শরীয়তপুরের জাজিরায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বুধবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত জাজিরার বিলাশপুর মুলাই বেপারী কান্দি গ্রামের অন্তত ১০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের ধাওয়ায় জঙ্গল দিয়ে পালানোর সময় সাপের দংশনে আলী আজগর সরদার নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তবে নিহতের পরিবারের দাবি আলী আজগর ভাঙচুর ও লুচপাট করেত যায়নি। সে ভাঙচুর না করার পরামর্শ দিতে গিয়েছিল। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত জাজিরা থানায় কোন মামলা হয়নি।
ক্ষতিগ্রস্থ সোবহান বেপারী, মজিবর বেপারীর স্ত্রী সালেহা বেগম ও জাজিরা থানা সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল কুদ্দস বেপারীর সঙ্গে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান হাজী আবু তাহের সরদার এবং তার সমর্থক জলিল মাবর ও ফারুক হালাদার গ্রুপের সঙ্গে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ চলে আসছে।
গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বর্তমান চেয়ারম্যান হাজী আবু তাহের সরদারের সমর্থক বিলাশপুর মুলাই বেপারী কান্দি গ্রামের ফারুক হাওলাদার ও জলিল মাতবরের নির্দেশে আলী আজগর সরদার, নুরুজ্জামান সরদার, সাত্তার মোল্যা, শ্যামল সরদার, আমজেদ সিকদারসহ ৩০-৪০ জন মিলে সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থক মুলাই বেপারী কান্দির মজিবুর বেপারী, সোবহান বেপারী আলী, আকবর বেপারী, আমিনুদ্দিন সরদার, আজিজুল সরদার, গফুর সরদারের বাড়িঘরসহ অন্তত ১০টি বাড়িতে হামলা,ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ সময় বাড়িতে থাকা লোকজন বাধা দিলে তাদের শিশু সন্তানদের মেরে ফেলার হুমকি দেয় হামলা কারীরা। এতে ভয়ে কেউ প্রতিহত করার চেষ্টা করেনি। এ ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক জাজিরা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
গফুর সরদারের বাড়ি ভাঙচুরের সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হামলাকারীরা জঙ্গল দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় মুলাই বেপারী কান্দির নুরু সরদারের ছেলে আলী আজগর সরদার (৪০) কে বিশাক্ত সাপে দংশন করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের ছোট ভাই সিরাজ সরদার বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান আবু তাহের সরদারের লোক ফারুক হাওলাদার ও জলিল মাদবর গ্রুপের সাথে সাবেক চেয়ারম্যান কুদ্দস বেপারীর সঙ্গে বিরোধ রয়েছে। গতকাল রাতে একপক্ষ অপর পক্ষের বাড়ি ঘর ভাঙচুর করেছে। এ সময় আমার ভাই আলী আজগর সরদার বাড়ি ভাঙচুর করতে যায়নি। সে ভাঙচুর থামাতে গিয়েছিল। ফেরার পথে তাকে সাপে কামড় দিয়েছে। শরীয়তপুর হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গফুর সরদারের মেয়ে মোৗসুমী ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী রিনা বেগম বলেন, ভাঙচুর করার সময় পুলিশ ধাওয়া দিলে তারা পালানোর সময় আলী আজগরকে সাপে কামড় দেয়। এতে তার মৃত্যু হয়।
বিলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বেপারী বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যানের সমর্থকরা কোন কারণ ছাড়াই তার নির্দেশে আমার সমর্থকদের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে।
বর্তমান চেয়ারম্যান হাজী আবু তাহের সরদার বলেন, আমি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। ইউনিয়নের সবাই আমার সমর্থক। আমার কোন পক্ষ বিপক্ষ নেই। সাবেক চেয়ারম্যান আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে তা সঠিক নয়। সে আমার সম্মান ক্ষণœ করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ করেছে। তার সাথেও আমার কোন বিরোধ নেই।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক বলেন, এলাকার অধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। বুধবার রাতে ভাঙচুরের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। এ ঘটনায় মামলা দিতে বলেছি। এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শীর্ষনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন