গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জামায়াত ইসলামী মনোনীত মেয়রপ্রার্থী অধ্যক্ষ সানাউল্লাহ। তবে ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াত বিএনপি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী আব্দুল মান্নানকে সমর্থনের পাশাপাশি নির্বাচনের মাঠে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছিল। এবারের নির্বাচনে চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। গত ১৫ এপ্রিল স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী হিসেবে গাজীপুর মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ সানাউল্লাহর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল।
অধ্যক্ষ সানাউল্লাহ জানান, বিগত দিনে দেশের সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছে। জাতীয় সংসদেও জামায়াত সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। জামায়াতের নিবন্ধন প্রক্রিয়া বাতিল হওয়া দলীয় প্রতীক ও পরিচয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। তবে দলের স্বার্থে ও দলকে আরো সুসংগঠিত করতে কেন্দ্রীয় জামায়াত নেতৃবৃন্দ তাকে সমর্থন দিয়েছেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মানুষ পরিবর্তন চায়। বিশ দলীয় জোটও পরিবর্তন চায়। তাকে বিশ দলীয় জোটের মেয়রপ্রার্থী হিসেবে সমর্থনের জন্য জোটের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আলোচনা করবেন। তিনি প্রত্যাশা করছেন বিশ দলীয় জোট তাকে সমর্থন দেবে। এছাড়া বিশ দলীয় জোট শুধুমাত্র জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে বলেও তিনি মনে করছেন।
গাজীপুর জেলা ও মহানগর জামায়াতের একাধিক নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছে, বর্তমান মেয়র আবদুল মান্নান ও বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের বিভাজন দীর্ঘদিনের। এই দু’জন নেতার আলাদা দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থক রয়েছে। তাদের ঐক্যবন্ধ করে এক কাতারে দাঁড় করানো কঠিন ব্যাপার। সেক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে গাজীপুর মহানগর জামায়াত আরো সুসংগঠিত হয়েছে। মহানগরে নেতা (রোকন) বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মী-সমর্থক বেড়েছে। জামায়াতে অভ্যন্তরীণ কোন কোন্দল নেই বলেও তারা দাবি করেন।
জামায়াত নেতার প্রার্থীতা নিয়ে গাজীপুর মহানগর তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে। তারা অভিযোগ করে বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও বিএনপির মহানগর কমিটি গঠিত হয়নি। সিটি করপোরেশন মেয়র আব্দুল মান্নান ৩০ মামলায় ২২ মাস কারাগারে ছিলেন। ২০১৬ সালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহের মৃত্যুর পর গাজীপুর মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে। নগরী বিএনপির কিছু নেতাকর্মী ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। অপরদিকে, ঝড়-ঝাপ্টার পরও জামায়াত তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। তাদের মহানগর কমিটি গঠিত হয়েছে। নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী হিসেবে মহানগর জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ সানাউল্লাহ থাকলে বিএনপির ভোট ব্যাংকে এর বড় প্রভাব পড়বে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিশ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাবে। সেজন্য ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শিগগিরই আলোচনা হবে। এসব বিভাজন সাময়িক। এতে দলীয় নেতাকর্মীদের দুশ্চিতার কিছুই নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক ড.খন্দকার মোশারফ হোসেন জানান, ‘স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী হিসেবে জামায়াত নেতার প্রার্থীতা নিয়ে বিশ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা হবে। তবে এ আলোচনা কবে হবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি।’ পরিবর্তন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন