কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যে আপত্তি থাকলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইলেট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমের ব্যবহার বাড়ানোর সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠেয় রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে, খুলনায় দুটি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হলেও গাজীপুরে এই যন্ত্রে ভোট নেয়া হবে ছয়টি কেন্দ্রে। এছাড়া জুলাইয়ে হতে যাওয়া তিন সিটি নির্বাচনেও ব্যবহার হবে ইভিএম।
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, তারা ধীরে ধীরে ইভিএমের ব্যবহার বাড়াবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা রংপুরে একটি কেন্দ্রে এবং খুলনায় দুটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করেছি। এখন করতে যাচ্ছি ছয়টি কেন্দ্রে। ভবিষ্যতে আমাদের এই যন্ত্র বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।’
নির্বাচন কমিশনের ইভিএমের ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী। তারা যন্ত্রটিকে ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় করতে চায়। এটি যে সুষ্ঠু ভোটের সহায়ক, সেটিও দেখাতে চায় কমিশন।
বুধবার (১৩ জুন) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক তফসিল ঘোষণা করে ইসি। এসময় গাজীপুরে ইভিএম বাড়ানোর কথা জানান কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
গাজীপুরে ভোট হওয়ার কথা ছিল গত ১৫ মে। কিন্তু একটি রিট আবেদনের পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে ভোটে স্থগিতাদেশ দেয়া এবং পরে তা প্রত্যাহারের পর ভোটের নতুন তারিখ ঠিক হয় ২৬ জুন।
নির্বাচন কমিশন সনাতন পদ্ধতির ব্যালটের ভোটকে ঝামেলার মনে করছে। এর বদলে ইভিএম চালু করলে একজনের ভোট আরেকজনের দেয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে তারা।
ইভিএম নিয়ে বিএনপির আপত্তি থাকলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, এই যন্ত্রের ব্যবহার বাড়লেই এ নিয়ে সংশয় কেটে যাবে।
বাংলাদেশে ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে যন্ত্রটি ব্যবহারও হয়। এরপর ২০১২ সালে কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও পরীক্ষামূলকভাবে একটি কেন্দ্রে ভোট হয় ইভিএমে। তবে সে সময় যন্ত্রটিকে কারিগরি ত্রুটি পাওয়া যায়।
বুয়েটের তৈরি ওই যন্ত্রটি বাতিল করে দিয়ে নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সহযোগিতায় ইসির নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি নতুন ইভিএম তৈরি করিয়েছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানিও করা হয়েছে বিপুল যন্ত্র।
তবে নির্বাচন কমিশন একসঙ্গে যন্ত্রটির ব্যবহার চালু করতে চায় না। গত ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে এই যন্ত্র নিয়ে ভোট হয়। আর গত ১৫ মে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুটি কেন্দ্রে ভোট হয় ইভিএমে।
আর দুই নির্বাচনে এই তিনটি কেন্দ্রেই ফলাফল অন্য কেন্দ্রের আগেই পাওয়া গেছে। সেখানে ভোট নিয়ে কোনো ঝামেলার খবর পাওয়া যায়নি। আর ভোটাররাও কোনো সমস্যার কথা জানায়নি, বরং তারা উচ্ছ্বাস জানিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ছয়টি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে।’
গাজীপুরের পর বাকি তিন নগরে ভোটে ইভিএম ব্যবহার হবে- আগেই জানিয়ে দিলেন সচিব। তবে সেখানে গাজীপুরের মতোই ছয় কেন্দ্রে নাকি আরও বেশি কেন্দ্রে যন্ত্রে ভোট নেয়া হবে, সেই প্রশ্নের জবাব মেলেনি। সচিব বলেন, ‘সেগুলোতে কী পরিমাণ ইভিএম ব্যবহার করা হবে এটি কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।’
ইসি সচিব জানান, তারা ধীরে ধীরে ইভিএমের ব্যবহার বাড়াবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা রংপুরে একটি কেন্দ্রে এবং খুলনায় দুটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করেছি। এখন করতে যাচ্ছি ছয়টি কেন্দ্রে। ভবিষ্যতে আমাদের এই যন্ত্র বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।’
ধীরে ধীরে যন্ত্রটির ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে হেলালুদ্দীন বলেন, ‘আমরা ভোটারদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে চাই যেন তারা বুঝতে পারে, এটা দিয়ে স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবে ভোট নেয়া যায়।’
সিটি করপোরেশন ছাড়াও সামনে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার পরিকল্পনা আছে বলেও জানান নির্বাচন কমিশন সচিব।
২০১৬ সালের শেষ দিকে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্রপতির সংলাপেই ভোট গ্রহণে ইভিএমের প্রসঙ্গ আসে। আওয়ামী লীগ সনাতন পদ্ধতির বদলে এই যন্ত্রে ভোট নেয়ার প্রস্তাব তখনই দেয়। আর গত বছরের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপেও এই প্রস্তাব দেয় তারা।
তবে দুটি সংলাপের পরই বিএনপির নেতারা ইভিএমের বিরোধিতা করতে থাকেন। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ইভিএমে আপত্তি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠিও দেয় দলটি। সম্প্রতি দলের মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী ইভিএমকে সরকারের পক্ষে ভোট কারচুপিতে সিইসির নতুন কৌশল হিসেবে বর্ণনা করেন।
তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটে ইভিএম কী পরিমাণে ব্যবহার হবে সে বিষয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি নির্বাচন কমিশন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন