গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে হারাতে ২০১৩ সালে সমর্থন পাওয়া আজমতউল্লাহ খান উঠেপড়ে লেগেছেন বলে তথ্য পেয়েছে আওয়ামী লীগ। আর এ জন্য টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়রকে সতর্ক করেছেন ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সভায় এই তথ্যটি জানানো হয় বলে উপস্থিত নেতারা ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন।
২০১৩ সালের মেয়র নির্বাচনে আজমত উল্লাহ খানকে আওয়ামী লীগ সমর্থন জানালে জাহাঙ্গীর আলম বিদ্রোহী প্রার্থী হন। পরে হঠাৎ তিনি উধাও হয়ে যান এবং একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাকে পাওয়া যায়।
জাহাঙ্গীর আলম হাসপাতাল থেকে ফিরে কাঁদতে কাঁদতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে যাওয়ায় ব্যালট পেপারে তার নাম রয়ে যায়। আর আওয়ামী লীগের বিভক্তি তখন ভোটে রয়ে যায় এবং দলের দুর্গ হিসেবে পরিচিত এলাকায় বিএনপির প্রার্থী এম এ মান্নান জিতেন দেড় লাখ ভোটের ব্যবধানে।
এবারও আজমত ও জাহাঙ্গীর দুই জনই ছিলেন মনোনয়ন প্রত্যাশী। কিন্তু আওয়ামী লীগ এবার বেছে নেয় জাহাঙ্গীরকে। আজমত আর মনোনয়নপত্র জমা দেননি আর তাকে জাহাঙ্গীরের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট করা হয়।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কাছে তথ্য আসে আজমত আসলে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। আর এ নিয়ে বুধবার তাকে ফোন করে সতর্ক করে দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফোন করেছেন, বিষয়টি ঢাকাটাইসের কাছে স্বীকারও করেছেন আজমত। তবে তার দাবি, নির্বাচন নিয়ে খোঁজ নিতেই এই কল করা হয়েছে।
আজমত বলেন, ‘হ্যাঁ, ফোন দিয়েছিলেন (কাদের) গতকাল। সামগ্রিক নির্বাচনের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন, এ নিয়ে কথা হয়েছে।’
গাজীপুর আওয়ামী লীগে প্রার্থী নিয়ে বিভেদের বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত সব অস্বীকার করে বলেন, ‘এখানে আওয়ামী লীগে আমার এখানে কোনো কোন্দল নেই, আমি কাজ করছি জাহাঙ্গীরের জন্য।’
আজমত স্বীকার না করলেও আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে জানানো হয়, টঙ্গীতে প্রভাবশালী এই নেতাকে ফোন করে এই নির্বাচনে তার ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষের বিষয়টি জানিয়েছেন কাদের। তাকে সতর্ক করে বলা হয়, এটা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকেও জানানো হবে।
২০১৩ সালে আলোচিত পাঁচ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের জন্য যেসব কারণকে দায়ী করা হয়, এর একটি দলীয় কোন্দল। চলতি মাসের শুরুতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে কোন্দল নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, কেউ দলের প্রার্থীর বিরোধিতা করলে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বৈঠকে জানানো হয়, আজমতকে ওবায়দুল কাদের বলেন, সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী পরাজিত হলে শেখ হাসিনার সরকারের অর্জন ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বৃহত্তর স্বার্থে নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ বা রাগ অনুরাগ ভুলে নৌকা প্রতীক নিয়ে কাজ করতে হবে। এর অন্যথা হলে শাস্তি পেতে হবে।
সভায় গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জিততেই হবে-এমন মনোভাব জানিয়ে এর জন্য যার যার অবস্থান থেকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়। ওবায়দুল কাদের নেতাদের বলেন, এই দুই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় ঘটলে শেখ হাসিনার সরকারের অর্জনের সমালোনা হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, গাজীপুরে তাদের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমেরও কিছু ‘ভুলত্রুটি’ রয়েছে। তবে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে সেগুলো পূরণ করা সম্ভব।
আগামী ২৯ এপ্রিল রবিবার দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে গাজীপুরের নেতাদের সঙ্গে বসার দিনও নির্ধারণ করা হয় এই সভায়।
সভায় গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এই দুই শহরের বাসিন্দা নন, এমন কেন্দ্রীয় নেতারা এলাকায় প্রচারণা চালাতে যাবেন না বলেও জানানো হয়।
বৈঠকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন দলের নেতারা পরস্পরের সমালোচনা করছেন জানিয়ে তা বন্ধ করার প্রস্তাব তোলেন। তবে বিষয়টি নিয়ে অন্যরা কথা না বলায় আলোচনা বেশিদুর আগায়নি।
সভায় ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ভারত সফর ফলপ্রসূ হয়েছে মনে করায় তাকে অভিনন্দন জানানো হয়। সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রস্তাবটি তুললে করলে অপর সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সমর্থণ করেন।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন