শুক্রবার থেকে পবিত্র মাহে রমজান শুরু হয়েছে। আর এই রমজানকে টার্গেট করে এগুচ্ছে জামায়াতে ইসলামী।
পুরো রমজানজুড়ে ইফতার পার্টির মাধ্যমে সংগঠনের কার্যক্রম প্রকাশ্যে সক্রিয় করা এখন তাদের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে সংগঠনটি সারাদেশে ব্যাপক ইফতার পার্টির কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এমনটি জানিয়েছে সংগঠনের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা। একইসঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলনেও সক্রিয় থাকার কথা ভাবছেন দলটির নেতারা। সারাদেশে সংগঠনের শক্তিশালী জায়গাগুলোকে টার্গেট করে জামায়াত-শিবির নতুন করে তাদের পথচলাকে সুগম করতে যাচ্ছে।
এ জন্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও সখ্য গড়ার নির্দেশ দেয়া হয় কেন্দ্র থেকে। ঢাকা মহানগর জামায়াতের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা মানবকণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। বেশ কিছু জেলাতে এবার ঘটা করে ইফতার পার্টির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সক্রিয় করবে দলটি।
এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান নেয়া জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে ইফতার পার্টির জন্য অনুদান পাঠানোর আহ্বান জানানো হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। তবে দলটির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এ বিষয়ে কোনো সঠিক তথ্য দিতে পারেনি।
অপরদিকে দলটির কর্মসূচি মানে খুব ভোরে কয়েকজনের ঝটিকা মিছিল, বৈঠক মানে লোকচক্ষুর অন্তরালে পেশাজীবী কারও বাড়ি বা অফিসে বৈঠক আর গণমাধ্যমে খবরের জন্য অজ্ঞাত স্থান থেকে বিবৃতি- এসবই হচ্ছে বর্তমান জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কার্যক্রম। বিগত ২০১১ সাল থেকে সংগঠন ও নেতৃত্ব অনেকটা ভবঘুরে থাকলেও সেই চিত্র বদলাচ্ছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রকাশ্যে রাজনীতিতে আসছে হাইকোর্টের আদেশে নিবন্ধন স্থগিত থাকা জামায়াতে ইসলামী।
দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার একাধিক সদস্য ও ঢাকা মহানগরের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা এসব তথ্য জানান। জামায়াতের কয়েক স্তরের নেতারা বলছেন, চলমান এই কার্যক্রমে পরিবর্তন আনছে জামায়াত। দীর্ঘ সাত বছর ধরে বন্ধ থাকা রাজনৈতিক কার্যালয়গুলো খোলার চিন্তা-ভাবনা করছেন দলটির নীতি নির্ধারকরা। পাশাপাশি গ্রেফতার হয়ে জামিন পেলেও তা গোপন করার যে অঘোষিত নিয়ম চলছিল, সেই নিয়মেও আসছে পরিবর্তন। এখন থেকে গ্রেফতার বা জামিনের সব খবরই দেয়া হবে গণমাধ্যমকে। জামায়াতের নেতারা জানিয়েছেন, দলের সিদ্ধান্ত ধীরে-ধীরে প্রকাশ্যে রাজনীতিতে সক্রিয় এবং দৈনন্দিন কর্মসূচিগুলো পালন করার চেষ্টা করতে এরই মধ্যে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা রয়েছে। আর কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৃণমূলেও সিদ্ধান্ত কার্যকর করার চেষ্টা হচ্ছে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এ বিষয়ে মানবকণ্ঠকে বলেন, আমরা আশা করব সরকারের বোধদয় হবে। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। নির্বাচনের সময় কম পক্ষে রাজনৈতিক কর্মসূচি বা আমাদের স্বাভাবিক কর্মসূচি সরকার পালন করতে দেবে বলে আমরা আশা করি।
জামায়াত সূত্র বলছে, ২০১১ সাল থেকে বন্ধ থাকা কেন্দ্রীয় ও মহানগর কার্যালয়সহ সারাদেশে বন্ধ থাকা কার্যালয়গুলো খোলার চেষ্টা করবে জামায়াত। এ কারণে নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হলেও তা অব্যাহত থাকবে।
সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে আসা জামায়াতের এক নেতা বলেন, জেলে কেন্দ্রীয় নেতারাই আলোচনা করছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক ব্যস্ততা বাড়ানো উচিত। বিশেষ করে ২০১৫ সালের পর থেকে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক তৎপরতা স্তিমিত থাকলেও তা ধীরে ধীরে সক্রিয় করার বিষয়ে নেতাদের আন্তরিকতা আছে। এ ক্ষেত্রে দলীয় কৌশল নির্ধারণ করা এখনো বাকি।
সূত্র আরো জানায়, কোন প্রক্রিয়ায় অফিস খোলা হবে, নিয়মিত কর্মসূচি দেয়া হবে, এ বিষয়গুলো নিয়ে কারাগারের বাইরে থাকা কেন্দ্রীয় নেতারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। অফিস খোলার বিষয়ে সরাসরি উত্তর এড়িয়ে যান জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ এক নেতা।
তিনি বলেন, এখনো তো বসতে দিচ্ছে না। ৫ জন মিলে দাওয়াত খেতে গেলেও ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অবস্থা এমন যে, হাঁটলে নাশকতা, বসলে গোপন মিটিং। ফলে কোনো পরিবর্তন এলে টের পাবেন। জামায়াতের চট্টগ্রাম বিভাগের এক জেলা আমির বলেন, সাংগঠনিকভাবে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে বলা হয়েছে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো, নিজেদের মধ্যে বসা ইত্যাদি কাজগুলো শুরু করতে বলা হয়েছে।
জামায়াত সূত্রগুলো জানায়, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী নির্ধারণ করার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে সত্তরটি আসনে শক্তিশালী প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে এই প্রার্থীদের নাম ও দলীয় পদবি এখনো জানা যায়নি।
সূত্র জানায়, বিগত কয়েক মাসে জামায়াতের গ্রেফতার নেতাকর্মীদের সংখ্যা অনেকটাই কমে এসেছে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে গ্রেফতারের সংখ্যা বাড়লেও নিয়মিত জামিনে সেই সংখ্যাও কমছে। দলের সহযোগী একটি সংগঠনের অন্যতম শীর্ষ নেতার দাবি, নির্বাচনের প্রার্থী ঠিক করা জামায়াতের একটি চলমান প্রক্রিয়া। তিনশ’ আসনেই প্রার্থী চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। তবে শেষ পর্যন্ত জোটের সঙ্গে সমন্বয় করার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত সংখ্যা নির্ধারিত হবে। দেশে নির্বাচনের একটি পরিস্থিতি তৈরি হলে জামায়াতও স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করবে বলে আশা প্রকাশ করেন ওই নেতা। প্রার্থী নির্ধারণের বিষয়টি দলীয়ভাবে জামায়াত ঠিক করলেও বড় বাধা রয়েছে নিবন্ধনের।
অন্যদিকে হাইকোর্টের আদেশে নিবন্ধন স্থগিত থাকা এবং নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক বাতিল হয়ে যাওয়ায় মার্কা ও নিবন্ধন নিয়েই বেশি ভাবতে হচ্ছে জামায়াতকে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে আপিল করা আছে।
কোনো তারিখ পড়েনি। সরকারের তরফে না হলে এটা হবে না। অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস তো খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, নিশ্চয়ই শুনানি হবে। মামলা ফাইল করা হলে তো শুনানি না হয়ে পারে না। নিশ্চয় শুনানির জন্য চেষ্টা করা হবে। লিস্টে আছে, আদালত যখন সময় দেবেন, তখনই শুনানি হবে।
এদিকে জামায়াত-শিবির তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি কারাবন্দি নেতাদের জন্য প্রত্যেক রোজায় দোয়া দরুদ, কোরান খতমসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। একইসঙ্গে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত দলটির শীর্ষ নেতাদের ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় তাদের জন্য বিশেষ দোয়ার আহ্বান করা হয়।
মানবকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন