বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মেলন শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পরও হয়নি নতুন কমিটি। পরবর্তী নেতৃত্ব নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে নানা আলোচনা আছে। এর মধ্যে সম্ভাব্য যাঁর নামই আলোচনায় আসছে, তাঁর বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ আনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অখ্যাত অনলাইন পোর্টাল ব্যবহার করে।
১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এবার সিদ্ধান্ত হয় ভোট নয়, সমঝোতার মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। আর সেটা করে দেবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন সবাই তাকিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রীর দিকে।
আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, যেনতেনভাবে যাতে ছাত্রলীগের কমিটি না হয়, তা নিশ্চিত করার আগ্রহ দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনা। এ জন্য তিনি সভাপতিমণ্ডলীর কোনো কোনো সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের ডেকে আলাদাভাবে দায়িত্ব দিয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থা দিয়েও তথ্য সংগ্রহ করছেন। প্রধানমন্ত্রী বাজেট প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে সবার দেওয়া তথ্য এক করে কমিটি ঘোষণা করতে দেরি হচ্ছে। তিন-চার দিনের মধ্যে সম্ভাব্য নেতাদের সাক্ষাৎকার নিতে পারেন শেখ হাসিনা। এরপর কমিটি ঘোষণা করা হবে।
আওয়ামী লীগের ওই সূত্র বলছে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাঁরা ফরম সংগ্রহ করেছেন, তাঁদের মধ্য থেকেই ওই পদে নেতা নির্বাচন করা হবে-বিষয়টা এমন না-ও হতে পারে। ফরম সংগ্রহ করেননি, এমন কাউকেও নেতা নির্বাচন করা হতে পারে। প্রয়োজনে বয়সের কড়াকড়িও শিথিল করা হতে পারে। শীর্ষ পদে একজন নারী বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কারও আসার সম্ভাবনা আছে।
২০০৬ সাল থেকে ছাত্রলীগে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হলে সংগঠনটির সাবেক নেতাদের একটি অংশ ভোটের নিয়ন্ত্রণ শুরু করে। তখন থেকে তাঁরা ‘সিন্ডিকেট’ বা নিয়ন্ত্রকগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিতি পান। তাঁরা সারা দেশে পছন্দের ব্যক্তিদের ভোটার করে অনুগতদের নেতা নির্বাচন করে আসছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই এবার বাদ পড়ে ভোট-প্রক্রিয়া। প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীদের নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি করতে বললেও তা সম্ভব হয়নি। সবাই আবার প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হন।
কমিটি ছাড়া সম্মেলন শেষ হওয়ার পর আট দিন পার হয়েছে। কিন্তু নতুন নেতা নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীকে প্রার্থীতালিকা জমা দিয়েছি। এখন তিনি প্রার্থীদের সব খোঁজখবর নিয়ে যেকোনো সময় কমিটি ঘোষণা করবেন।’ তিনি বলেন, ‘সম্মেলনে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়নি। নতুন কমিটি ঘোষণার আগপর্যন্ত নেত্রী আমাদের কাজ করে যেতে বলেছেন।’
ছাত্রলীগের সূত্র বলছে, তাঁরা জেনেছেন প্রার্থীদের সবাইকে ডেকে নতুন নেতৃত্বের ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু কবে ডাকবেন, তা কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। এ বছর ছাত্রলীগের সভাপতি পদে ১১১ ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২১২ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। দুজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। বয়সসীমা ২৮ বছর নির্ধারণ করার পর এর চেয়ে বেশি বয়সী প্রার্থীদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর সভাপতি পদে ৬৮ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৭১ জন প্রার্থী আছেন।
জানা গেছে, ১২ মে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি করার জন্য ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা বসেছিলেন। কিন্তু সমঝোতায় পৌঁছাতে না পেরে তাঁরা সিদ্ধান্তের জন্য গণভবনে যান। সেখান থেকে এসে তাঁরা কমিটি ঘোষণা ছাড়াই সম্মেলনের সমাপ্তি টানেন।
এরপর কথিত সিন্ডিকেটবিরোধী নেতারা চট্টগ্রাম ও কুড়িগ্রামের দুজনের প্যানেল নিয়ে প্রচার শুরু করেন। ওই দুজনের একজন মাদকসহ আটক হয়েছিলেন বলে আরেক পক্ষ অনলাইনে প্রচার করে। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় কাদা-ছোড়াছুড়ি। কারও বিবাহিত হওয়ার প্রমাণ, ব্যবসায়ী হওয়ার প্রমাণপত্র, মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় নাম থাকা, ছাত্রত্ব না থাকা, পরিবার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী—এমন নানা অভিযোগ আলোচনায় আসা নেতাদের বিরুদ্ধে প্রচার চলতে থাকে। ছাত্রদল বা ছাত্রশিবির থেকে ছাত্রলীগে এসেছেন, এমন অভিযোগ আসে অন্তত ৪০ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
ছাত্রলীগের একজন সাবেক সভাপতি প্রথম আলোকে বলেন, এবার শীর্ষ পর্যায় থেকে নেতৃত্ব বাছাই হবে বলে প্রার্থীদের সবাইকে নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বাছাইয়ে যাঁদের নাম সামনে এসেছে, সবার বিরুদ্ধেই কোনো না কোনো অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় সব পক্ষের সম্মতিতে সমালোচনা নেই, এমন নেতাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তাই কমিটি ঘোষণা করতে দেরি হচ্ছে।
ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ে একটু সময় লাগছে। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বলবেন, সেভাবেই কমিটি হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন