খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে বড় ব্যবধানের জয়ে স্বস্তি ফিরেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগে। দ্বিতীয় মেয়াদে তালুকদার আব্দুল খালেক খুলনার নগরপিতা নির্বাচিত হওয়ায় ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। সারাদেশের নজর থাকা এই নির্বাচনে সন্তুষ্ট নির্বাচন কমিশনও (ইসি)। নির্বাচনে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটারের উপস্থিতিসহ বড় ধরনের কোনো সহিংসতা না ঘটাকেও তারা বড় অর্জন মনে করছে। তবে এই নির্বাচনে পাহাড় সমান অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বলছেন, খুলনার মানুষ এই নির্বাচনকে উৎসব হিসেবে নিয়েছিলেন। সে কারণেই নির্বাচনি প্রচারণাকে ঘিরে বড় ধরনের নাশকতা বা সহিংসতা ঘটেনি। ভোটের দিনও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন নগরবাসী। আগের মেয়াদে বিএনপি দলীয় মেয়র নগরীর উন্নয়ন করেনি বলেই নগরবাসী আওয়ামী লীগের প্রার্থী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী তালুকদার আব্দুল খালেকের পক্ষে রায় দিয়েছেন।
দলীয় প্রার্থীর এই জয়ে খুশিতে ভাসছেন কর্মী-সমর্থকরা। নগরীতে উন্নয়নের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা কামনা করছেন তারা।
খুলনা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান সমন্বয়কারী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এস এম কামাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশের একমাত্র হার্ডবোর্ড মিল, নিউজপ্রিন্ট ও বহু পাটকল বন্ধ করে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেগুলো চালু করেছে। খুলনা সিটিকে একটি আধুনিক নগরীতে রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় এনেছিলেন তালুকদার আব্দুল খালেক। বিএনপির মেয়র গত ৫ বছরে সেই নগরীতে মশার উপদ্রব, জলাবদ্ধতা আর মাদকের নগরীতে পরিণত করেছে। তাই একটি সুন্দর নগরী গড়ার জন্য নগরবাসী আবারও খালেককে নির্বাচিত করেছে।
বিজয়ী প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকও সব বিভক্তি ভুলে নির্বাচন ফল মেনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তাকে সহায়তা করতে আহ্বান জানিয়েছেন। খালেক বলেন, মাদক ও জলাবদ্ধতামুক্ত একটি সুন্দর নগরী গড়া আমার প্রধান লক্ষ্য। এই কাজে আমি দলমত নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা চাই। সবার সহায়তা পেলে খুলনা সিটি হবে একটি আধুনিক নগরী।
তবে এর ঠিক বিপরীত চিত্র বিএনপি শিবিরে। বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা বলছেন, ভোটের দিন ভয়-ভীতি দেখিয়ে বিএনপির ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন এলাকায় কেন্দ্র দখল করে জালভোটের মহোৎসব করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনি বিধি না মেনে কেন্দ্রের আশপাশেই প্রচারণাও চালিয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। যেখানে নিজেরা পারেনি, সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের কর্মীরা কেন্দ্র দখল করেছে— এমন অভিযোগও তাদের।
খুলনা সিটির নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর। তিনি শতাধিক কেন্দ্রে আবার ভোট নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, খুলনাবাসী এই প্রহসনের নির্বাচন মানে না।
এদিকে, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিকও (সুজন) এই নির্বাচনে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে। সুজন-এর খুলনা জেলা সম্পাদক কুদরত-ই খুদা জানান, এই নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার শঙ্কা ছিল। তা ভোটারদের মধ্যেও কাজ করেছে। জাল ভোটের কারণে তিনটি ভোট কেন্দ্র স্থগিত হয়েছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনার কারণে দুপুর ১২টার পর নারীরা তেমন একটা ভোট দিতে আসেননি। ভোটের পরিবেশ পরিস্থিতি সারাদিন একইরকম থাকলে ভোটের হার ৭০ শতাংশ ছাড়াত বলে তিনি মনে করেন।
বিভিন্ন অনিয়ম সত্ত্বেও নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্ট ইসি। কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনুচ আলী বলছেন, বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় পাঁচ লাখ ভোটারের এই নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ। সেই হিসাবে খুলনা সিটির নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ৩ লাখ ৬ হাজার ৬৩৬টি। এর মধ্যে বৈধ ভোট ৩ লাখ ৭১টি। বাকি ৬ হাজার ৫৬৫টি ভোট বাতিল হয়েছে।
সারাবাংলা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন