রংপুরের কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে স্থান পেয়েছেন ছিনতাইয়ের অভিযোগে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত এবং মোটরসাইকেল চুরি মামলার অভিযুক্ত আসামি, অছাত্র ও বিবাহিতরা। ১৪৮ সদস্যের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন এমন ৪০ জনই বিবাহিত এবং অছাত্র। অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। স্ত্রীকে করা হয়েছে সহসভাপতি আর স্বামীকে দেওয়া হয়েছে যুগ্ম সম্পাদকের পদ। অথচ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, যে কোনো ইউনিটের কমিটিতে পদ পেতে হলে বয়স ২৯ বছরের বেশি হওয়া যাবে না। তাকে অবশ্যই অবিবাহিত এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ছাত্র হতে হবে।
এদিকে নতুন কমিটির একাধিক নেতা বলেন, অর্থের বিনিময়ে অছাত্র, বিবাহিত এবং অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কমিটিতে নেওয়া হয়েছে। বিতর্কিত কমিটি নিয়ে ক্যাম্পাসে তীব্র উত্তেজনা চলছে। অভিযোগ অস্বীকার করে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি সাফিউর রহমান স্বাধীন বলেন, অবিবাহিত, কারমাইকেল কলেজের নিয়মিত ছাত্র এমন প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে। যারা তথ্য গোপন করে পদ নিয়েছেন তদন্তে প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত বুধবার কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের ১৪৮ সদস্যের নতুন কমিটি অনুমোদন দেন মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কমিটি পাওয়ার পর সদস্যদের বিষয়ে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ছিনতাইয়ের অভিযোগে চার বছর আগে জেলা ও কারমাইকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বহিষ্কৃত জাভেদ আহমেদকে ফের নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে। কারমাইকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান কানন বলেন, জাভেদ কারমাইকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাকালে ২০১৪ সালের ১৩ মে দুপুরে ক্যাম্পাসে একাধিক শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন ছিনতাই করেন। এ অপরাধে ১৪ মে তাকে কারমাইকেল কলেজ শাখা থেকে এবং ১৭ মে জেলা কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়। একই বছরের ৬ জুন কাউনিয়া থানা পুলিশ চোরাই মোটরসাইকেলসহ জাভেদকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে মামলাও করে পুলিশ। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন আছে।
রংপুরের হারাগাছ ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী মেহেক-ই-মনছুর মিমকে করা হয়েছে সহসভাপতি। হারাগাছ ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক মাজেদ আলী বাবুল বলেন, মেহেক-ই-মনছুর মিম আমাদের কলেজেরই নিয়মিত ছাত্রী। এ বছরই সে এ কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে। গাইবান্ধা সরকারি কলেজের ছাত্র বাদল আহমেদকে সহসভাপতি এবং রংপুর সরকারি কলেজের ডিগ্রি পরীক্ষার্থী পঙ্কজ কুমার কাক্কুকে করা হয়ে প্রচার সম্পাদক। লালমনিরহাটের কাকিনা কলেজের ছাত্র পাভেল রহমানকে করা হয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদক। সাধারণ সম্পাদক জাভেদ আহমেদের চাচাতো ভাই বিবাহিত ও অছাত্র আরিফুল ইসলাম সোহেলকে করা হয়েছে সহসভাপতি। সদস্য পদ পেয়েছেন আল আমীন হোসাইন। তিনি লেখাপড়া করেন পাবনা সরকারি কলেজে। নগরীর চকবাজারে একটি দোকানের ম্যানেজার আহসান হাবীব লালন পেয়েছেন উপ-কৃষি সম্পাদকের পদ। আয়েশা সিদ্দিকা মুক্তাকে করা হয়েছে সহসভাপতি। তার স্বামী শাকির হোসেন সাদ্দামকে দেওয়া হয়েছে যুগ্ম সম্পাদকের পদ। তিন বছর আগেই ছাত্রত্ব শেষ হওয়া মনিরুজ্জামান তালুকদার মনিরকে সহসভাপতি করা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন