অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। পাশাপাশি নির্বাচনে অনিয়ম তদন্ত করতে প্রধান বিচারপতিসহ সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি আহবান জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৭মে) জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা সুপ্রিম কোর্ট বারের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। আইনজীবীদের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বার কাউন্সিল একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, এটি সরকারি নয়। এখানে আইনজীবীর সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। খোকন অভিযোগ করে বলেন, বার কাউন্সিল নির্বাচনে প্রত্যেক প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট দেয়ার বিধান থাকা সত্ত্বেও দেশের প্রত্যেকটি জেলা আইনজীবী সমিতির কোথাও নির্বাচনী এজেন্টদের শিট দেয়া হয়নি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং বেআইনি।
খোকন বলেন, আমরা বার কাউন্সিল নির্বাচনের অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণের জন্য তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। একইসঙ্গে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বার কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট অথবা সংশ্লিষ্ট বারের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে ভোট প্রয়োগের বিধান আছে। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল তার নির্দেশে সংশ্লিষ্ট বারের পরিচয় পত্র না দেখিয়ে ভোটারদের ভোট প্রদানের কোন নির্দেশ প্রদান করেননি। বেশ কয়েকটি বারে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন, বিশেষ করে ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে কোন ধরনের পরিচয়পত্র না দেখিয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তারা ভোট দানের সুযোগ করে দিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে প্রকৃত আইনজীবীগণ ভোট প্রদানে বঞ্চিত হয়েছেন এবং অন্যদিকে আইনজীবী নন এমন অনেকে ভোট প্রদান করেন।
ব্যারিস্টার খোকন অভিযোগ করেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান সদস্য সংখ্যা নয় হাজার ৯২জন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভোট কেন্দ্রে ভোটার করা হয়েছে মাত্র ৮৫৩ জনকে। শত শত আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভোট কেন্দ্রে গত ১৪ মে’র নির্বাচনে তাদের অনুমতি বা অনুরোধ ছাড়াই ভোটার তালিকা জেলা বারের ভোট কেন্দ্রে স্থানান্তর করায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে পারেননি। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। তাদের ভোট ঢাকা আইনজীবী সমিতিসহ বিভিন্ন নিম্ন আদালতের ভোট কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এ সম্পর্কে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেলকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে গত ১০ মে তারিখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিলেও তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ফলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির হাজার হাজার ভোটার বার কাউন্সিল নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে বঞ্চিত হয়েছেন। এমনকি নির্বাচনের দিনেও ৮৮জনকে ভোট কেন্দ্রপরিবর্তন করার অনুমতি দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহসভাপতি এবিএম ওয়ালিউর রহমান, ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সাধারন সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, এবিএম রফিকুল ইসলাম তালুকদা রাজা, ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান প্রমুখ।
তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, এসব অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা। বার কাউন্সিল নির্বাচন ও খুলনা সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের হতাশা থেকেই বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এসব অভিযোগ করছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত বার কাউন্সিল নির্বাচিত ১৪টি পদের মধ্যে ১২টিতেই সরকারপন্থীরা জয়লাভ করেছে। আর দুটি পেয়েছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন