জাতির জনকের নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এইচ এম তাজ উদ্দীন মাদ্রসায় পড়াকালীন সময়ে শিবিরের অর্থ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্র শিবিরের গোপন নথিতে তার নাম রয়েছে। শিবিরের একটি আবেদন ফরমে তার নিজ হাতে লেখায় এ তথ্য জানা গেছে।
তাজ উদ্দীন একজন হাফেজ। এজন্য হাফেজ গোপন করে নামের শুরুতে এইচ এম তাজ উদ্দীন লিখেন। তাজ উদ্দীনের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে। পিতার নাম আব্দুল মোনাফ। পিতার পেশা কৃষি। মাতার নাম সাজেদা বেগম। ২০০৭ সালে তাজ উদ্দীন দাখিল পাস করে চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ মাদ্রসায় ভর্তি হয়। সেখানে হোস্টেলে থাকার সময়ে ছাত্র শিবিরের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। সেখানে আলিম প্রথম বর্ষ শাখার অর্থ সম্পাদক ছিল। এর আগে সে পাঠাগার সম্পাদক ছিল।
পুলিশের অভিযানে উদ্ধারকৃত শিবিরের গোপন নথিতে পাওয়া তাজ উদ্দিনের নিজ হাতে লিখা বায়োডাটা
সে মাদ্রসায় পড়াকালীন শিবিরের ক্যাডারের ভূমিকা পালন করত। আগ্রবাদ এলাকায় মেস প্রতিষ্ঠা করে ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা আদায় করত। সে টাকা সে শিবিরের নেতাদের সাথে খাওয়া দাওয়া করত।
তাজ উদ্দীন ওই ফরমের শেষে স্বাক্ষর করে। যার তারিখ ০৪.০৪.২০০৮। এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ছাত্রলীগের রাজনীতি করা শুরু করে। ছাত্রশিবিরের এমন পদধারী নেতা থেকে ছাত্রলীগের নেতা বনে যান। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী হওয়ায় তার বিষয়ে খোঁজ নিয়েছে অনেকে। ছাত্র শিবির থেকে অনুপ্রবেশকারী এমন নেতার কারণ জাতির জনকের সংগঠন ছাত্রলীগ বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য জামাত শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত।
বায়োডাটা ফর্মের নিচে তাজউদ্দিনের স্বহস্তে দেয়া স্বাক্ষর
এমন শিবির নেতাকে ছাত্রলীগ পদ পাওয়ায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা আসন্ন নেতৃত্ব শিবির-ছাত্রদল মুক্ত কমিটি করার দাবি জানিয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভালোবাসার ছাত্রলীগের এমন অনুপ্রবেশকারী যাতে ঠাঁই না হয় সেজন্য সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
এ শিবির নেতা কক্সবাজারের স্টুডেন্টদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। সে এলাকার শিবির নেতাদের সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রাখে।
এদিকে, এই শিবির নেতাকে কে নেতা বানিয়েছিলেন এমন প্রশ্ন সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে ছাত্রলীগের সবাই বলেছেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের সরাসারি মদদপুৃষ্ট হয়ে এইচ এম তাজ উদ্দীন ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করেছে। ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এম এম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বাধীন প্রথম পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এইচ এম তাজ উদ্দীনের ঠাঁই হয়নি। পরবর্তীতে বর্ধিত কমিটিতে তাকে উপ- আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদ দেয়া হয়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে এইচ এম তাজ উদ্দীন বলেন, মায়ের নাম শাহ্ জাহান বেগম, কিন্তু যে কাগজটি ভাইরাল হয়েছে সেখানে আমার মায়ের নাম সাজেদা বেগম লেখা রয়েছে। মাত্র ২ মাসের ব্যবধানে আমি কিভাবে শিবিরের ৩ টা সম্পাদকীয় পদ পেতে পারি এ বিষয়েও প্রশ্ন তুলেন তিনি। এছাড়া তাজ উদ্দীনের নামের বানানেও ভুল রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তাজ উদ্দীন বলেন, আমার সকল সনদ থেকে শুরু করে জাতীয় পরিচয়পত্রেও ‘উদ্দিন’ এভাবে লিখি। আমি কিভাবে নিজের নামের বানান বা মায়ের নাম ভুল করতে পারি? একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে এসব কুৎসা রটাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। তাজ আরো বলেন, শিবিরের রাজনীতিতে অর্থ সম্পাদক বলে কোনো পদ নেই, যা রয়েছে বায়তুল মাল সম্পাদক পদ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন