অবস্থান, মানববন্ধন ও বিক্ষোভের মতো আরও কর্মসূচি দেয়া হবে। এবার এসব কর্মসূচির ধরন কিছুটা ব্যতিক্রম হবে। রাজধানীর গুরম্নত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থানের কর্মসূচি পালনের জন্য অনুমতি চাওয়া হবে। অনুমতি না মিললে নতুন যে স্থানেই অনুমতি মিলবে সেখানেই ব্যাপক লোক সমাগম করে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করবে তারা
অকার্যকর আইনি লড়াই এবং নিস্ত্মেজ রাজপথের আন্দোলনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিতে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ জন্য আন্দোলনের কর্মসূচি আরও বেগবান করার পরিকল্পনা করেছে বিএনপি। এ জন্য চলমান ৭ দিনের কর্মসূচি শেষ হওয়ার পরও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আপাতত হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি না দেয়া হলেও গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনের পর আলোচনায় থাকা তিন সিটি নির্বাচন শেষে এ ধরনের কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি।
গত ৮ ফেব্রম্নয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৫ বছর কারাদ- নিয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তার মুক্তির দাবিতে বিএনপি ঢাকাসহ সারাদেশে শান্ত্মিপূর্ণ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। এর মধ্যে ছিল- বিক্ষোভ, মানববন্ধন, গণঅনশন, গণস্বাক্ষরতা, জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ। এ ছাড়া তারা চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ করছে। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার জন্য ২২ ফেব্রয়ারি থেকে তিন দফায় আবেদন করেও অনুমতি পায়নি বিএনপি। চেয়ারপারসনকে কারাগারে পাঠানোর পর ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি পালন না করে শান্ত্মিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করায় বিভিন্ন মহলের প্রশংসা কুড়ানো সম্ভব হলেও নেত্রীর মুক্তি মেলেনি। বরং একের পর এক মামলায় জামিন বাতিল হয়ে কারাবাস আরও দীর্ঘ হয়েছে। এ জন্য দেশের পাশাপাশি আন্ত্মর্জাতিক মহলেও শক্তির বার্তা দিতে আরও কার্যকর কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মসূচিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত্মে অনড় আছে দলটি।
বিএনপি সূত্র মতে, এখনই হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয়ার ভাবনা না থাকলে এরপরের প্রতিটি কর্মসূচিতে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে চাচ্ছে দলটি। চলমান ৭ দিনের কর্মসূচি শেষ হওয়ার পরও নতুন কর্মসূচিতে পুরো দেশের পাশাপাশি রাজধানীর নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ না থেকে প্রতিটি এলাকায় বড় কর্মসূচি পালন করা হবে। আন্দোলন আরও বেগবান করতে ঢাকা মহানগরের দুটি কমিটি শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ করা হবে।
সূত্রমতে, অবস্থান, মানববন্ধন ও বিক্ষোভের মতো আরও কর্মসূচি দেয়া হবে। আগে এ ধরনের কর্মসূচি দিলেও এবারের ধরন কিছুটা ব্যতিক্রম হবে। রাজধানীর গুরম্নত্বপূর্ণ স্পটে অবস্থানের কর্মসূচি পালনের জন্য অনুমতি চাওয়া হবে। অনুমতি না মিললে নতুন যে স্পটেই অনুমতি মিলবে সেই স্থানেই ব্যাপক লোক সমাগম করে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করবে তারা। মানববন্ধন হবে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া হয়ে রূপসা থেকে পাথুরিয়া পর্যন্ত্ম। তা যদি সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে ঢাকা মহানগরের এক প্রান্ত্ম থেকে অপর প্রান্ত্ম পর্যন্ত্ম মানববন্ধন করবে তারা। এ ছাড়া বিক্ষোভ কর্মসূচির ধরন হবে ব্যতিক্রম। প্রতিটি বিক্ষোভ কর্মসূচিতে লাখো নেতাকর্মী অংশ নেবেন। এ ছাড়া নতুন নামে আরও কার্যকর কোনো কর্মসূচি দেয়া কিনা তা নিয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে। সব মিলিয়ে কর্মসূচি এমন ধরনের করতে চায় যে, শুধু স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমেই নয়, প্রতিটি কর্মসূচি আন্ত্মর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও স্থান পাবে। এসব কর্মসূচিতে দল ও জোটের নেতাকর্মীদের বাইরের সমমনা সব রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে যুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর বাইরের সাধারণ জনগণকেও প্রতিটি কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা হবে।
সূত্র জানায়, পরবর্তী সব কর্মসূচি সফল করতে তিনশ’ আসনের নয়শ’ মনোনয়নপ্রত্যাশীর যে তালিকা করা হয়েছে সেসব তাদের আন্দোলনের কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা হবে। শুধু কেন্দ্রে বসে না থেকে আগামীতে যারা সংসদ নির্বাচন করতে চান তাদের স্থানীয় পর্যায়ে আন্দোলন বেগবান করার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এসব নেতার জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, খালেদা জিয়ার মামলা এবং সাজা সব কিছুই রাজনৈতিক। এ জন্য রাজনৈতিকভাবেই এগুলো মোকাবেলা করা এখন সময়ের দাবি মাত্র। চেয়ারপারসন সব ধরনের কর্মসূচি শান্ত্মিপূর্ণভাবে করার নির্দেশনার কারণে কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যাওয়া হয়নি। এখনো হরতাল অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যেতে চায় না বিএনপির হাইকমান্ড। তবে খুলনা-গাজীপুরের নির্বাচনের পর আরও তিনটি সিটি নির্বাচনের কথা আছে, সেগুলো শেষ হলে জাতীয় নির্বাচনের তফসিলের আগ পর্যন্ত্ম কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি আসবে। তখন হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিও দেয়া হবে। আর সেসব কর্মসূচি হবে টানা। কোনো অবস্থাতেই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত্ম কোনো কর্মসূচিতে বিরতি আসবে না। পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রম্নহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি আন্দোলনের মধ্যে আছে। শান্ত্মিপূর্ণ কর্মসূচিতে থাকাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যদি দুর্বলতা ভাবে তাহলে ভুল করবে। দল আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং হচ্ছে। নেতাকর্মীরা এখন অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। পর্যায়ক্রমে আন্দোলনের কর্মসূচি আরও কঠোর থেকে কঠোরতর হবে। তবে সব কর্মসূচিই হবে গণতান্ত্রিক এবং শান্ত্মিপূর্ণ উপায়ে।
একই বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উলস্নাহ হাসান বলেন, এত প্রতিকূলতার মধ্যেও শান্ত্মিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপির শক্তি সম্পর্কে আঁচ করতে পারছে ক্ষমতাসীনরা। এ জন্য জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হবে না। কোনো পূর্ব ঘোষণা না দেয়ার পরও রাজধানীতে হাজার হাজার মানুষ নিয়ে সোমবার উত্তর বিএনপি বিক্ষোভ করছে। এখন থেকে প্রতিটি কর্মসূচির ধরনই এমন হবে। এ ছাড়া আন্দোলন আরও জোরদার করতে পূর্ণাঙ্গ সিটি কমিটি ঘোষণা দেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। শিগগিরই এ কমিটির ঘোষণা আসতে পারে।
যায়যায়দিন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন