বীর প্রতীক, বীরোত্তম খেতাবপ্রাপ্ত ১৩শ’ সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্য করেছিলেন । জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী রাজাকার গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী, আল মুজাহিদীসহ রাজাকারদের পৃষ্ঠপোষকতা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনর্বাসন করেছিলেন।
বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি সকালে জামালপুরের মাদারগঞ্জে বাংলাদেশ তাঁতী লীগের উপজেলা শাখার বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। উপজেলা পরিষদের মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়ামে এ সভার আয়োজন করা হয় । মাদারগঞ্জ উপজেলা শাখা তাঁতী লীগের আহ্বায়ক আনিছুর রহমান শুভর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ বর্ধিত সভায় বক্তব্য রাখেন মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান বেলাল, মাদারগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মির্জা গোলাম কিবরিয়া কবীর, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা পারভীন মুন্নী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জীবন কৃষ্ণ সাহা, সহ সভাপতি রেজাউল করিম, জোরখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম ফরিদ, কড়–ইচূড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বাচ্চু, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু, মোশারফ হোসেন বাদল, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. ফরিদ, উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক পুলক পারভেজ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সমীর কুমার প্রমুখ।
প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আসার পর মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্রীয় ভাতা, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনসহ সকল সম্মান ফিরে পেয়েছেন। পাঁচ বছরে তিনি দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেন। কিন্তু ২০০১ সালে আবারও বিএনপি ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে। পাঁচ বছরের জন্য একদিনও আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় আসতে পারিনি। সারা দেশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে কারাগারে বন্দি করে রাখে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে মায়ের সামনে মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। মায়ের কাছ থেকে ছেলেকে কেড়ে নিয়ে হত্যা করেছে। ঘরবাড়ি পুড়িয়েছে। তারা তখন এমন হাজার হাজার ঘটনা ঘটিয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ছিল সারা বিশ্বের কাছে একটি ভিখারির জাতি। বাংলাদেশ ছিল নিম্ম-মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল রাষ্ট্র পরিচালনাতেই বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে চলেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মাত্র দশ বছরে বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ এখন আর দরিদ্রতম দেশ নয়। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। প্রধানমন্ত্রী টার্গেট দিয়েছেন ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত বিশ্বের নাগরিক হবো। উন্নত দেশ ইউরোপ, আমেরিকার মতো দেশের নাগরিকেরা যে সুযোগ সুবিধা পায়, বাংলাদেশের নাগরিকেরাও সেই সুযোগ সুবিধা পাবে। শেখ হাসিনা বিনা রক্তপাতে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে ১ লাখ ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটার সাগর বিজয় করে নিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের মানচিত্রকে তিনি বদলে দিয়েছেন।
৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রসঙ্গে মির্জা আজম এমপি বলেন, মাত্র সতেরো মিনিটের সেই বক্তৃতায় বাংলাদেশ যে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ হবে। এই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য যে একটি মুক্তিযুদ্ধ হবে। সেই মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়ে যে একটি গেরিলা যুদ্ধ হবে, সেই গেরিলা যুদ্ধের সকল নির্দেশনা ছিল। বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ শুনলেই নতুন প্রজন্মের মধ্যে রক্তসঞ্চালন বেড়ে যায়। এই ভাষণ শুনলে মানুষের মধ্যে দেশপ্রেমের সৃষ্টি হয়। রাজাকারদের বিরুদ্ধে মানুষ জেগে উঠে। এজন্যই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই ঐতিহাসিক ভাষণকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেছিলেন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। সেই ভাষণের মধ্যে দিয়েই শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। আজকে জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ ও স্বাস্থ্যখাতে সাফল্যসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি বলেন, বছরের প্রথম দিনে শিশুদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া, ১ কোটি ৩০ লাখ মায়ের ফোনে তাদের সন্তানের উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে দেওয়া, আশ্রয়নপ্রকল্প, বিধবা ভাতা, বয়স্কভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ অন্তত ১০০টি সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প বাস্তবায়নসহ সরকারের নানামুখী উন্নয়ন কর্মকান্ডের চিত্র তুলে ধরেন তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন