১৯৭৯ সালের পহেলা জানুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বিএনপির সহযোগী সংগঠন হিসেবে এ ছাত্রসংগঠনটি ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। অথচ এই ছাত্র সংগঠনটি এখন প্রায় নিষ্ক্রিয়। রাজপথে তাদের দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন। তার মুক্তি নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনার কমতি নেই। অথচ ছাত্রদকে এ নিয়ে কথা বলতে তেমন একটা দেখা যায়নি। কোথায় ছাত্রদল? কি করছেন তারা?
আন্দোলন মানেই ছাত্রদলকে রাস্তায় দেখা যেত। সেখানে দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাদের দেখা যাচ্ছে না। খালেদা জিয়া জেলে ও তারেক জিয়ার সাজার বিষয়েও তাদেরকে তেমন কোন ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। মাঝে মাঝে খালেদা জিয়ার জামিনকে কেন্দ্র করে মুখচোরা স্বভাবে দেখা দিয়েছে তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিএনপির উপর যেই নির্যাতন করা হয়েছে তাতে অনেকটাই আড়ালে চলে গেলে দলের কর্মীরা। আন্দোলন করতে গেলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তোপের মুখে পিছু হটেছে তারা। তাছাড়া বিভিন্ন সময় ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের উপর হামলা-মামলা, নির্যাতন, গুম, হত্যা চালিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। সেই ভয়ে অনেকটাই নিজেদের আড়াল করে রেখেছে তারা।
এদিকে বিএনপির সিনিয়র নেতারা খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে রাজপথে আন্দোলনের ব্যাপারে জোর দিয়ে কিছু বলছে না। তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছে। আগের মতো জ্বালাও-পোড়াও থেকে সরে এসেছে দলটি। এতে অনেকের বাহবাও পেয়েছে তারা।
আন্দোলন নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে দুই ধরনের মতামত রয়েছে। বিএনপির নেতাদের একটি অংশ মনে করেন, এখনই কঠোর আন্দোলনে যেতে হবে। আরেক অংশের মত, চলমান নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে দলকে আরও শক্তিশালী করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা দেওয়া পর কঠোর আন্দোলনে যাওয়া উচিত। কারণ এর আগে কঠোর আন্দোলনে নামলে সরকারের হামলা- মামলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে দলের নেতাকর্মীরা।
সম্প্রতি বিএনপি নেতাদের একটা বৈঠক হয়, সেখানে সবাই একমত হয়েছে রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়ার জামিন হচ্ছে না। তাকে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করতে হবে। তবে এ কঠোর আন্দোলনে শুরু করতে হবে ঈদের পরে। রমজানের মধ্যে সাংগঠনিক কর্মসূচি দিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি ওয়ার্ড, থানা, ইউনিয়নে ইফতারের আগে নেতাকর্মীদের নিয়ে বর্ধিত সভা করা যেতে পারে। এরপর ইফতার মাহফিল। এতে করে দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়বে।
এ ব্যাপারে (১৮ মে) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি এখন সরকারের হাতে চলে গেছে। বিচারকদের সরকার যা বলবে, তাঁরা তাই করবেন। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে আইনি লড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজপথের কোনো বিকল্প নাই। আমাদের ধীরে ধীরে এখন কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার কথা চিন্তা করতে হবে। কারণ শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে এ সরকারের টনক নড়ানো যাবে না। ঈদের পরে দেশের সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এ আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে হবে।
এই আন্দোলনের জন্য ছাত্রদলকে রাজপথে থাকতে হবে। কিন্তু কোথায় তারা। তারা কী খালেদা জিয়াকে আন্দোলন করে বের করে আনতে পারবে? নাকি সরকারি দলের ধরপাকড়ে আবারও নিজেদের আড়াল করে নিবে?
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন