মাদক নির্মূল করতে অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে মানুষ হত্যা সংবিধানবিরোধী বলে এই কৌশলের সমালোচনা করেছেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির এই ট্রাস্টি বলেছেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীসহ সন্ত্রাসীদের ধরে ক্রসফায়ারের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ অভিযান যুক্তিসঙ্গত হলেও বিনাবিচারে মানুষ হত্যা করায় সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।’
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতিসংঘের ইউপিআর প্রক্রিয়ার আওতায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ‘মিট দ্য প্রেস’এ বক্তব্য রাখছিলেন সুলতানা কামাল।
গত ৪ মে থেকে মাদকের বিরুদ্ধে সাড়াঁশি অভিযান শুরু করেছে র্যাব ও পুলিশ। এর অভিযানে গত তিন দিনেই নিহত হয়েছে ১৯ জন, যাদের মধ্যে নয় জন আবার মারা গেছেন গত রাতে।
এসব কথিত বন্দুকযু্দ্ধের বিষয়ে র্যাব ও পুলিশ যে বর্ণনা দিয়েছে তা সব ক্ষেত্রেই মোটামুটি একই রকম। সন্দেহভাজনদেরকে নিয়ে অভিযানে যাওয়ার পর তাদের সহযোগীরা হামলা চালিয়েছে দাবি কর হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। আর দুই পক্ষে গোলাগুলিতে মারা গেছে সন্দেহভাজনরা।
শনিবার গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান কিন্তু শুরু হয়ে গেছে।’
একই দিন ঢাকায় মাদকের বিরুদ্ধে এক সচেতনতামূলক কর্মসূচির উদ্বোধন করে র্যাব প্রধান বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘হু এভার, হোয়াট এভার, হয়ার এভার, কেউ আমাদের অপারেশনের বাইরে নয়। মাদকের শিকড়-বাকড়সহ তুলে নিয়ে আসব।’
সুলতানা কামাল ‘বন্দুকযুদ্ধের’ সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। বিচার বর্হিভূত হত্যার কোনো তদন্ত হচ্ছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এসব কারণেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্রের বেআইনি ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।’
‘মাদক ব্যবসায়ীসহ যে কোনও সন্ত্রাসীকে এভাবে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা মানবাধিকার লঙ্ঘন। যেকোনও অন্যায় অপরাধকে বিচারের আওতায় এনে তার শাস্তি দেওয়া উচিত। অথচ সেটা হচ্ছে না।’
সুলতানা কামাল দাবি করেন, জনগণ এভাবে কোনা হত্যাকাণ্ড দেখতে চায় না। বলেন, ‘তাই যদি হবে তাহলে দেশে আইন আদালত কেন? ’
মিট দ্যা প্রেসে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যাকটিভিজমের সমন্বয়কারী লিসা হায়াৎ। বলেন, জাতিসংঘের সর্বজনীন পুনর্বীক্ষণ প্রক্রিয়ার (ইউপিআর)আওতায় গত ১৪ মে জেনেভায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। সেখানে ১০৫টি দেশ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে ২৫২টি সুপারিশ করেছে।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্যও প্রশসাংও করা হয় অনুষ্ঠানে। তবে এসবের তুলনায় সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের বিষয়গুলো ছিল ব্যাপক।
২০০৯ সালে ৪২ টি বিষয়ে এবং ২০১৩ সালে ১৯৬ টি বিষয়ে এবং এবার ২৫২টি বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের প্রতিফলন বলেও মন্তব্য করা হয় অনুষ্ঠানে।
সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যাকটিভিজম, নেটওয়ার্ক অব নন-মেইনস্ট্রিম মারজিনালাইজড কমিউনিটিস, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যা-রিফর্ম এ ডেভেলপমেন্ট এবং কাপেং ফাউন্ডেশন এর আয়োজন করে।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন