একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত হার্ডলাইনেই থাকবে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বিএনপিসহ সরকার বিরোধী দলগুলোকে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ঘোলাটে করার সুযোগ দিবে না ক্ষমতাসীন দল।
দেশের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার। বিএনপির আন্দোলনের হুমকি আমলেও নেবে না। আবার খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে কর্মসূচি পালনের নামে দেশের স্বাভাবিক পরিবেশের বিঘ্ন সৃষ্টিও করতে দেবে না। বিরোধীদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রেখেই স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে দলকে বিজয়ী করতেই মাঠে থাকবে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতারা। নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করাই একমাত্র লক্ষ্য তাদের। অন্য কিছু নয়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি এলো কিনা তা নিয়ে কোন ভাবনা নেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। এ নিয়ে জাতীয় আন্তর্জাতিক সমালোচনা যদি বিএনপির পক্ষেও যায় তাতেও ক্ষতি নেই আওয়ামী লীগের। সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের একাধিক সিনিয়র নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপি নেতাদের বিদেশ সফর সম্পর্কে তিনি বলেন, জনগণের প্রতি তাদের আস্থা নেই। তাই তারা এখন বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছেন। কখনও ব্যাংকক, কখনও দুবাই, কখনও লন্ডন। কোথায় কে কী করছেন সরকারের কাছে সব খবর আছে। দেশের মানুষ এখন নির্বাচনী আমেজে আছে, মুডে আছে।
তিনি বলেন, আগামী ২৬ জুন গাজীপুরে নির্বাচন। ৩০ জুলাই অন্য তিনটি সিটিতে নির্বাচন। এরপরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এগুলো হলো সেমিফাইনাল। বছর শেষে হবে ফাইনাল। নির্বাচনকে ঘিরে তারা ষড়যন্ত্র করছে। তারা মনে করছে, আমরা জানি না। সব খবরই জানা আছে। এবার কোনো ষড়যন্ত্র করে কোনো কাজ হবে না। সাংবিধানিক ধারাকে রক্ষা করতে হলে নির্বাচন করতে হবে। সে নির্বাচনে অংশ নেবে, কি নেবে না- সেটা বিএনপির ব্যাপার। এ বিষয়ে আমাদের কিছুই বলার নেই।
দলটির একাধিক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূলের নেতাদের একই ভাবনা আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে নিজেদের মধ্যে স্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলাই এখন মূল কাজ। এবং সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সংগঠনকে আরও চাঙ্গা রাখতে দলের হাইকমান্ডের দিকনির্দেশনা নিয়েই কাজ করছেন নীতিনির্ধারকরা।
দলের একাধিক সূত্র জানায়, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন। নেতারা বলেন, দলটির তৃনমূলের রাজনীতি এখন চাঙ্গা। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করে হ্যাট্রিক সরকার গঠনের জন্য নানা পরিকল্পনা নিয়ে দলটির নীতিনির্ধারকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। দেশের উন্নয়নে ও মানুষের কল্যাণে আগামী নির্বাচনের ইশতেহার নিয়েও এগুচ্ছেন দলটির নির্বাচনী অভিজ্ঞরা। নতুন নতুন স্বপ্ন দেখানো ও তা বাস্তবায়নের রোডম্যাপ নিয়েও কাজ করছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাএ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আন্দোলনের অলীক স্বপ্ন না দেখে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন। আন্দোলনের খেলা না খেলে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হন।
দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের শরীকদলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে কাজ করছেন দলের হাইকমান্ড। চলতি বছরের বাজেট সেশন শেষ হওয়ার পরই সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ বিএনপির আন্দোলন নিয়ে ভাবছে না। তারা সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন ও বিএনপির দুর্নীতি জনগণের সামনে তুলে ধরে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি সিলেটে নির্বাচনী সমাবেশ শুরু করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই ধারাবাহিকতায় বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা এবং গত ৭ মার্চ ঢাকায় সমাবেশ করে।
সূত্র জানায়, যেসব জেলায় দলের হাইকমান্ড যান নি সেসব জেলায় আগামী দিনগুলোতে যেতে পারেন।
দলীয় সূত্র জানায়, আগামী ২১ জুলাই বিকালে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে এক গণসংবর্ধনা দেওয়া হবে। এ গণসংবর্ধনা থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিতে পারেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
এছাড়াও আগামী ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলটির গুরুত্বপূর্ণ একটি সভা অনুষ্টিত হবে। এ সভা থেকেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ দলটির সাংগঠনিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানায় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করতে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা ১৫টি টিমে ভাগ হয়ে দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফর করেছেন। ওই সফরের মাধ্যমে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন ও মিটমাট করার কাজ করছেন। যা অব্যহত আছে।
জানা গেছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সরকারের টানা প্রায় ১০ বছরের উন্নয়ন জনগণের সামনে তুলে ধরছেন। এবং সামনের দিনগুলোতে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে। সাংগঠনিক নেতারা জানান জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জোর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত ১ মার্চ থেকে কেন্দ্রভিত্তিক পোলিং এজেন্ট নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের কাজও প্রায় সমাপ্ত করে এনেছেন দলটি।
কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির আন্দোলনের হুমকি-ধামকি নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াকে আদালত সাজা দিয়েছেন। এখানে সরকারের কিছু করার নেই। দলের নেতারা তার মুক্তির জন্য কাজ করছেন। তারা এ মুক্তির জন্য আন্দোলনও করতে পারেন। কিন্তু সেই আন্দোলন যদি ২০১৩ ও ২০১৪ সালের মতো করার কথা ভাবেন, তার সুযোগ নেই, সামর্থ্যও নেই। ২০১৪ সালের মতো জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করলে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, শেখ হাসিনার পতন না ঘটিয়ে তিনি ঘরে ফিরবেন না। কিন্তু খালেদা জিয়া ঘরে ফিরেছিলেন আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে। আর শেখ হাসিনা বিশ্বদরবারের সম্মান নিয়ে এখন বাংলাদেশ পরিচালনা করছেন।
ঈদের পরে বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলন সম্পর্কে তোফায়েল আহমেদ বলেন, সরকারকে সরানোর মতো আন্দোলনের সক্ষমতা বিএনপির নেই। আন্দোলন করে ২০১৩, ২০১৪ সালে যেমন ব্যর্থ হয়েছেন, ২০১৮ সালেও ব্যর্থ হবেন।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ আছে। ৯০ দিন আগে যেকোনো দিন নির্বাচন হবে। ক্ষমতাসীন দল রাষ্ট্র পরিচালনা করবে সে সময়। আর বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে তত্বাবধায়ক সরকার বা সহায়ক সরকার বলে বাংলাদেশে আর কিছু হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত গঠিত কমিটির একাধিক সুত্র জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহনের জন্য দলটির বিভিন্ন কমিটির নেতা-কর্মিরা কাজ করছেন। বিএনপির আন্দোলনের হুমকি যেন নির্বাচনী প্রস্তুতির কোন বাধা না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই এগিয়ে যাবে দলটির সার্বিক কার্যক্রম। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকারী দল ও সরকারের প্রশাসন একযোগে কাজ করবে। সরকারের নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের গতিও একসঙ্গে চলবে বলে মনে করেন দলটির শীর্ষপর্যায়ের নেতারা।
তারা মনে করেন, দেশের আইনশৃংখলার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার দায়িত্ব প্রশাসনের। আগামী দিনগুলোতে যে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করার প্রস্তুতি রয়েছে আওয়ামী লীগের। কাজেই দেশের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে সরকারী দল ও সরকার নির্বাচন পর্যন্ত হার্ড লাইনেই থাকবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন