বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির কর্মসূচি কমে এসেছে। শুরুর দিকে সপ্তাহে তিন থেকে চারটি কর্মসূচি পালন করলেও গত দুই সপ্তাহে জাতীয়ভাবে কোনা কর্মসূচিই হয়নি।
বিএনপির ধারাবাহিক কর্মসূচি হিসেবে বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেটে সমাবেশ শেষ হয়েছে। তবে গাজীপুর, রংপুর এবং ময়মনসিংহে সমাবেশের দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়নি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শুরুতে কর্মসূচি হয়তো বেশি সাড়া ফেলেছিল। বর্তমানে হয়ত তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু আমরা কর্মসূচিতে আছি। আমরা মনে করি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে চেয়ারপারসনকে মুক্ত করে আনব। অন্যথায় নিশ্চয়ই দল সিদ্ধান্ত নেবে কী করতে হবে।’
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের তারিখ ঘোষণার পর বিএনপির পক্ষ থেকে দেশে আগুন জ্বালানোর হুমকি এসেছিল। তবে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, হঠকারী কর্মসূচি দিতে নিষেধ করেছেন তাদের নেত্রী। এ কারণে তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবেন।
খালেদা জিয়ার দণ্ডের রায় এসেছে বৃহস্পতিবার। আর পরের দুই সপ্তাহে অন্তত সাত দিন নানা কর্মসূচি পালন হয়েছে। আর প্রথম মাসে সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন, অবস্থান, লিফলেট বিতরণ, স্মারকলিপি, গণস্বাক্ষরের মতো কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি।
সব শেষ গত ১ এপ্রিল জাতীয়ভাবে কর্মসূচি পালিত হয়েছে লিফলেট বিতরণ। আর রাজধানীতে ২৯ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি না পাওয়ার পর আর কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি।
দলের নেতারা জানান, জাতীয়ভাবে কী কর্মসূচি দেয়া যায়, তা নিয়ে ভাবছে দলটি।
শুরুর দিকে দলের নেতা-কর্মীরা ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণও করেছে। তবে সব শেষ লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে অল্প সংখ্যক নেতাকর্মী। ইদানীং আলোচনা সভা আর সংবাদ সম্মেলনেই বক্তব্য তুলে ধরছেন নেতারা।
যদিও বিএনপির কর্মসূচি নাই, তারপরও দলের নেতারা ‘বিজয় সন্নিকটে’ বলে বক্তব্য দিয়ে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে চাইছেন।
কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে এরই মধ্যে তিন বছর আগে পেট্রল বোমা হামলায় আট জনকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে কুমিল্লার একটি আদালত, নাকচ হয়েছে তার জামিন আবেদনও।
এই অবস্থায় আদালতের মাধ্যমে জামিনে বিএনপি নেত্রীর মুক্তির জন্য আগামী ৮ মের শুনানির দিকে তাকিয়ে বিএনপি। হাইকোর্ট গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জন্য জামিন দিয়ে যে আদেশ দিয়েছিল এর বিরুদ্ধে আপিলের ওপর শুনানি হবে আগামী মাসের শুরুতে।
এর মধ্যে বিশেষ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ আদালতের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না বক্তব্য দিয়ে আন্দোলনের ওপর জোর দিচ্ছেন।
মির্জা ফখরুল সম্প্রতি এক কর্মসূচিতে দলীয় প্রধানের মুক্তি প্রসঙ্গে বলেন, ‘কার কাছে মুক্তি চাইব? আমরা নেত্রীকে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত করব। তবে আইনও তো নাই। দেশে নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ নাই, আদালত নাই। তাই আমাদের সামনে মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে রাজপথ। রাজপথের আন্দোলন।’
কিন্তু বিএনপির সেই আন্দোলন গড়ে তোলার মতো কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। যদিও কর্মসূচিতে ভাটা বা গতি হারানোর কথা মানতে নারাজ নেতারা। তারা বলছেন, দেশব্যাপী কর্মসূচি পালন করে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করাতে চান। আর সরকার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সাড়া না দিলে তারা কঠোর কর্মসূচির দিকে হাঁটবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন ভাইস ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের সামনে দুই চ্যালেঞ্জ। এক. বেগম খালেদা জিয়াকে আইনগত প্রক্রিয়ায় বা আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করা। দুই. নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন নিশ্চিত করা। আমরা সেই লক্ষ্যে হাঁটছি। এখানে ভাটা পড়ার কিছু দেখি না।’
দলের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠের নেতাকর্মীদের কঠোর কর্মসূচির দাবি আছে। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা আরও কিছুটা সময় নিতে চান।
একে নির্বাচনী বছর, সামনে রমজান, এরপর ঈদ। এমন অবস্থায় কঠোর কর্মসূচি শুরু করে তা চালিয়ে যাওয়া যেমন কঠিন হবে বলেই মনে করছেন নেতারা।
আবার কঠোর আন্দোলনে গেলে শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নতুন করে গ্রেপ্তার ও আতঙ্কও আছে।
বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আন্দোলন তো আমাদের চলছে। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলনে ভাটা পড়েছে এমনটা বলার বা ভাবার কিছু নেই। আমাদের প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতাকর্মীরা আসছে। প্রতিটি বিভাগে সমাবেশ হচ্ছে। নানা প্রতিকূলতার পরও নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছে। জেলা সফরও কেন্দ্রীয় নেতারা শুরু করেছেন।’
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা মানুষকে সম্পৃক্ত করতে এখন বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচি ছড়িয়ে দিচ্ছি। ধীরে ধীরে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি। এক পর্যায়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে চূড়ান্ত মুক্তি আন্দোলনে নামব।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় একজন প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সামনে রমজান, ঈদ উৎসব আছে। এটাও ভাবতে হচ্ছে। আমরা একটা ম্যাচিউরট সময়ের অপেক্ষা করছি। সময় হলে অবশ্যই কর্মসূচিতে যাব। সরকার কর্ণপাত না করলে অবরোধ, ধর্মঘটসহ যা লাগবে দল তাই করবে।’
শরিকরা বিএনপিকে নিয়ে হতাশ
বিএনপির শরিকদের কেউ কেউ মনে করেন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে তাদের কাজে লাগাতে পারেনি বিএনপি। জোটের সঙ্গে বৈঠক করলেও নিজেদের মত করেই চলছে।
একটি দলের মহাসচিব বলেন, ‘মুক্তির আন্দোলন আছে নাকি? শুরুতে যাও ছিল এখন তো তেমন কিছু নেই। বিএনপির বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করছে অথচ শরিকদের সেইভাবে দাওয়াতও দিচ্ছে না।’
‘বিএনপির কর্মসূচিতে শরিকরা অংশ নিয়েছে। কিন্তু জোটগতভাবে একটা ব্যানারে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। এর কারণ দলটির ২০ দলকে কার্যকর করতে পারেনি।’
গত ৩ এপ্রিল ২০ দলের শরিক এলডিপির এক অনুষ্ঠানে এই দলটির নেতারা ছাড়াও কল্যাণ পার্টি এবং ন্যাপ নেতারা খোলাখুলিভাবেই বিএনপির সমালোচনা করেন। বিএনপি তাদেরকে যোগ্য সম্মান দিচ্ছে না অভিযোগ করে জাতীয় নির্বাচনে আলাদা প্রার্থী দেয়ার কথাও বলেন এলডিপি নেতা শাহাদাত হোসেন সেলিম।
একই অনুষ্ঠা ছিলেন এলডিপি সভাপতি অলি আহমেদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহীম। তাদের কণ্ঠেও বিএনপির প্রতি ছিল ক্ষোভ
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন