বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব এবং যুক্তরাজ্যে ৮ দিনের সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। সৌদি আরবে একদিন এবং কমনওয়েলথ সম্মেলন ছাপিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সফরের মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল এখন দিল্লিতে। আজ এই প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। বিএনপির রাজনীতি এখন পরিচালিত হচ্ছে লন্ডন থেকেই। বিএনপির নেতারাই বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস এখন লন্ডনে, সেখান থেকেই সব সিদ্ধান্ত হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির নেতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এক ‘রহস্যময়’ সফরে ৫ দিনের জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন। সেখানে আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে তাঁর কথা হবে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতি এখন আর বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশে এখন রাজনীতি বলতে খুলনা এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন, ঘরোয়া বৈঠকে আওয়ামী লীগ বিএনপির বাহাস ব্যস এতটুকুই। রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো ঘটছে বিদেশে।
প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাজ্য সফরে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। প্রথম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ। এই সাক্ষাতে মোদি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দরকার বলে স্পষ্টত: আওয়ামী লীগের প্রতি তাঁর সমর্থন জানিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে ভারতের সমর্থন আওয়ামী লীগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য সফরের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি হলো তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে ব্রিটিশ সরকারের কাছে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ‘দণ্ডিত ও পলাতক অপরাধী’ তারেক জিয়াকে ফেরত চেয়েছে। গত এক সপ্তাহে লন্ডনে তারেক জিয়ার নামে যা ঘটেছে, তাতে তাঁর লন্ডন থাকা আর বেশি দিন হবে না বলেই ধারণা করা যায়।
প্রধানমন্ত্রী যখন দেশে ফিরলেন তখন তাঁর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দিল্লীতে। বিজেপির আমন্ত্রণে কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বিজেপির সঙ্গে গড়ে ওঠা সখ্য আরও মজবুত করতে গেছেন। ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক কংগ্রেসের। ২০১৪’র প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন সম্ভব হয়েছিল ভারতে সেসময় ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেস সরকারের জন্য। বিজেপি ক্ষমতায় এসেও আওয়ামী লীগকেই আস্থায় নিয়েছে। যদিও দিল্লি যাত্রার আগে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা এই সফরে হবে না। আলোচনা হোক না হোক কংগ্রেসের মতোই বিজেপিও আওয়ামী লীগে আস্থাশীল- এটুক বার্তাই আওয়ামী লীগের জন্য যথেষ্ট। শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় তাহলে ‘গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচনের প্রত্যয়নপত্রের জন্য ভারত গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে দাঁড়াবে।
লন্ডন থেকেই দীর্ঘদিন বিএনপি পরিচালিত হচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সঙ্গে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতদের সন্তানরা একাট্টা হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার আর চক্রান্ত করছে। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রী লন্ডনকে তাঁর নিশানা বানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পেরেছেন, লন্ডনে যদি বিএনপিকে তছনছ করা যায়, তাহলে দেশেও বিএনপি রক্তশূন্য হয়ে যাবে। আর বিএনপি মনে করছে, শেষপর্যন্ত যদি তারেক লন্ডনে থাকতে পারে, তাহলে নির্বাচনের আগে ‘কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলবে।’
এর মধ্যে এরশাদ ‘সুযোগসন্ধানী’ ভূমিকা অব্যাহত রেখেছেন। ৭০ আসনে দাবি তুলে নিজের দলকে নিলামে তুলেছেন। সিঙ্গাপুরে হয়তো এরশাদ তাঁর দর বাড়াবেন, কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ভারতের ইশারায়।
একসময় দাতা দেশগুলো বাংলাদেশের রাজনীতির গতি প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করতো। এখন আর সেই দিন নাই। কিন্তু আমাদের রাজনীতির বিদেশমুখিতা কমেনি। বরং দেশের রাজনীতিবিদরা বিদেশে গিয়েই রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করছেন। আর দেশে কিছু লাউড স্পিকার গণমাধ্যমের জন্য কিছু কথাবার্তা বলছে।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন