দলের চেয়ারপারসন কারাবান্দী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন- এই দুই দাবিতে চলমান শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে চায় বিএনপি। আপাতত সক্রিয় আন্দোলনের কোনো কর্মসূচিতে না যাওয়ার কথা ভাবছেন দলটির নেতারা। পবিত্র রমজান মাসকে দল গোছানোর জন্য সাংগঠনিক মাস ধরে নিয়ে আগাতে চান তারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পবিত্র রমজান মাসে তিনটি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উদ্যোগ ও নির্দেশনায় এবারের ইফতার ও দোয়া মাহফিল হবে। যদিও প্রায় প্রতিবছর রমজানের শুরুতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কয়েকটি ইফতার পার্টির আয়োজন করতেন। কারাগারে বন্দি থাকায় এবার তা হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, বিএনপির উদ্যোগে পহেলা রোজায় এতিম ও আলেমদের সাথে ইফতার হবে রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিসক্লাবে। তৃতীয় রোজায় রাজনীতিবিদদের সম্মানে একই স্থানে ইফতার আয়োজন করবে বিএনপি। আর চতুর্থ রোজায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সম্মানে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে ইফতার আয়োজন করেছে দলটি।
এ ছাড়া রমজান মাসে ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দলের সিনিয়র নেতারা নিজ নিজ এলাকায় যাবেন। তারা স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে আগামী দিনে সক্রিয় আন্দোলনের কৌশল প্রসঙ্গে মতামতও নেবেন। ঈদের পর ধাপে ধাপে সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
দলের মধ্যম সারির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির কারণেও সাংগাঠনিক অবস্থা নড়বড়ে হয়েছে পড়েছে। যার প্রভাব আংশিক হলেও খুলনা সিটি নির্বাচনে পড়েছে। প্রচার-প্রচারণায় ঐক্যবদ্ধ থাকলেও ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়া সম্ভব হয়নি। যে কারণে কমিটিগুলো পুনর্গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ, ওয়ার্ড-থানা কমিটি এবং স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা জরুরি। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে ছাত্রদলের কার্যক্রম। সংগঠনের চেইন অব কমান্ডও ভেঙ্গে পড়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির একাধিক নেতা বলেন, আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের কমিটি পূর্ণাঙ্গ এবং ওয়ার্ড ও থানা কমিটিগুলো দ্রুত করতে হবে। তা না হলে নেতাকর্মীরা মুখ ফিরিয়ে নিবেন। বিশেষ করে, নেতৃত্বের দীর্ঘ গ্যাপ তৈরি হবে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখাও কঠিন হবে। ফলে আন্দোলনের সফলতা নিয়ে সংশয় তৈরি হবে।
তবে দলটির একটি মহল বলছে, এই মুহূর্তে তাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দি। তাকে ছাড়া অঙ্গ-সংগঠনের কমিটি গঠন ন্যায়সঙ্গত হবে না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। সুতরাং নতুন করে কমিটি গঠন করা হলে বিশৃঙ্খলাও দেখা দিতে পারে। সেজন্য কমিটির চিন্তা করছেন না তারা।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমরা হুট করেই কোনো দলীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানাতে পারি না। সময় হলে নিশ্চয়ই আমাদের সাংগঠনিক পদক্ষেপগুলো জানতে পারবেন। এখন আমাদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে নেত্রীর মুক্তি।’
তিনি বলেন, সকল দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি থেকে আমরা সরে আসিনি। একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি বিএনপির একার নয়, দেশের মানুষও এই দাবিতে ঐক্যবদ্ধ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে আমরা কমিটিতে হাত দিতে পারি না। তাছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও দেশের বাইরে। তাই এই মুহূর্তে অঙ্গ-সংগঠনের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা বা নতুন কমিটি দেয়ার কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই।’
তিনি বলেন, আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ম্যাডাম মুক্তি পেলে সব কিছুই দৃশমান হবে।
দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আমাদের নেত্রীর মুক্তির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এখনো নতুন কোনো কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়নি। দলের সিনিয়র নেতারা বসে তা ঠিক করবেন। এ ছাড়া রমজানে ইফতার মাহফিলের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপির অঙ্গ-সংগঠনের কমিটির অবস্থা
২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল রাতে বিএনপির ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ এবং উত্তরের নির্বাহী আংশিক কমিটি অনুমোদন করা হয়। দুই ভাগে বিভক্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণে বিএনপির ৭০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সভাপতি হন হাবিব উন নবী খান সোহেল এবং সাধারণ সম্পাদক হন কাজী আবুল বাশার। অন্যদিকে, ৬৬ সদস্য বিশিষ্ট ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি হন এম এ কাইয়ুম এবং সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান। এর মধ্যে উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ুম মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে একজন বিদেশি নাগরকিকে হত্যা মামলার চার্জশিট হয়েছে। অধিকাংশ থানা কমিটির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর। ফলে সাংগঠনিক অবস্থা নাজুক। তবে ঢাকা দক্ষিণের কমিটি প্রায় চূড়ান্ত আর উত্তরের কমিটি গঠন প্রক্রিয়াধীন।
এ ছাড়া ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি এবং আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। একই বছরের ১৬ জানুয়ারি রাতে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট যুবদলের আংশিক কমিটি হয়। দুই সংগঠনকেই এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।
ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের অক্টোবরে। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও মো. আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর ১৬ মাস পর গেল বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। দুই বছর অন্তর ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণার কথা রয়েছে গঠনতন্ত্রে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন