তারেক রহমানের যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক লাভের কথা ফাঁস হয়ে যাওয়া এবং তার পাসপোর্ট সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার বিএনপির কান্নার দশা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ওবায়দুল কাদের।
বিখ্যাত একটি লোকগীতির সঙ্গে মিলিয়ে বিএনপিকে কটাক্ষ করে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে! বিএনপি এখন পরিপূর্ণ মিথ্যাবাদী দলে পরিণত হয়েছে।’
২২ থেকে ২৪ এপ্রিল ভারত সফরের বিষয়ে জানাতে বৃহস্পতিবার বিকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্ালয়ে করা সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন কাদের।
গত ২১ এপ্রিল যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া এক সংবর্ধনায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, সে দেশে অবস্থানরত তারেক রহমান বাংলাদেশি পাসপোর্ট বর্জন করেছেন।
দুই দিন পর এই কথা অস্বীকার করে বিএনপির পক্ষ থেকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, তারেক রহমান পাসপোর্ট জমা দিলে তা যেন তিনি প্রদর্শন করেন।
ওই দিনই দেশে ফিরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তারেক রহমানের পাসপোর্ট জমা দেয়ার নথি প্রদর্শন করে জানান, ২০১৪ সালের ২ জুন যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই পাসপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে। আর পরে তা লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাঠানো হয়েছে।
এরপর বিএনপি প্রথমবারের মতো স্বীকার করে ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা তারেক রহমান সে দেশের রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। আর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করার জন্য তারেক রহমান তার পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন।
তবে বিএনপি এখন পাসপোর্ট জমা দেয়ার বিতর্কটি অন্য জায়গায় নিয়ে গেছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, পাসপোর্ট জমা দেয়ার অর্থ তারেক রহমান নিজেকে আর বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করতে চাইছেন না। অর্থাৎ তিনি নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন।
বিএনপি এই ব্যাখ্যা মেনে নিতে রাজি নয়। মির্জা ফখরুল বলেছেন, তারেকের নাগরিকত্ব নিয়ে এই ব্যাখ্যা ‘অদ্ভুত, যুক্তিহীন ও বেআইনি’।
নাগরিকত্ব পরিত্যাগের আইন অনুযায়ী, নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হয় এবং পরে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। তারেক রহমান এমন কোনো আবেদন করেছেন বলে জানায়নি সরকার।
আর মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘কী কী কারণে একজন নাগরিক জন্মসূত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব হারাতে পারেন এটাও যিনি জানেন না, তেমন একজন ব্যক্তির শুধু এ ধরনের অনির্বাচিত সরকারের মন্ত্রী থাকা সম্ভব এবং তা জাতির জন্য লজ্জাজনক।’
অবশ্য বিএনপি নেতার এই বক্তব্যের পর তারেক রহমান জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ্য করে তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘তারেকের জন্ম করাচি (পাকিস্তানের একটি শহর)। জন্ম নিয়েও চোরামি।’
ওবায়দুল কাদের দেশে ফেরার দুই দিনে এই প্রথম ইস্যুটি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি (তারেক রহমানের) পাসপোর্ট নিয়ে যা করছে! সকাল একটা বলছে একটা বিকালে বলছে একটা।’
‘খাদের কিনারায় এসে তারা (বিএনপি) লাফালাফি করছে। চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়ে এখন রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছে। এখন সেটা ফাঁস হয়ে গেছে। এখন ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে!’
‘মির্জা ফখরুল চিকিৎসক কি না জানতে চাই’
কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং তার এমআরআই করা দরকার-এমন দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল। আর বিএনপি মহাসচিব কোন জ্ঞানে এসব কথা বলছেন, সেটা জানতে চেয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কি না জানতে চাই। বেগম খালেদা জিয়া কতটুকু অসুস্থতা কিছুদিন আগেই মানুষ দেখেছে। এরপরও যদি জেলহাজতে ভেতরে উনি অসুস্থ হন তাহলে তার যতটুকু করা দরকার আমরা সবকিছু ব্যবস্থা করব।’
‘কেউ চিকিৎসার অভাবে মারা যাক, সেটা শেখ হাসিনার সরকার চায় না।’
‘গাজীপুর, খুলনায় অন্য এলাকার লোক যাবে না’
আগামী ১৫ মে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারে ওই দুই মহানগরের বাসিন্দা নন, এমন কেউ ভোটের প্রচারে যাবেন না বলেও জানান কাদের।
‘আমরা গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছি। এখানে আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, এই দুই এলাকার যারা ঢাকায় আছেন তারাই শুধু নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নেবেন। অন্য এলাকার কোন লোক ওই সব এলাকায় যাবেন না।’
এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ জানিয়ে কাদের বলেন, ‘যেন কোনো প্রকারে আচরণবিধি লঙ্ঘন না হয়। এছাড়া যেন ওইসব এলাকার জনমনে কোন বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়।’
‘গাজীপুর এবং খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও নির্বাচন কমিশনার স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করবে। এখন সরকার যা যা করা দরকার তাই করবে। নির্বাচন কমিশনারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরলেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের ‘নির্বাচন পরিচালনা কমিটি’র বৈঠক হবে বলেও জানান কাদের। বলেন, ‘তখন তাদের দায়িত্ব বন্টন করে দেয়া হবে।’
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন