বেশ কয়েকদিন ধরেই টালবাহানা চলছে বিএনপি চেয়ারপরসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে। কোন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে তর্ক-বিতর্ক। শত তর্ক-বিতর্ক হলেও, হয়নি কোথায় চিকিৎসা হবে তার সিদ্ধান্ত।
একদিকে বিএনপি’র দাবি, সরকার খালেদা জিয়ায় চিকিৎসা নিয়ে টালবাহানা করছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের দাবি, সরকার খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা করাতে চাইলেও, বিএনপি রাজনীতি করার ইস্যু খুজছে।
গত ৮ জুন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ হয়েছে ধারণা দিয়ে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করেন। খলেদা জিয়ার ব্যক্তিগত পচ্ছন্দও ইউনাইটেড হাসপাতাল। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল এবং পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তির প্রস্তাব দিলেও খালেদা জিয়ার পরিবার ও তার দল বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালেই চিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছে।
গতকাল এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি তিনি সিএমএইচেও যেতে চান না। এখন আর নতুন কোনো তথ্য নেই।’ এদিকে পরিবারের সদস্য যারা ঈদের দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন তাদের বরাত দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রবিবার বলেন, ‘ওনার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে। উনি কারো সাহায্য ছাড়া হাঁটতে পারছেন না।’
যে চোখের অপারেশন হয়েছে সেই চোখ লাল হচ্ছে এবং আরও ব্যথা বেড়েছে। ঘাড়ের ব্যথা বাম দিকে এতই বেড়েছে যে, হাতের আঙুলগুলো সবসময় ব্যথা করছে। এ কারণে হাত দিয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে পারছেন না। কোমরের ব্যথা বাম পায়ের তলা পর্যন্ত এখন ছড়িয়ে পড়েছে। এটা খুবই মারাত্মক। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দেওয়া রিপোর্ট নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ এতটুকু কাজ করেনি। এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। শুধু জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য সরকার বলছে পিজিতে পাঠাব অথবা সিএমএইচে পাঠাব।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার (১৮ জুন) খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করছে বলে মন্তব্য করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, বিএনপি নেতারা তাদের নেত্রীর চিকিৎসাসেবা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করছে।তার চিকিৎসার জন্য সতর্ক ও সজাগ আছি। অন্যদিকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী সরকার দেশনেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে পানি ঘোলা করছে। এর উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাকে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে-ধুঁকে নিঃশেষ করে দেওয়া। দেশনেত্রীকে চিকিৎসা না দেওয়ার জন্যই ওবায়দুল কাদের সাহেবরা নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।
বিএনপি সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, সিএমএইচ মূলত আর্মি পারসনদের জায়গা। সেখানে কেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে চিকিৎসা নিতে যেতে হবে? রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ হলে কেন সিএমএইচে যান না? আসলে সরকার তার চিকিৎসা দিতে চাচ্ছে না। তা না হলে এত সময়ক্ষেপণ কেন? সরকারি ডাক্তারদের নিয়ে গঠিত বোর্ডই বলেছে, তিনি অসুস্থ। এখন তার অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে। আর কত অবনতি হলে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হবে? তিনি বলেন, তার চিকিৎসা দেওয়া সরকারের দ্বৈত দায়িত্ব। এক সাধারণ নাগরিক হিসেবে এবং অন্যটি দেশের অন্যতম বৃহত্তম দলের চেয়ারপারসন হিসেবে; কিন্তু চিকিৎসা না দিয়ে সরকারের একেকজন একেক রকম ভাষায় কথা বলছেন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন