পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের স্যাঁতস্যাঁতে চার দেয়ালের ভেতরেই ঈদ করতে হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। যদিও এই অভিজ্ঞতা তার নতুন নয়। এক দশক আগে এক-এগারোর সময় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে গ্রেফতার হয়ে সংসদ ভবন এলাকার সাব-জেলে রোজার ঈদ ও কোরবানির ঈদ কাটিয়েছিলেন বিএনপি প্রধান।
প্রতি বছরই ঈদুল ফিতরে বিশিষ্ট নাগরিক, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও সর্বসাধারণের সঙ্গে ঈদের কুশল ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন খালেদা জিয়া। কারান্তরীণ থাকায় এবার একাকিত্ব নিয়েই থাকতে হবে শারীরিকভাবে অসুস্থ এই শীর্ষ রাজনীতিককে।
কারা সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন খালেদা জিয়ার খাবারের তালিকায় থাকছে বিশেষ আয়োজন। এসব খাবার কারাগার থেকেই সরবরাহ করা হবে, যা বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হবে। কারা চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ীই রান্না করা হবে খাবারগুলো।
ঈদের সকালে খালেদা জিয়ার নাস্তার মেন্যুতে থাকছে সেমাই, পায়েস ও মুড়ি। আর দুপুরে তার ইচ্ছা অনুযায়ী ভাত বা পোলাও সরবরাহ করা হবে। সাথে থাকবে মাছ, মাংস, ডিম ও আলুর দম। আর রাতে বিএনপি প্রধানের খাবারের তালিকায় থাকবে পোলাও গরু অথবা খাসির মাংস, মিষ্টান্ন, পান-সুপারি এবং কোমল পানীয়।
সূত্র আরো জানায়, ঈদের দিন সকালে পরিবারের সদস্যরা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। তাদের আনা খাবারও খেতে পারবেন খালেদা, তবে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই তাকে সরবরাহ করা হবে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. জাহাঙ্গীর কবির পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঈদের দিন অনুমতি সাপেক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। পরিবারের সদস্যরা তার জন্য খাবার আনলে সেটিও গ্রহণযোগ্য হবে, তবে খাবারগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে কারা কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, ঈদের দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য আবেদন করেছেন বিএনপির মহাসচিব এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।
এ প্রসঙ্গে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, ঈদের দিন সকালে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরাসহ নেতাকর্মীরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করবেন। সেখান থেকে তারা জেলগেটে যাবেন।
উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পরপরই বেগম খালেদা জিয়াকে আদালত থেকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই রয়েছেন।
গত ৯ জুন শনিবার বিকেলে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত চারজন চিকিৎসক সাক্ষাত করেন। সাক্ষাত শেষে তারা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ‘মাইন্ড স্ট্রোক’ হয়েছে। তিনি হঠাৎ পড়ে গিয়েছিলেন। এতে তার একটি ‘মাইন্ড স্ট্রোক’ হওয়ায় তিনি ওই সময়টার কথা কিছু মনে করতে পারছেন না।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা নিয়ে চার পৃষ্ঠার একটি সুপারিশমালা আমরা কারা কর্তৃপক্ষকে দিয়েছি। বেগম জিয়ার কথায় এখন কিছুটা জড়তা আছে, তবে কমিউনিকেশন করতে পারছেন। তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হোক।’
১১ জুন সোমবার কারা মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন্স) সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) পুরো অজ্ঞান হননি। সামান্য ভারসাম্য হারিয়েছিলেন। তিনি চাইলে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেয়া হবে।’
তবে মঙ্গলবার কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিএসএমএমইউ’তে যেতে রাজি হননি খালেদা। পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে ব্যক্তিগত খরচে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার আবেদন করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেই আবেদন অমীমাংসিত রেখেই বৃহস্পতিবার তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেয়ার প্রস্তাব দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন