বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও ঘোষণা করা হয়নি নতুন নেতৃত্ব। বিগত সম্মেলনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করতে কখনোই এত সময় লাগেনি। ব্যাপক যাচাই-বাছাই করতেই এবার বেশি সময় নেওয়া হচ্ছে বলে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন। নতুন নেতৃত্বের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর পূর্ণ আস্থা আছে পদপ্রত্যাশীদের। সূত্রমতে, এবার ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করবেন সংগঠনের সাংগঠনিক নেত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ছাত্রলীগকে দক্ষ, যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্ব উপহার দিতেই সময় নিচ্ছেন তিনি। এখন যে নেতৃত্ব আসবে—তাদেরকেই আগামী নির্বাচনে দলের পক্ষে ভূমিকা পালন করতে হবে। সে কারণে ১২টি বিষয়ে সামনে রেখে নতুন নেতৃত্ব খুঁজছেন শেখ হাসিনা। বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, নিয়মিত মিছিল মিটিংয়ে উপস্থিতি, মধুর ক্যান্টিনে নিয়মিত, দলীয় কার্যালয়েও নিয়মিত, জেলা সফরের সাংগঠনিক দক্ষতা, সাংগঠনিক ও দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলা, অবিবাহিত, মাদকমুক্ত, কোনো ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নয়, পরিবার সন্দেহাতীতভাবে আওয়ামী লীগ, সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক পরিচিত, ক্যাম্পাসে নিয়ন্ত্রণ আছে কিনা প্রভৃতি। এ ছাড়া ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে পুরনো সিন্ডিকেট চুপচাপ থাকলেও নতুন গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের নেতারা নিজ নিজ এলাকার বা অনুসারীদের নেতা বানানোর জোর লবিংয়ে থাকায় কমিটি দিতে দেরি করছেন শেখ হাসিনা। দলীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রলীগে ‘অনুপ্রবেশ’ ঘটার অভিযোগ আছে। এই ‘অনুপ্রবেশ’ যেন পুনরায় না ঘটে সে কারণে ছাত্রলীগের শেখ হাসিনা পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত ব্যাপক যাচাই-বাছাই করছেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩২৩ জনের তালিকা থেকে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন তিনি। পদপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারও নিতে পারেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। এরপর কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী এবং ছাত্রলীগকে দেখভাল করেন এমন কয়েকজন নেতা নিশ্চিত করেছেন। ফলে পদপ্রত্যাশীদের অপেক্ষা আরও বাড়তে পারে। গত ১১ মে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ২৯তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন তিনি ছাত্রলীগকে সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে আসতে বয়সসীমা ২৮ বছর বলে ঘোষণা দেন তিনি। পরের দিন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে দ্বিতীয় অধিবেশনে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার দায়িত্বভার সংগঠনের শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। পদপ্রত্যাশী কমপক্ষে ১০ জন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে তাদেরকে টেলিফোন করে তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কারও কারও গ্রামের বাড়িতেও খোঁজখবর নিয়েছেন সংস্থার লোকজন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, ছাত্রলীগে শুদ্ধি অভিযান এবং যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্ব বের করে আনার জন্যই সময় নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। সে কারণে কয়েক দফায় তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। পারিবারিক রাজনৈতিক আদর্শ, মেধাবী ও দক্ষ নেতৃত্ব তুলে আনতেই সময় লাগছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদপ্রত্যাশীদের তালিকা থেকে যাচাই-বাছাই করে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেছেন। আরও যাচাই-বাছাই শেষে তিনি কমিটি ঘোষণা করবেন। এ জন্য কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।’ এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের বিদায়ী সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কমিটি নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। নেত্রী অবশ্যই সুন্দর একটি কমিটি দেবেন। আমরা ভালো কিছুর জন্যই অপেক্ষা করছি।’ বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, যত দ্রুত সম্ভব নতুন নেতৃত্ব আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা উপহার দেবেন। আমরা তার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন